বাজার থেকে দারচিনি কিনতে গেলে দেখা যায়, কোনোটি পাতলা, হালকা গন্ধের, আবার কোনোটি খুব মোটা ছালের, গন্ধও উগ্র। পাতলা ও হালকা গন্ধ হলে অনেকেই ভাবেন তা নকল। আসলে তা নয়।
কোনটি আসল আর কোনটি নকল, তা জানতে দারচিনি চেনা প্রয়োজন।
বাজারে সাধারণত দুই রকম দারচিনিই বেশি দেখা যায়। রং, স্বাস্থ্যগুণে তারা আলাদা। এগুলো হচ্ছে ক্যাসিয়া ও সিলোন।
সিলোন
সিলোনের দারচিনির পুষ্টিগুণ বেশি বলে মনে করেন অনেকেই।
শুধু স্বাদ-গন্ধের জন্যই নয়, পুষ্টিগুণেও অনেক এগিয়ে। সিলোন দারচিনিকে ‘ভেরাম’ নামেও ডাকা হয়। শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ ভারতে এই দারচিনির চাষ হয়।
সিলোনের গন্ধ হালকা মিষ্টি, এর ছাল পাতলা হয়।
এতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জৈব যৌগ ইউজেনল ও সিনামালডিহাইড থাকে, যা গন্ধ ও স্বাদের জন্য দায়ী। এই দুই উপাদান শরীরের জন্যও ভালো। সিলোন দারচিনিকেই খাঁটি বলা হয়। এর দামও বেশি এবং এই দারচিনি খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে, শরীরে প্রদাহ কমায়, মানসিক স্বাস্থ্যও ভাল রাখে।
সিলোনে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে, যা জীবাণু প্রতিরোধ করতে পারে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ক্যাসিয়া
আরো এক ধরনের দারচিনি পাওয়া যায়, যার ছাল খুব মোটা এবং গন্ধও অতি তীব্র। এর নাম ক্যাসিয়া। উগ্র গন্ধের জন্য এই দারচিনিকে খাঁটি বলে মনে হলেও আদতে এর পুষ্টিগুণই নেই। এই দারচিনি তৈরি হয় দক্ষিণ চিনে। আসল দারচিনির কোনো বৈশিষ্ট্যই এতে নেই।
দোকানে এই দারচিনির দাম কম এবং বেশিরভাগ মানুষ এটিই কিনে নিয়ে যান। এই দারচিনি স্বাস্থ্যকর ভেবে অত্যধিক মাত্রায় খেতে শুরু করলে লিভারের স্বাস্থ্য বিগড়ে যাবে কিছু দিনেই। এমন দারচিনির গুঁড়াও বাজারে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়, যাতে ভেজাল মেশানো থাকে। তাই সতর্ক থাকতেই হবে।
আসল ও নকলের পার্থক্য করবেন কিভাবে
রঙের পরীক্ষা : খাঁটি দারচিনির রং হালকা খয়েরি বা হলদেটে খয়েরি। নকলের রং খুব গাঢ় লালচে খয়েরি। দেখতে যেমন : খাঁটি দারচিনি খুব পাতলা, অনেকগুলো স্তরে মোড়ানো থাকে। সামান্য চাপ দিলেই ভেঙে যাবে। নকল দারচিনি খুব মোটা, সাধারণত একটি করেই ছাল থাকে যা খুব পুরু হয়। ভাঙতে যথেষ্ট বলপ্রয়োগ করতে হবে।
গন্ধ : সিলন দারচিনির উগ্র গন্ধ নেই। খুবই হালকা গন্ধ। নকল দারচিনির গন্ধ খুব চড়া, ঝাঁঝালো।
স্বাদ : আসলের স্বাদ হালকা মিষ্টি, তেতো লাগবে না। তবে নকলের স্বাদ খুব তেতো, কষাটে।
দারচিনির গুঁড়া নকল কি না, যেভাবে বুঝবেন
এক কাপ গরম পানিতে দারচিনির গুঁড়া মিশিয়ে দিন। যদি দেখেন, তা খুব ধীরে ধীরে মিশছে, হালকা রং ছড়াচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে খাঁটি। যদি দেখেন, গুঁড়া মিশে না গিয়ে ভেসে থাকছে, পানির রং গাঢ় খয়েরি হয়ে উঠছে, তাহলে বুঝতে হবে সেটি ভেজাল দারচিনি।
Publisher & Editor