রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

ইতিহাস ও প্রেমের সাক্ষী গৌরীপুরে বীরাঙ্গনা সখিনা বিবির সমাধি

প্রকাশিত: ০৭:২২, ১১ জুলাই ২০২৫ | ১১

ইতিহাসের পাতায় বীরত্ব ও প্রেমের এক জ্বলন্ত প্রতীক সখিনা বিবি। যাঁর সমাধি রয়েছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের কেল্লাতাজপুর কুমড়ি গ্রামে। আজও মানুষের মুখে মুখে স্মৃতি বহন করে চলেছে সখিনা বিবির বীরত্বের গল্প।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৭শ শতকের মুঘল শাসনামলে দেবান উমর খাঁয়ের কন্যা সখিনা ছিলেন তার অপূর্ব সুন্দরী ও বিদ্যাবতী।

তার রূপ ও গুণের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে কিশোরগঞ্জের ঈশা খাঁর নাতি ফিরোজ খাঁ মুগ্ধ হন। ফিরোজ খাঁ চালাকি করে দরিয়া নামের এক নারীকে তসবি বিক্রেতা সাজিয়ে পাঠিয়ে আসেন সখিনার কাছে। দরিয়ার কাছে ফিরোজের অসামান্য রূপ-গুণের কথা শুনে সখিনা তাকে ভালোবেসে ফেলেন। ফিরোজ তখন উমর খাঁর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান।

কিন্তু উমর খাঁ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে ফিরোজ খাঁ বিশাল বাহিনী নিয়ে তাজপুরে অভিযান চালান। উমর খাঁ পরাজয় বরণ করেন আর ফিরোজ-সখিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন।         কিন্তু উমর খাঁ এই পরাজয় মেনে নিতে পারেন নি। পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে তিনি ফিরোজ খাঁ কে বন্দি করেন।

ফিরোজের অনুপস্থিতিতে তার সৈন্যবাহিনী বিপদে পড়ে। এসময় পুরুষবেশে সখিনা যুদ্ধে অংশ নেন। সখিনা যুদ্ধক্ষেত্রে কাঁধে অস্ত্র নিয়ে বাবার সঙ্গে লড়ে বাবাকে প্রায় পরাজিত করেন।এদিকে উমর খাঁর উজিরের কুমন্ত্রণায় গুজব রটিয়ে দেওয়া হয় যে, ফিরোজ সখিনাকে তালাক দিয়েছেন। এ খবর সখিনা শুনতে পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

বিপক্ষ শক্তির আঘাতে তিনি নিহত হোন। শিরোস্ত্রাণ খুলে দেখা যায় বীর সখিনার মুখ। উমর খাঁ মেয়েকে হারিয়ে পাগল প্রায় হয়ে গেলেন। তিনি ফিরোজ খাঁকে বন্দিশালা থেকে মুক্তি দেন। শোনা যায়, ফিরোজ খাঁ বন্দী থেকে মুক্ত হওয়ার পর প্রতিদিন সন্ধ্যায় শোকের পর্যায়ে এসে সখিনার সমাধির পাশে প্রদীপ জ্বেলে থেমে বসতেন। সময়ের আবর্তে দুই জনের এই প্রেম ইতিহাসে ‘অমর’ হয়ে রয়ে গেছে। সখিনা ও ফিরোজের ভালোবাসাও মিশে আছে বীরত্বের সঙ্গে। সখিনার মাজারে একটি ছাউনি, সমাধির গিলাফ ও চারিদিকে কাঠগোলাপের গাছ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। এই গাছগুলো যেন সশরীরে সমাধিটি রক্ষা করতে দাঁড়িয়েছে।

যেভাবে আসবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে বা ট্রেনে ময়মনসিংহ যাওয়া যায়। বাসের মধ্যে রয়েছে: এনা, আলম এশিয়া, শামীম, শৌখিন। ৩ ঘণ্টার ভ্রমণে বাসভেদে ভাড়া পড়তে পারে ৩০০-৪০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে আসতে চাইলে তিস্তা, মোহনগঞ্জ, যমুনা এক্সপ্রেস রয়েছে। এরপর গৌরীপুরের দিকে যেতে পারবেন স্থানীয় বাস দিয়ে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে পাবেন বিজয় এক্সপ্রেস।

সখিনা বিবি মাজারে আপনাদের স্বাগত জানাবেন মো. ফজলুল হক। তিনি মাজার সংলগ্ন মনিহারি দোকানের মালিক এবং বীরাঙ্গনা সখিনা বিবি কল্যান সংস্থার প্রধান। তবে, বর্তমানে পর্যাপ্ত আবাসন, নিরাপত্তা বা যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায়—পর্যটকরা সন্ধ্যায় ফিরতে বাধ্য থাকেন। আর তাই এই অতুলনীয় ঐতিহ্যভাণ্ডার সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার অভাবে পর্যটন শিল্পে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখতে পারছে না।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor