গরমের সময় তৃষ্ণা মেটাতে ডাবের পানি বেশ জনপ্রিয়। প্রাকৃতিক এই পানীয়টি কিন্তু ত্বকের পরিচর্যায়ও বেশ কার্যকর। প্রাচীনকাল থেকেই ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক উপাদানগুলো সব সময় প্রাধান্য পেয়ে আসছে। প্রাকৃতিক এই উপাদানগুলোতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল থাকে না।
তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই।
ডাবের পানির উপাদান
শরীরের নানা অভ্যন্তরীণ উপকারে তৃষ্ণা মেটাতে ডাবের পানির জুড়ি নেই। তেমনি এই ডাবের পানি আমাদের ত্বকের যত্নে বহু উপকার বয়ে আনে। এতে রয়েছে এসেনশিয়াল মিনারেলস, ভিটামিনস, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম।
এ ছাড়া এতে অ্যান্টি মাইক্রোভাল এবং অ্যান্টি ফাংগাল প্রপার্টিস রয়েছে, যা ব্রণের হাত থেকে স্কিনকে বাঁচায় এবং স্কিনের দাগ-ছোপ হালকা করতে সাহায্য করে। এমনকি এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণ ও ভিটামিন ‘সি’ স্কিনের সানবার্ন দূর করে এবং স্কিন টোন লাইট করে।
কিভাবে ব্যবহার করবেন
ডাবের পানি স্কিন ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি স্কিনকে হাইড্রেট করে এবং স্কিনের ময়লা দূর করে।
সেনসিটিভ স্কিনের জন্য বেস্ট ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে এই পানীয়।
ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহারের জন্য একটি বাটিতে দুই টেবিল চামচ ডাবের পানি নিন। এর মধ্যে একটি কটন বল চুবিয়ে নিয়ে স্কিনে হালকা হাতে রাব করে নিন।
ডাবের পানি বেশ ভালো স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। একটু চালের গুঁড়া বাটিতে নিয়ে এর মধ্যে আধা চা চামচ মধু ও এক চা চামচ ডাবের পানি মিশিয়ে নিন।
হালকা করে ত্বকে ম্যাসাজ করে নিন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে মুখের ময়লাও দূর হবে, আর ত্বকও বেশ মোলায়েম হবে।
স্ক্রাবারের পর আসে টোনারের পালা। ডাবের পানি কিন্তু বেশ ভালো টোনার হিসেবেও কাজ করে। ডাবের পানি এক ধরনের ন্যাচারাল টোনার। এটি ত্বকের পোরস ছোট করে আনে, স্কিনকে ময়েশ্চারাইজ করে, স্কিনের পিএইচ ব্যালেন্স রাখে।
একটি বাটিতে দুই চা চামচ ডাবের পানি ও এক চা চামচ গোলাপজল নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। একটি কটন প্যাড এই টোনারে ভিজিয়ে নিয়ে পুরো মুখ মুছে নিন।
ডাবের পানি দিয়ে আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী মাস্কও ব্যবহার করে নিতে পারবেন। স্বাভাবিক ত্বকের জন্য তাজা ডাবের পানিতে চন্দন কাঠ ভিজিয়ে রাখুন এক ঘণ্টা। তারপর চন্দন কাঠ ঘষে যে পেস্ট তৈরি হবে, তা পুরো মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন পানি দিয়ে। এই পেস্ট ন্যাচারাল স্কিন ক্লিনজার হিসেবেও কাজ করে এবং ত্বক থেকে মৃতকোষ সরিয়ে ফেলে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ডাবের পানির সঙ্গে মুলতানি মাটি মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। মুখের ত্বকে লাগান। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকের জন্য ১০টি কাঠবাদাম ডাবের পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। আধাঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
সরাসরি হাত দিয়ে ডাবের পানি মুখে না লাগানোই ভালো। তুলো ভিজিয়ে সেই তুলো দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করুন। উপকার পাবেন বেশি।
ডাবের পানির উপকারিতা
মুখে অনেকের বসন্তের দাগ থাকে। নিয়মিত ডাবের পানি ব্যবহার করলে দাগ হালকা হয়। ডাবের পানি দিয়ে আইস কিউব বানিয়ে নিয়মিত মুখে ঘষলে দাগ আস্তে আস্তে চলে যায়।
ডাবের পানি হাইপার পিগমেন্টেশন দূর করে। একটি বাটিতে দুই চা চামচ ডাবের পানি, এক চা চামচ লেবুর রস ও এক চিমটি হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে নিন। এবার তুলার বল ভিজিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যবহার করুন।
ত্বক সতেজ রাখতে ডাবের পানি সাহায্য করে। ত্বকের লাইটেনিং মাস্ক তৈরির জন্য বাটিতে তিন চা চামচ ডাবের পানি, এক টেবিল চামচ আটা ও আধা চা চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। কিছুটা শুকিয়ে গেলে হালকা ম্যাসাজ করে ধুয়ে নিন।
স্কিন লাইটেনিং ক্রিম বানাতে বাটিতে ময়েশ্চারাইজার লোশন বা ক্রিম নিন। এতে এক চা চামচ ডাবের পানি মেশান। প্রতিদিন রাতে ঘুমের আগে এই ক্রিম ত্বকে লাগান।
Publisher & Editor