শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

নিউইয়র্কের মসজিদে মেয়র প্রার্থী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমো

প্রকাশিত: ১৫:৩৫, ১০ অক্টোবর ২০২৫ | ২০

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী ও সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোকে এবার মসজিদে স্বাগত জানানো হলো । ৩ অক্টোবর শুক্রবার জুমার নামাজের প্রাক্কালে জ্যাকসন হাইটসের ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ এলাকায় অবস্থিত দারুল হাদিয়া মসজিদে তাকে স্বাগত জানান ইমাম মুফতি সামাদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি বোর্ড সদস্য বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নেতা ফাহাদ সোলায়মান, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ড. দিলীপ নাথ, ও বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি এম আজিজ। আগামী ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ক্যুমো।

নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কুইন্সের অ্যাসেম্বলি সদস্য জোহরান মামদানির প্রতি সমর্থন তুলে নিয়েছেন কুইন্সের প্রভাবশালী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নেতা ফাহাদ সোলায়মান। এত দিন মামদানিকে সমর্থন করলেও তার ‘যৌনকর্ম বৈধকরণের’ অবস্থানের কারণে এখন বিরোধিতা করছেন তিনি। মসজিদে ফাহাদ সোলায়মান এই ঘোষণা দেন।

ফাহাদ সোলায়মান বলেন, “যৌনকর্ম বৈধকরণ মানে মানব পাচারকে সমর্থন করা। সূর্য ডোবার পর রুজভেল্ট অ্যাভিনিউতে বের হলে দেখা যায়—পুরো এলাকাই যৌনকর্মীদের দখলে।” সোলায়মান জানান, তিনি এবার সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে ভোট দেবেন। একইসঙ্গে তার মসজিদের সদস্যদেরও কুমোকে সমর্থনের আহ্বান জানান।

ইমাম কাজী কাইয়ুমও কুয়োমোর প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “আমি গর্বের সঙ্গে অ্যান্ড্রু কুমোকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করছি। তিনি বিভাজন নয়, ঐক্যের রাজনীতি চান।”

অ্যান্ড্রু কুমোও মসজিদে বক্তব্য দেন এবং মামদানির অবস্থানকে ‘নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন। নিজে ক্যাথলিক-খ্রিস্টান হলেও ২০১১ সালে গ্রাউন্ড জিরোর কাছে ‘পার্ক৫১’ মসজিদ নির্মাণের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন তিনি। হিজাব পরার কারণে আক্রান্ত এক মুসলিম নারী কর্মীর অধিকার রক্ষায়ও কাজ করেছিলেন। বক্তৃতায় ক্যুমো বলেন, “নিউইয়র্ক তথা আমেরিকা ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য তীর্থস্থান। সেই ঐতিহ্য অটুট রেখেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।” ক্যুমো আরও বলেন, “নিউইয়র্ক সিটিতে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধরা সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করছে। এই সহযোগিতার ধারা ব্যাহত হতে দেওয়া যাবে না।”

এ সময় ফাহাদ সোলায়মান ও এম আজিজ জনকল্যাণে পরীক্ষিত নেতৃত্ব হিসেবে ক্যুমোর পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। ফাহাদ সোলায়মান বলেন, “জোহরান মামদানি চার বছর ধরে স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও নিজেকে মুসলমান হিসেবে কখনো তুলে ধরেননি, কিংবা কোনো মসজিদে অংশ নেননি। এখন কেবল ভোটের জন্য কমিউনিটিকে কাছে টানার চেষ্টা করছেন।”

তিনি জ্যাকসন হাইটসের ট্রাফিক ও ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি চেয়ে বলেন, “আমরা বিপুল অংকের ট্যাক্স দিই, কিন্তু সিটির কাছ থেকে যথাযথ সুবিধা পাই না। আশা করি ক্যুমো মেয়র হলে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে।” ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী নির্বাচনে মুসলিম-আমেরিকান মামদানির কাছে পরাজয়ের পর ক্যুমো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন। সম্প্রতি মেয়র এরিক অ্যাডামসও প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন, ফলে এই সিদ্ধান্তের সুফল ক্যুমো পেতে পারেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমর্থন পাওয়ায় উদারপন্থী ও তরুণ ভোটারদের মধ্যে ক্যুমোর প্রতি কিছুটা নেতিবাচক মনোভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষত গাজা ইস্যুতে ট্রাম্পের অবস্থানের কারণে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ভোটাররা ক্ষুব্ধ। অন্যদিকে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের পুত্র জোহরান মামদানির ওপর থেকে নিউইয়র্কের বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে সমর্থন তুলে নিয়েছেন। গত সপ্তাহে জ্যামাইকায় বেদান্ত সোসাইটির পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে ক্যুমো ‘হিন্দুজ ফর ক্যুমো’ শ্লোগানে অভ্যর্থনা পান। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বর্তমানে জরিপে এগিয়ে থাকলেও চূড়ান্ত ফল নির্ভর করবে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর ভোটের ওপর। মুসলিম, হিন্দু ও অভিবাসী ভোটারদের মধ্যে বিভক্তি মামদানির ভোটব্যাংকে চির ধরাতে পারে।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor