বিশ্বে বর্তমানে প্রতিবছর ১০ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ এইচআইভিতে সংক্রমিত হন। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে এইডস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এআরটি বা অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল চিকিৎসার ব্যাপক প্রাপ্যতার কারণে। কিন্তু ৪৪ বছর ধরে চলা এইডসের নীরব মহামারিকে পুরোপুরি পরাস্ত করার পথে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তারা আবিষ্কার করেছেন শতভাগ কার্যকর এইডস প্রতিরোধী বিশ্বের প্রথম ওষুধ। লেনাকাপাভির শ্রেণির ওষুধটির ব্র্যান্ড নাম ‘ইয়েজটুগো’। অর্ধবার্ষিক ডোজের একটি ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য এই ওষুধ এখন বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ চলছে, যা বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করবে।
গত শনিবার নিউ অ্যাটলাস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এইডস প্রতিরোধী যুগান্তকারী ওষুধটি প্রি-এক্সপোজার প্রোফিল্যাক্সিস (পিআরইপি) হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ যারা এখনও এই মারণ ভাইরাসে সংক্রমিত হননি, ওষুধটি তাদের রক্ষা করে। ২০২৪ সালে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গিলিয়াড সায়েন্সেস এটি আবিষ্কার করে। কয়েকটি বিজ্ঞান জার্নাল এই ওষুধকে ২০২৪ সালের ‘বর্ষসেরা উদ্ভাবন’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কীভাবে কাজ করে এ ওষুধ
লেনাকাপাভির শরীরে প্রবেশ করার পর এইচআইভি-১ ভাইরাসের ‘ক্যাপসিড’ বা জিনগত উপাদান ধারণকারী প্রোটিন আবরণ কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। ফলে ভাইরাসটি কোষে ঢুকে নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়া বা কপি করার ক্ষমতা হারায়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। গিলিয়াড সায়েন্সেসের চেয়ারম্যান এবং সিইও ড্যানিয়েল ও’ডে বলেন, এইচআইভি মোকাবিলায় বিশ্বের জন্য এটি ঐতিহাসিক ক্ষণ। ‘ইয়েজটুগো’ আধুনিক বিজ্ঞানের এমন এক চূড়ান্ত সাফল্য, যা এইডস মহামারির ইতি টানতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ছয় মাসে মাত্র লেনাকাপাভিরের একটি ইনজেকশন নিলেই এইডস থেকে কার্যকর সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। এতে দৈনিক ওষুধ গ্রহণের জটিলতা এবং সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার সমস্যাও দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দাম কত
বায়োফার্মা ডাইভ নামে ম্যাগাজিন জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ‘ইয়েজটুগো’ ওষুধটির বার্ষিক ভায়াল বিক্রি হচ্ছে ২৮ হাজার ২১৮ ডলারে। বছরে দুবার ইনজেকশনের জন্য ভায়ালটি ব্যবহার করা যাবে। তবে ওষুধের এই উচ্চমূল্য নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। গিলিয়াড সায়েন্সেস বলছে, ওষুধের দাম আরও কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে তারা কাজ করছে।
অন্যান্য দেশে কবে আসবে
গিলিয়াড সায়েন্সেস ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ডসহ একাধিক দেশ ‘ইয়েজটুগো’ অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। পাশাপাশি ১২০টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে এই ওষুধ সরবরাহের জন্য ছয়টি জেনেরিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়্যালটি ফ্রি লাইসেন্স চুক্তিও সেরেছে। বিশেষ করে গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গিলিয়াড আগামী তিন বছরে ২০ লাখ মানুষকে কোনো লাভ ছাড়াই এই ওষুধ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, অচিরেই ওষুধটি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে।
Publisher & Editor