বাংলাদেশের সুইমিংয়ে নতুন ইভেন্ট যোগ হয়েছে। আন্তর্জাতিক সুইমিং ফেডারেশন থেকে স্প্রিং বোর্ড ডাইভিং ইভেন্টটি আদায় করে এনেছে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশন। প্রথম বার এমন ইভেন্টে বড়রা এগিয়ে আসার কথা। সেখানে নতুন ইভেন্টেটিতে নজর কেড়েছে একেবারে ছোট ছোট সাঁতারুরা। কারো বয়স ১২, ১১, না হয় ১০। প্রথম স্বর্ণ, রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ জয় করে তারাও হয়ে গেলেন ইতিহাস। নন্দিনী পাহান, সাদিয়া এবং লামিয়া-এই দিন খুদে সাঁতারু প্রথম বার জাতীয় সাঁতারে নাম লিখিয়ে হয়ে উঠল নতুন ইতিহাস। তারপরও মুখে হাসি নেই। এখনো লাজুক চেহারা। হাসতে বললে লজ্জায় পায়। শরীর একেবারে ছিপিছিপে।
তিন জনই দরিদ্র ঘরের সন্তান। ডাইভিং তো দূরের কথা, তারা নাকি কখনো জাতীয় সুইমিংপুলেই আসেননি এর আগে। এবারই প্রথম ডাইভিংয়ের সঙ্গে পরিচয়। অন্য কোনো ইভেন্টও খেলেননি কখনো। বিকেএসপির নন্দিনী পাহান স্বর্ণ জয় করেছেন। নন্দিনী চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের মেয়ে। বাবা কৃষিকাজ করেন।
থ্রি মিটার স্প্রিং বোর্ড ইভেন্টে স্বর্ণ জয় করছেন নন্দিনী পাহান। পেয়েছেন ২ হাজার টাকা, জীবনে প্রথম অর্থ আয় করেছেন নন্দিনী। তার আনন্দের শেষ নেই। টাকা নিয়ে মা-বাবাকে দেবেন, খুশির খবরটা আগেই জানিয়েছেন ১৩ বছর বয়সের স্প্রিং বোর্ড ডাইভার নন্দিনী ওয়ান মিটার ও থ্রি মিটার দুটোতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। স্প্রিং বোর্ড ডাইভিংয়ে ভিন্ন রেকর্ড গড়েছেন দুই বোন। একই দিনে তারাও ইতিহাস লিখেছেন।
১২ বছর বয়সের লামিয়া এবং ১০ বছর বয়সের সাদিয়া-দুই বোন। লামিয়া-সাদিয়ার বাবা একজন হোটেলের কর্মী। রুটি বানায়। স্বর্ণজয়ী সাঁতারু রোমানা আক্তারের বোনের মেয়ে লামিয়া ও সাদিয়া। দুজনই প্রথম বার এসে বাজিমাত করেছেন।
কিশোরগঞ্জের নিকলী হচ্ছে সাঁতারুপ্রসবিনী অঞ্চল। দেশের অনেক জাতীয় সাঁতারু এসেছেন এ অঞ্চল হতে। জাতীয় সাঁতারু রোমানা আক্তার তাদেরই একজন। লামিয়া নাকি তার জীবনে ডাইভিং ইভেন্ট দেখেনি। লামিয়া বললেন, ‘আর্মি আমাকে এখানে এনেছে। শিখিয়েছে। ডাইভিং কী জানতাম না। ইতিহাস হয়েছে শুনেছি। ভালো লেগেছে। আমি একটাতে তৃতীয়, একটাতে দ্বিতীয় হয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছি।’ লামিয়া বলল, ‘এই টাকা দিয়ে ফল কিনব। খাবো যেন এনার্জি পাওয়া যায়। শক্তি হয়।’
লামিয়ার ছোট বোন ১০ বছর বয়সের সাদিয়া ডাইভিংয়ের অনুশীলন করছেন। ওপর থেকে পুলে ঝাঁপ দিচ্ছেন। আবার নিচ থেকে ওপরে যাচ্ছেন। ডাক দিলে কোচের ভয়ে এড়িয়ে যান। কোচের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে এসেছে ১ মিনিটের জন্য। সাদিয়াও টাকা পেয়েছেন, বাবা-মাকে দেবেন জানিয়ে দৌড়ে চলে গেলেন ডাইভিং স্প্রিংয়ের ওপরে। সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীন এবার স্বর্ণজয়ী ও জাতীয় রেকর্ডধারীদেরকে অর্থ পুরস্কার দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে দরিদ্র ঘরের সন্তানরা ভালো খেলে সামান্য হলেও টাকার মুখ দেখছে।
Publisher & Editor