শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

বুদ্ধিমতী টুনি

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৩০ নভেম্বর ২০২৫ | ২১

পুব আকাশে সূর্য সবে উঁকি দিয়েছে আর তার মিঠে আলোয় ঝলমল করছে সবুজ ধানক্ষেত। এমন সুন্দর সকালে ছোট্ট টুনটুনি পাখি তার ছানাদের কচি মুখের দিকে তাকিয়ে বাসা থেকে বের হলো। ছানারা এখনো নরম পালকের ওমে ঘুমিয়ে আছে।

ডানা মেলে দিয়ে নীল আকাশে উড়াল দিল সে।

উড়তে উড়তে তার নাকে এলো ভারি মিষ্টি একটা গন্ধ। গরম তেলে ভাজা ডালের বড়ার সুবাস! গন্ধটা তাকে টানতে টানতে নিয়ে গেল গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে থাকা এক চাষির বাড়ির উঠানে। সেখানে মাটির চুলায় কড়াই বসিয়ে এক মহিলা ছেঁক ছেঁক শব্দ করে বড়া ভাজছে।
টুনির জিভে জল এসে গেল।

এমন লোভনীয় দৃশ্য দেখে সে আর থাকতে পারল না। ফুড়ুত করে উড়ে গিয়ে মহিলার চোখের আড়ালে টুপ করে একটা বড়া ঠোঁটে তুলে নিয়ে গাছের আগায় উঠে গেল। এটা তার ছানাদের জন্য সেরা একটা উপহার।
কিন্তু আনন্দ বেশিক্ষণ রইল না।

বড়াটা মুখে নিয়ে যে-ই সে বাসার দিকে উড়াল দেবে, ঠিক তখনই ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো এক ধূর্ত শেয়াল। তার চোখ দুটো চকচক করছে লোভে, মুখে এক চিলতে চালাক হাসি।
শেয়াল লেজ নাড়তে নাড়তে মিষ্টি সুরে বলল, হে সুরের রানি, তোমার দেখা পেয়ে আজ আমার সকালটা ধন্য হয়ে গেল। কত দিন তোমার মধুর গান শুনি না। এই সুন্দর সকালে তোমার ওই কোকিলের মতো গলায় একটা গান না হলে কি চলে?

টুনি এক মুহূর্তেই শেয়ালের ফন্দিটা ধরে ফেলল।

তার বুকের ভেতরটা ঢিপঢিপ করছে। সে ভালো করেই জানে, গান গাইতে গিয়ে মুখ খুললেই তার ঠোঁট থেকে বড়াটা মাটিতে পড়ে যাবে আর সেটার জন্যই শেয়াল পণ্ডিত ওত পেতে বসে আছে।
টুনি বড়াটাকে ঠোঁট থেকে নামিয়ে তার ছোট্ট আর মজবুত দুটো পায়ের নিচে সাবধানে চেপে ধরল। তারপর শেয়ালের দিকে তাকিয়ে এমন একটা ভাব করল, যেন সে তার কথায় ভীষণ খুশি হয়েছে।

মিষ্টি হেসে টুনি বলল, ওমা, শেয়াল পণ্ডিত, তুমি আমার গানের এত ভক্ত! তোমার মতো গুণী শ্রোতা পেলে কার না গান গাইতে ইচ্ছা করে? অবশ্যই শোনাব।

এই বলে টুনি তার ডানা দুটো হালকা মেলে দিল আর মিষ্টি সুরে গান ধরল—

“আমার মাথায় বুদ্ধি অনেক, পড়ব না তো ফাঁদে,

হাজার হাজার ফন্দি করেও, ফিরবে খালি হাতে।

চোখটা তোমার বড়ার দিকে, মতলবটা জানি,

পায়ের তলায় লুকিয়ে আমি বুদ্ধিমতী রানি।”

গান শেষ হতেই শেয়ালের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। সে তো হতবাক! এমন বুদ্ধি টুনির মাথায় আসবে, তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি। তার সব পরিকল্পনা ধুলায় মিশে গেছে। লজ্জায় আর অপমানে তার কান দুটো ঝুলে পড়ল।

টুনি ফিক করে হেসে পায়ের নিচ থেকে বড়াটা আবার ঠোঁটে তুলে নিল। তারপর বলল, কী পণ্ডিতমশাই, গান শুনে মন ভরল?

শেয়াল আর কোনো উত্তর দিল না। সে মুখ নিচু করে লেজ গুটিয়ে হনহন করে বনের সেই গভীর অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। টুনি বিজয়ীর মতো ডানা মেলে উড়ে চলল তার বাসার দিকে।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor