শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

মন খারাপ নাকি বিষণ্নতা— যেভাবে বুঝবেন

প্রকাশিত: ০৭:৪৮, ২৪ জুলাই ২০২৫ |

আমরা জীবনের নানা সময়েই নানা কারণে মন খারাপের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাই। ছোটখাটো হতাশা, দুঃখ, ব্যর্থতা বা প্রিয়জনের সঙ্গে মনোমালিন্য—এসব আমাদের মানসিক অবস্থাকে সাময়িকভাবে প্রভাবিত করে। তবে মন খারাপ হওয়া আর বিষণ্নতা এক বিষয় নয়। অনেকেই ভুল করে এই দুই অনুভূতির পার্থক্য না জেনে বিষণ্নতাকে হালকাভাবে নেন কিংবা সাধারণ মন খারাপকেই বড় মানসিক সমস্যা মনে করে আতঙ্কিত হন।

আসলে বিষণ্নতা হলো একটি জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা কেবল মন খারাপের চেয়ে অনেক বেশি গভীর ও সুদূরপ্রসারী। এটি একজন মানুষের চিন্তা, অনুভূতি, আচরণ এমনকি দৈনন্দিন কাজকর্মের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তি তার পছন্দের কাজগুলো থেকেও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। নিজেকে একা ও নিষ্প্রাণ মনে করেন, কখনো কখনো আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় আসতে পারে।

এই পার্থক্যটি বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মন খারাপের অনুভূতি সাধারণত সময়ের সঙ্গে কেটে যায়, কিন্তু বিষণ্নতা সময়ের সঙ্গে আরও গভীরতর হতে পারে, যদি তা উপযুক্ত চিকিৎসা না দেওয়া হয়। এই লেখায় মন খারাপ এবং বিষণ্নতার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য, বিষণ্নতার লক্ষণ, কারণ ও এর থেকে মুক্তির পথ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে এবং প্রিয়জনের পাশে দাঁড়াতে এই জ্ঞান ও সচেতনতা আমাদের সবারই থাকা দরকার।

বিষণ্নতা একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা।

এতে আক্রান্ত মানুষ প্রায়ই অবসাদে ভোগেন। অনেক সময় তারা নিজের প্রিয় কাজগুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অনেকের মধ্যে আত্মহত্যাপ্রবণতা ও মৃত্যুচিন্তা দেখা দেয়। 
বিষণ্নতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

বিষণ্নতা ও মন খারাপের পার্থক্য নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন বেদা রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড ওয়েলনেসের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আশি তোমার। তিনি বলেন, ‘বিষণ্নতা ও মন খারাপ দুটি আলাদা বিষয়।

বিষণ্নতার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে মনোরোগের ওষুধ ও মানসিক থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। মন খারাপ লাগা বিষণ্নতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে এটি সবসময় বিষণ্নতা পরিণত হয় না।’
মন খারাপ থেকে হতে পারে বিষণ্নতা

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মন খারাপ থেকে বিষণ্নতা হতে পারে। কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু, প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া বা চাকরি হারানো কোনো আনন্দের বিষয় নয়। জীবনে এ ধরনের ঘটনা খুব স্বাভাবিক। এসব ক্ষেত্রে গভীর দুঃখ পাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে অনেক সময় এই দুঃখ বিষণ্ণতায় রূপ নিতে পারে। সময়ের সঙ্গে অনুভূতি বা মেজাজ ভাল না হলে এবং প্রতিদিনের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটলে আপনি বিষণ্ণতায় ভুগছেন বলা যেতে পারে। 

বিষণ্নতার সঙ্গে বোঝাপড়া

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ তোমার বলেন, ‘বিষণ্নতাকে বুঝতে হলে এর উপসর্গ বোঝা জরুরি। কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন এবং দিনের বেশিরভাগ এসব উপসর্গ অনুভব করা যায়। বিষণ্নতায় আক্রান্তের মানদণ্ড পূরণের জন্য কমপক্ষে কয়েকটি লক্ষণ বা উপসর্গ মেলানো উচিত।’ 

তিনি বলেন, ‘উপসর্গগুলো সামাজিক পেশাগত ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা তৈরি করে। এটা মনে রাখতে হবে যে, বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা দিলে সাধারণ চিকিৎসার মতো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত নয়।’

বিষণ্নতার গুরুত্বপূর্ণ দিক  

কারও মন খারাপ থাকলে অন্যান্য কাজগুলোতে আনন্দ পাওয়া সম্ভব। তবে বিষণ্ণতায় ভুগলে আনন্দদায়ক কাজগুলো উপভোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। মন খারাপের তুলনায় বিষণ্নতা আমাদের ভালোভাবে জীবনযাপনে গুরুতর সমস্যা তৈরি করে। শুধু মন খারাপ হওয়া মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে সামান্যই প্রভাব ফেলে।  

কেউ বিষণ্নতায় ভুগছে কি না বোঝার জন্য অন্তত টানা দুই সপ্তাহ তার মধ্যে উপসর্গগুলো থাকতে হবে।

মন খারাপ হলে এটি ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তবে যদি মন খারাপ কাটানোর সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয় এবং চলতেই থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এটি বিষণ্নতার লক্ষণ। 

বিষণ্নতা থেকে মুক্তির পথ

বিষণ্নতার চিকিৎসার কৌশল পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নির্ধারণ করেন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মনোবিজ্ঞানী ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিয়ে খুবই ফলপ্রসূ হতে পারে। প্রথমে একজন থেরাপিস্ট খুঁজে বের করতে হবে, যিনি মানসিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বিষয়ে অভিজ্ঞ। বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পেতে পেশাদারদের সহযোগিতা নেওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের আরও সমৃদ্ধ করতে পারে।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor