রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলারের মামলা করলেন ফিলিস্তিনি অ্যাকটিভিস্ট মাহমুদ খলিল

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১১ জুলাই ২০২৫ |

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় অবস্থিত একটি অভিবাসন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী মাহমুদ খলিল। কারামুক্ত হওয়ার পর তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২০ মিলিয়ন (২ কোটি) ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা দায়ের করেছেন।

খলিল অভিযোগ করেছেন, তাকে মিথ্যা অভিযোগে আটক করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করা হয়েছে। সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে ‘ইহুদি বিদ্বেষী’ হিসেবে চিহ্নিত করে অপপ্রচার চালিয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় তাকে টার্গেট করে বিতাড়নের চেষ্টা করা হয়েছে।

৩০ বছর বয়সী মাহমুদ খলিল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। কারাগারে থাকার সময় তার স্ত্রী একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। সেই কঠিন মুহূর্ত স্মরণ করে খলিল বলেন, 'আমি সন্তান জন্মের সংবাদ পাওয়ার অপেক্ষায় ঠাণ্ডা কারাগারে রাত পার করছিলাম। সেই যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় — এটা এমন কিছু, যা আমি কখনও ক্ষমা করব না।'

সিএনএনের বরাতে জানা যায়, মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার, বেআইনি আটক এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

খলিল বলেন, 'তারা আমাকে চুপ করিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি চুপ করব না। আমি তাদের জানাতে চাই—ক্ষমতার অপব্যবহারের জবাবদিহিতা আছে।' তিনি আরও জানান, ক্ষতিপূরণের অর্থ যদি পান, তাহলে তা তিনি সরকারের দমননীতি দ্বারা আক্রান্ত অন্যান্য ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন। একইসঙ্গে তিনি আনুষ্ঠানিক ক্ষমা ও নির্বাসন নীতির সংস্কার দাবি করেছেন।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটির একজন মুখপাত্র খলিলের দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, খলিলের কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য হুমকি তৈরি করেছিল। যদিও খলিল শুরু থেকেই ইহুদি বিদ্বেষের বিরোধিতা করে আসছেন এবং তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হয়নি।

খলিল জানান, গত ৮ মার্চ তিনি যখন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে ফিরছিলেন, তখন কোনো পরোয়ানা ছাড়াই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফেডারেল এজেন্টরা পরে জানতে পারেন—তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা। এরপর তাকে লুইজিয়ানার জেনা শহরের একটি অভিবাসন আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, যা তার পরিবার ও আইনজীবীদের অজানা রাখা হয়েছিল।

কারাগারে তার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বলে দাবি করেন খলিল। তিনি বলেন, আলসারের ওষুধ দেওয়া হয়নি, দিনে-রাতে তীব্র আলো জ্বালিয়ে রাখা হতো, খাদ্য ছিল প্রায় অখাদ্য। এর ফলে তার ওজন ১৫ পাউন্ড কমে যায়।
১০৪ দিন কারাবন্দি থাকার পর, গত ২০ জুন একজন ফেডারেল বিচারক মাহমুদ খলিলের মুক্তির নির্দেশ দেন। বিচারক রায়ে বলেন, খলিলকে পররাষ্ট্রনীতি ও মতাদর্শের ভিত্তিতে নির্বাসনের চেষ্টা ‘অসাংবিধানিক’ ছিল।

মুক্তির পর খলিল এখন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন এবং গাজায় চলমান সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৫৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor