রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

ইইউ-মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আগস্টেই

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ১৩ জুলাই ২০২৫ |

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মেক্সিকোর জন্য ৩০ শতাংশ আমদানি শুল্ক ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি আগামী ১ আগস্ট থেকেই কার্যকর হবে। খবর বিবিসির। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই দুই বাণিজ্য অংশীদার যদি পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তাহলে তাদের ওপর আরও উচ্চ আমদানি শুল্ক আরোপ করবেন বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ট্রাম্প।

ইইউ এর আগে পহেলা আগস্টের আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি চুক্তির বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা ও ব্রাজিলের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করবেন। সেগুলোও পহেলা আগস্ট থেকেই কার্যকর হবে। 

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েনকে চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, বাণিজ্য অংশীদারিত্বের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় অনেক বছর গেছে।

'আমরা এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে আমাদের অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদে আপনাদের শুল্ক নীতি ও বাণিজ্য বাধার কারণে তৈরি হওয়া বাণিজ্য ঘাটতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।' 

তিনি ইইউ ও মেক্সিকোকে উদ্দেশ করে বলেছেন, দেশ দুটি যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমদানি শুল্ক আরোপ করে তাহলে তিনি তাদের ওপর এই ৩০ শতাংশের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবেন।

এর আগে গত এপ্রিলে ইইউ থেকে আনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। এরপর আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হলে ট্রাম্প সেটি ৫০ শতাংশে উন্নীত করার হুমকি দিয়েছিলেন।

তখন ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলস ৯ জুলাইয়ের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের হিসেবে দেশটির সঙ্গে ২০২৪ সালে এ জোটের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ২৩৫ বিলিয়ন ডলার।

ভন ডের লেয়েন বলেছেন, ১ আগস্টে মধ্যে একটি সমঝোতার জন্য কাজ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রস্তুত আছে।  তার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা ইইউর স্বার্থ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবো। প্রয়োজনে হলে আনুপাতিক পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 

অন্যদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্রো বলেছেন, ট্রাম্পের ঘোষণার বিষয়ে তার 'শক্ত দ্বিমত' রয়েছে। 

কোনও সমঝোতায় পৌঁছানো না গেলে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে গ্রহণযোগ্য পাল্টা পদক্ষেপের প্রস্তুতির কথা বলেছেন। এদিকে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি 'একটি ন্যায্য সমঝোতায়' পৌঁছাতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন। 

তিনি বলেছেন, আটলান্টিকের দুই পাশের মধ্যে একটি বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনার কোনো যুক্তি নেই।

ডাচ প্রধানমন্ত্রী সামাজিকমাধ্যমে বলেছেন, ইইউকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে যাতে করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি করা হয়- যা থেকে উভয়পক্ষ সমানভাবে লাভবান হতে পারে।

জার্মানির অ্যাসোসিয়েশন অফ দা অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি সতর্ক করে বলেছে, জার্মান গাড়ি নির্মাণ ও সরবরাহে খরচ বেড়ে যেতে পারে। 

ওদিকে মেক্সিকোকে দেওয়া চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, উত্তর আমেরিকার 'মাদক-পাচারের খেলা মাঠে' পরিণত হওয়া বন্ধ করতে দেশটি যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি বলেছেন, 
সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মেক্সিকো আমাকে সহায়তা করছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। 

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউমও একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা পরিষ্কার যে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে পারি এবং কী পারিনা সেটিও আমরা পরিষ্কার। এখানে কিছু বিষয় আছে যা নিয়ে কখনো আলোচনা হতে পারে না। আর সেটি হলো আমাদের সার্বভৌমত্ব।

এর আগে শনিবার মেক্সিকোর অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিষয়টিকে 'অন্যায্য পদক্ষেপ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

তবে, ট্রাম্পের চিঠিতে ২০২০ সালে হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডার চুক্তির আওতায় থাকা মেক্সিকোর পণ্য পহেলা আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া নতুন শুল্কের আওতায় পড়বে কী-না - তা স্পষ্ট হয়নি।

চলতি সপ্তাহে হোয়াইট হাউজ কানাডাকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে চিঠি দিয়েছিল। হোয়াইট হাউজের বাণিজ্য উপদেষ্টা ৯০ দিনে ৯০টি চুক্তির লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন।

তবে, এখন পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের দিক থেকে যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে ঘোষণা এসেছে।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor