ইগলস সিনড্রোম হলো স্টাইলয়েড প্রসেস নামক হাড়ের অস্বাভাবিক লম্বা হওয়া বা স্টাইলোহাইওয়েড লিগামেন্টে ক্যালসিয়াম জমে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট সমস্যা। এটি ঘাড়, গলা, চোয়াল ও কানে ব্যথা সৃষ্টি করে এবং অনেক সময় মাথাব্যথাও দেখা দেয়।
গলায় টনসিলের ঠিক নিচে একটা হাড় থাকে, যাকে স্টাইলয়েড প্রসেস বলে। এই হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা স্টাইলোহাইওয়েড লিগামেন্ট ক্যালসিফাই (শক্ত) হয়ে যাওয়ার কারণে ঘাড়-গলার গভীরে ব্যথা হয়, যা চোয়াল বা কানে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে আশপাশের স্নায়ু বা রক্তনালির ওপর চাপ সৃষ্টি করে বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে।
স্টাইলয়েড প্রসেস ও স্টাইলোহাইওয়েড লিগামেন্ট কী
স্টাইলয়েড প্রসেস: কানের নিচে, টনসিলের ঠিক গভীরে অবস্থিত একটি সরু হাড়।
স্টাইলোহাইওয়েড লিগামেন্ট: এটি একধরনের সন্ধিবন্ধনী, যা স্টাইলয়েড প্রসেসকে হাইওয়েড বোনের সঙ্গে যুক্ত করে।
স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য: ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ সেন্টিমিটারের কম, কিন্তু বাড়তি বলা হয় যদি ৩ সেন্টিমিটারের বেশি হয়। ৪ সেন্টিমিটারের বেশি হলে রোগীর উপসর্গ আরও বেশি হয়।
প্রধান উপসর্গ
গলার এক পাশে তীব্র ব্যথা। গলায় কাটা বিঁধলে যে রকম ব্যথা ও অস্বস্তি হয়, সে রকম কষ্ট হয় এতে।
ক্ল্যাসিক ইগল সিনড্রোম শুধু এক পাশে হয়, তবে কখনো কখনো উভয় পাশে হতে পারে।
কান, চোয়াল বা মাথায় ব্যথা ছড়িয়ে যায়।
খাবার গিলতে কষ্ট হয়।
গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি হয়।
মাথা ঘোরালে বা নিচু করলে ব্যথা বেড়ে যায়।
এসব লক্ষণ আবার পরিচিত অনেক সমস্যার সঙ্গে মিলে যেতে পারে, কিন্তু সঠিক ডায়াগনোসিস ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব নয়।
কী কারণে এই সমস্যা হয়
কারণ ছাড়াই বা ইডিওপ্যাথিক, যেখানে কোনো কারণ পাওয়া যায় না।
স্টাইলোহাইওয়েড লিগামেন্টে ক্যালসিফিকেশন।
পুরোনো টনসিল অস্ত্রোপচারের জটিলতা।
বয়সজনিত পরিবর্তন।
বংশগত প্রবণতা।
কীভাবে নির্ণয় করা হয়
শারীরিক পরীক্ষা, বিশেষ করে মুখের ভেতর দিয়ে ডিজিটাল পালপেশন করা হয়।
এক্স-রে স্টাইলয়েড প্রসেসে হাড় বড় হলে ধরা পড়ে।
সিটি স্ক্যান, এটাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য।
চিকিৎসা কী
১. ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগী মারাত্মক কষ্টে না ভুগলে অস্ত্রোপচার ছাড়া চিকিৎসা করা হয়। যেমন ব্যথানাশক, স্নায়ুজনিত ব্যথার ওষুধ (যেমন: গ্যাবাপেনটিন; ভিটামিন বি১, বি৬, বি১২), লোকাল স্টেরয়েড/লিডোকেইন ইনজেকশন, মাসল রিল্যাক্সেন্ট।
২. অস্ত্রোপচার: স্টাইলয়েড হাড় অপসারণ করা হয়। মুখের ভেতর দিয়ে বা ঘাড় কেটে এই অস্ত্রোপচার করা হয়। মুখের ভেতর দিয়ে অস্ত্রোপচার নিরাপদ পদ্ধতি। এতে বাইরে কোনো দাগ থাকে না, কিন্তু সীমিত পরিসরে কাজ করা যায়। সচরাচর এই পদ্ধতিতেই করা হয়। সফল অস্ত্রোপচারের পর অধিকাংশ রোগী দীর্ঘ মেয়াদে ব্যথামুক্ত জীবন ফিরে পান।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
যদি ওপরের উপসর্গগুলোয় ভোগেন এবং কোনো নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে না পান, তাহলে একজন অভিজ্ঞ নাক–কান–গলা (ইএনটি) বিশেষজ্ঞ দেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ কথা
ইগলস সিনড্রোম সচরাচর কোনো রোগ নয়, তাই এটি প্রায়ই উপেক্ষিত থাকে। কিন্তু নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসা সহজ ও কার্যকর।
Publisher & Editor