সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

শিশুর ডাউন সিনড্রোম শনাক্তের উপায়, যত্ন ও চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ২৮ জুলাই ২০২৫ |

ডাউন সিনড্রোম বা ‘ট্রাইসোমি ২১’ একটি বংশানুগতিক সমস্যা। শরীরে ক্রোমোজোমের বিশেষ ত্রুটির জন্য এটি হয়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিটি দেহকোষে ২১তম ক্রোমোজোমে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোমের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। মাঝারি বা গুরুতর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুদের তিন ভাগের এক ভাগ ও জন্মগত ব্যাধির প্রায় ৮ শতাংশের কারণ ডাউন সিনড্রোম। ব্রিটিশ চিকিৎসক জন ল্যাংডন ডাউন ১৮৬৬ সালে এই রোগ প্রথম শনাক্ত করেন। এ কারণেই রোগটির এমন নাম।

গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার; অর্থাৎ প্রতিদিন ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত প্রায় ১৫টি শিশু জন্ম নেয়। তবে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে গর্ভপাত ঘটে।

চেনার উপায়

মাথার আকৃতি ছোট ও পেছনের অংশ চ্যাপটা। মুখমণ্ডল ও নাক চাপা।

চোখের ভুরু ধনুকের মতো ওপরে টানা ও চোখের ভেতরে দাগ।

কান ও মুখগহ্বর ছোট। জিবের আকৃতি বড় ও কান স্বাভাবিকের চেয়ে একটু নিচুতে।

হাত–পা ছোট। পুরো হাতের তালুতে একটিমাত্র স্পষ্ট রেখা থাকে।

পায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় আঙুলের মাঝখানে বেশি ফাঁক থাকে।

মাংসপেশি নরম ও তুলতুলে হয়।

জটিলতা

হৃদ্‌যন্ত্রের ত্রুটি, শ্রবণপ্রতিবন্ধী, পাকস্থলীর সমস্যা, সিলিয়াক ডিজিজ ও চোখে ছানি হয়ে থাকে। হরমোনজনিত সমস্যা, যেমন থাইরয়েড গ্রন্থি অকেজো হয়। বিলম্বে শিশুর বিকাশ, যেমন দেরিতে বসা–হাঁটা, কথা বলা, খর্বাকৃতি প্রভৃতি সমস্যা। মৃদু থেকে গুরুতর মাত্রার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়।

শনাক্তের উপায় ও চিকিৎসা

ডাউন সিনড্রোম শিশু জন্মের আগে ও জন্মের পর দুভাবে শনাক্ত করা যায়। গর্ভাবস্থায় মায়ের পেট থেকে কোষ নিয়ে, রক্ত পরীক্ষা, আলট্রাসাউন্ড প্রভৃতি স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যমে জানা যায় গর্ভস্থ শিশুটি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত কি না। জন্মের পর কেরিওটাইপ, সিবিসি ও থাইরয়েড হরমোন–ঘাটতি, শ্রবণশক্তি, হার্টের জন্মত্রুটি নির্ণয়ের মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত করা যায়।

ডাউন সিনড্রোম সম্পূর্ণ নিরাময় না হলেও ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ হয়। নিয়মিত ওজন ও উচ্চতা মেপে দৈহিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।

চোখের সমস্যা, ডায়াবেটিস, সিলিয়্যাক ডিজিজের মতো সমস্যায় নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। স্পিচথেরাপি, অকুপেশনালথেরাপি ও বিদ্যালয়ে বিশেষ শিখনপদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। হার্ট ও থাইরয়েডের মতো সমস্যা থাকলে যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে।

বয়স ৩৫ বছরের বেশি এমন যেসব নারী মা হতে চান বা যে মায়ের এক সন্তান ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত, পরবর্তী সন্তান গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যদি অন্য কোনো জটিল রোগে না ভোগেন, তাহলে আয়ুষ্কাল প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাঁদের অনেকে বিয়ে করে স্বাভাবিক পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে উন্নত জীবন যাপন করতে পারেন।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor