সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

বর্ষায় ঘরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করবেন যেভাবে

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ২৮ জুলাই ২০২৫ |

বৃষ্টির দিনে অন্দরে একধরনের ভ্যাপসা ভাব আসে। তাই এ সময় ঘরের চাই বিশেষ যত্ন। অন্দরসজ্জাবিদেরা বলেন, এ সময় ঘরে যাতে বাইরের বাতাস সরাসরি ঢুকতে পারে, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। তবে বৃষ্টি এলে জানালা লাগিয়ে দেওয়া ভালো। এতে ঘরের পর্দা ভিজে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচবে।

আবার বৃষ্টি শেষ হলে জানালা খুলে দিতে হবে। এতে বৃষ্টির কারণে ঘরে যে সোঁদা গন্ধ হয়, তা দূর হবে। এ সময় স্যাঁতসেঁতে ভাব এড়াতে কোনো ধরনের ভেজা জিনিস ঘরে রাখা যাবে না।

বেশির ভাগ বাড়িতে বৃষ্টির দিনে ঘরের দেয়ালে ড্যাম্প পড়া একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ঘরের দেয়াল অনেক সময় স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ে। এতে ঘরের পুরো সৌন্দর্য মাটি হয়ে যায়।

বর্ষাকালে তাই দেয়ালের জন্য প্রয়োজন বিশেষ পরিচর্যা। স্থপতি লতিফা সুলতানা বলেন, প্রথমত যেসব বাসাবাড়িতে আলো-বাতাস কম ঢোকে, সেসব বাড়ির দেয়ালগুলো দ্রুত স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। এ ছাড়া ঘরের দেয়ালের পেছনের দিকে যদি পানির উৎস থাকে, সেটাও দেয়াল স্যাঁতসেঁতে হওয়ার একটি কারণ। এ ক্ষেত্রে বর্ষার সময় কীভাবে দেয়ালের স্যাঁতসেঁতে ভাব রোধ করা যাবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দিলেন এই স্থপতি।

যদি ঘরের দেয়াল আগে থেকেই ড্যাম্প থাকে তাহলে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই কালার টোনিং করিয়ে নিন। এদিকে ঘরের দেয়ালের স্যাঁতসেঁতে ভাব প্রতিরোধে পেছনের দিকে পানির উৎস আছে, এমন দেয়ালের পুরোটাই টাইলস করা হলে সবচেয়ে ভালো হয়। বাজেট কম থাকলে দেয়ালে প্লাস্টিক উড লাগিয়ে নিতে পারেন।

সাধারণত যেসব ছাদে বাগান আছে সেসব জায়গায় কোনো কারণে পানি জমলে ছাদের সরাসরি নিচের ফ্লোর এবং শুধু একতলা ও দোতলার দেয়ালগুলো স্যাঁতসেঁতে হয়। মাঝখানের ফ্ল্যাটগুলোর দেয়াল আবার স্বাভাবিক থাকে। এর কারণ হলো পানি সব সময় নিচের দিকে নেমে আসে। বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে পানি দেয়ালের ভেতর দিয়ে এসে নিচতলা বা দোতলার দেয়ালগুলো স্যাঁতসেঁতে করে তোলে।

এ জন্য যাঁদের বাড়ির ছাদে স্থায়ী বাগান আছে, তাঁরা প্রথম বা দ্বিতীয় তলায় ড্যাম্প প্রুফিং রাসায়নিক লাগাতে পারেন। এটি বাজারে এখন সহজলভ্য।

বর্ষাকালে অনেকের বাসার কাঠের আসবাবে ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দেয়। এ জন্য কাঠে পচন দেখা দেয়। অনেক সময় আবার আর্দ্রতা শোষণ করে কাঠগুলো ফুলে ওঠে। এ সময় কাঠের আসবাব দেয়াল থেকে ছয় ইঞ্চি দূরে রাখার চেষ্টা করুন।

এই আবহাওয়ায় আসবাবপত্রে ঘুণ ধরতে দেখা যায়। নিমপাতা, নিমের তেল, কর্পূর, স্পিরিট একসঙ্গে মিশিয়ে একটা স্প্রে বানিয়ে বোতলে ভরে রাখুন। আসবাবে ঘুণ ধরলেই স্প্রে করে দিন।

বর্ষাকালে বৃষ্টি পড়লেই মেঝেতে ভেজা ভেজা ভাব থাকে। ভেজা কাপড় দিয়ে তো মেঝে পরিষ্কার করবেনই, তবে এ সময় মেঝে স্যাঁতসেঁতে হলেই শুকনা কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন। কারণ, ভেজা মেঝে জীবাণু আর ছত্রাক বাড়ায়।

নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে ওয়াশরুম পরিষ্কার করুন। বৃষ্টির দিনে একটু পুরোনো ওয়াশরুমে একধরনের স্যাঁতসেঁতে বাজে গন্ধ হয়। এই গন্ধ এড়াতে সুগন্ধি এয়ার স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। যদি সম্ভব হয় তাহলে স্নানঘর শুষ্ক রাখতে এগজস্ট ফ্যানের ব্যবহার করুন। ট্যাপ ও ঝরনা ব্যবহারের পর শুকনা কাপড় দিয়ে মুছে রাখুন। বর্ষাকালে এসব জায়গায় জীবাণু জন্মায়। বাথরুম সপ্তাহে একবার বেকিং পাউডার ও ভিনেগার দিয়ে পরিষ্কার করুন, যাতে জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া তৈরি না হয়।

বর্ষাকালে বিভিন্ন ঘরের দোরগোড়ায় যে পাপোশের ব্যবহার করছেন তা যেন শুকনা থাকে, সেদিকে বিশেষ খেয়াল করুন। একাধিক পাপোশ রাখুন, যাতে একটি ভিজে গেলে তার বদলে অন্যটির ব্যবহার করতে পারেন। ভেজা পাপোশ থেকেও অনেক সময় ঘরে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

বর্ষাকালে পোকামাকড় ও মাছি তাড়ানোর জন্য খাবার তৈরি করার পর রান্নাঘরের কাউন্টার, চিমনি ও খাবারের টেবিল লবণ-ভিনেগার দিয়ে পরিষ্কার করুন। আগেই বলেছি, এ সময় বাড়িতে তাজা বাতাস ঢুকতে দেওয়াটা খুব জরুরি। সব সময় দরজা-জানালা আটকে না রেখে খুলে রাখুন, যাতে তাজা বাতাস সঞ্চালিত হয় এবং আপনার বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ দূরে থাকে।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor