আমাদের প্রতিদিন ব্যবহার করা অনেক জিনিসপত্রই শরীরের ক্ষতি করে। এর মধ্যে অন্যতম মাইক্রোপ্লাস্টিক। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে এই ক্ষতিকর উপাদান। প্লাস্টিকের বোতল, ব্যাগ, মাছের জাল—ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে তৈরি হচ্ছে সেকেন্ডারি মাইক্রোপ্লাস্টিক। ফলে এসব বহুদিন ধরে জমছে আমাদের পানি ও মাটিতে। এমনকি কৃত্রিম কাপড় (পলিয়েস্টার ও নাইলন) ধোয়ার পরও পানিতে মিশে যাচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক।
প্রাইমারি মাইক্রোপ্লাস্টিক
ফেসওয়াশ, টুথপেস্ট বা অন্যান্য পরিষ্কারকে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বিড, গ্লিটার, প্লাস্টিক তৈরির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপাদান হলো মাইক্রোপ্লাস্টিক। পরিবেশ থেকে এসব বিভিন্ন প্রাণীর (মুরগি, মাছ ইত্যাদি) খাবারে পরিণত হয়। সেই প্রাণী যখন আমরা খাই, তখন আমাদের দেহেও প্রবেশ করে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এভাবেই বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এভাবেই পানি, মাটি, বাতাস—সব জায়গা থেকেই বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ আজকাল আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে, যা হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করছে।
নারীদের ঝুঁকি কী
মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে বংশবিস্তার, হরমোনের ভারসাম্য, প্লাসেনটা ও ভ্রূণের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় খারাপ প্রভাব পড়ছে। এসব অ্যান্ডোক্রাইন ডিসরাপশন ফ্যাক্টরের (রাসায়নিক উপাদানের কারণে হরমোনের স্বাভাবিক কাজে বাধা) প্রভাবে ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। নারীর ডিম্বাণুর সংখ্যা কমে যায়, ডিম্বাণুর গুণগত মান কমে যায়, ফাইব্রোসিস (টিস্যু অতিরিক্ত শক্ত হয়ে যাওয়া) হয়। আর এভাবে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ে।
মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাবে নারীর মাসিক অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে, পলিসিসটিক ওভারিয়ান সিনড্রোম হতে পারে, শরীরে প্রদাহ তৈরি করতে পারে। হরমোনের ব্যাঘাত ঘটলে জরায়ুর সবচেয়ে ভেতরের স্তর এন্ডোমেটরিয়ামে এন্ডোমেটরিওসিস (নারীদের একধরনের জটিল রোগ) হতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীর জটিলতা
যেহেতু মাইক্রোপ্লাস্টিক নারীদের প্লাসেন্টা বা ফুলে পৌঁছাতে পারে, তাই ভ্রূণের ওপরও এর প্রভাব পড়ে। এ কারণে সময়ের আগেই সন্তান প্রসব, শিশুর ওজন কম হওয়ার মতো জটিলতা দেখা দেয়।
মাইক্রোপ্লাস্টিক ছাড়াও কিছু জিনিস হরমোনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এর মধ্যে আছে সুগন্ধি, লোশন, হেয়ার স্প্রে, নেইল পলিশ, কীটনাশক; শিশুদের জন্য ব্যবহৃত পণ্য (সুগন্ধযুক্ত বেবি ওয়াইপ, লোশন, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার); প্লাস্টিকের তৈরি খাবার রাখার উপকরণ; শিল্পকারখানায় তৈরি খাবার, পানীয়, প্যাকেট, খেলনা, কার্পেট ইত্যাদি।
ছোটবেলা থেকে এসব উপকরণ ব্যবহারের কারণে শিশুদের হরমোন ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আর তাতে স্বাভাবিক সময়ের আগেই শুরু হতে পারে বয়ঃসন্ধিকাল। এ ছাড়া হাঁপানি, স্নায়বিক সমস্যা, থাইরয়েড সমস্যা ও ক্যানসারের ঝুঁকিতেও পড়ে।
সুরক্ষা পেতে চাইলে
প্লাস্টিকের বদলে কাচের পাত্র ব্যবহার করুন
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমান, সম্ভব হলে বন্ধ করুন।
খাবার রাখুন কাচের উপকরণ বা স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে।
কৌটাজাত ও প্যাকেটের খাবার কম খান, না খেতে পারলে সবচেয়ে ভালো।
খাবার কাটাকুটির জন্য কাঠের বোর্ড ব্যবহার করুন।
ননস্টিক প্যান ব্যবহার বন্ধ করুন।
পানি রাখুন কাচের জগ বা বোতলে।
পানি শোধনে মাইক্রোফিল্টার ব্যবহার করুন। পানি ফুটিয়ে ফিল্টার করলেও ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে মাইক্রোপ্লাস্টিক মুক্ত পানি পাওয়া যায়।
বাইরের খাবার কম খান, সম্ভব হলে বাদ দিন।
প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার এড়াতে অর্গানিক খাবার খান।
ফল ও সবজি ধোয়ার সময় বেকিং সোডা ব্যবহার করুন।
সিনথেটিক কাপড় ব্যবহার না করে সুতি বা প্রাকৃতিক তন্তুর কাপড় পরুন।
হারবাল প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করুন। হারবাল পদ্ধতিতে যে কীটনাশক ব্যবহার করা যায় (হলুদগুঁড়া, নিমের গুঁড়ো) সেসব ব্যবহার করুন।
জীবনযাপনে পরিবেশবান্ধব উপকরণগুলোয় গুরুত্ব দিন।
Publisher & Editor