বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

জগৎ শেঠের গুপ্তধন

প্রকাশিত: ০২:০৪, ০১ মে ২০২৫ | ৩০

সাইফুল ও সালাম দুই ভাই। বাবা নেই। মায়ের কাছে তারা মানুষ। জমিজিরাত কিছু নেই। নিরুপায় মা সাভার এসে চাকরি নেন গার্মেন্টসে। নানির সঙ্গে তারা থাকে। রাজশাহীর পদ্মাপারে নানাবাড়ি। পড়ালেখা নেই, কাজকর্ম নেই, দুই ভাই সারা দিন টো টো করে ঘুরে বেড়ায় চরে চরে।

মাছ ধরে। ডুবসাঁতার কাটে পদ্মার পানিতে যখন খুশি তখন। হাঁসের ডিম কুড়ায়। বিশেষ করে শীতকালে—যখন পদ্মার বুকে জেগে ওঠে নতুন নতুন চর।

বালিহাঁস ও অতিথি পাখিরা আসে ঝাঁকে ঝাঁকে।
একদিন এক চরে ছিপ, বড়শি ও সুতাসহ একটি হুইল কুড়িয়ে পায় তারা। খুশিতে ডগমগ দুই ভাই। সাইফুল চরের বালুতে ডিগবাজি খায় বারকয়েক। এমন একটা হুইল বড়শির শখ তার অনেক দিনের।

শুরু হয় তাদের নতুন অভিযান। বড়শি নিয়ে জায়গায় জায়গায় ঘোরা।

একদিন গিয়ে বড়শি ফেলে নদীর বড় এক দহে। বড় একটা ঝিনুকের টোপ দেয় গেঁথে। উদ্দেশ্য বড় মাছ ধরা। এখানকার পারটা একদম খাড়া।

কিছুক্ষণ পরই সুতায় টান পড়ে হ্যাঁচকা। হরহর করে অনেকখানি সুতাও বেরিয়ে যায় হুইল থেকে। সাইফুল টেনে ধরে ছিপ। ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যায় ওটা। বুঝি ভেঙেই যাবে! না ভাঙে না। সুতায় ডিল পড়ে। কিন্তু মাছ উঠে আসে না।

সালামের হাতে ছিপটা দিয়ে সাইফুল এক কাণ্ড করে বসে। পানিতে নেমে সুতা ধরে দেয় ডুব। সালাম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। অনেকক্ষণ পর ভুশ করে ভেসে ওঠে সাইফুল। দম ছাড়ে সালামও।

— ‘ওই শালা খালে ঢুইকা গেছে।’

— ‘এখন কী করবি বে? রশা ধইরা টান দিবি নাকি?’

— ‘না রশা ছিঁড়া যাইবে বে। শালাক খাল খুইরা বাহির করব।’

পানিতে দাঁড়িয়েই সাইফুল দেখে নেয় ডাঙার নদীর পারটা। সালাম যেখানে দাঁড়িয়ে ঠিক সেদিকেই গেছে গর্তটা। আর মাটির চাঙরে বিশাল একটা ফাটল। বুদ্ধিটা তখনই এলো মাথায়। চাঙরটা ভেঙে নামাতে পারলে ওখান দিয়ে গর্ত খুঁড়ে পাওয়া যাবে মাছ।

একটু দূরে পানিতে পোঁতা একটা বাঁশ দেখতে পায় সাইফুল। ওটা তুলে এনে চোখা অংশ দিয়ে লেগে পড়ে কাজে। অল্পক্ষণের মধ্যে বিশাল চাঙরটা ধসে পড়ে পানিতে। তারপর হাতখানেক গর্ত খুঁড়তেই পেয়ে যায় সুড়ঙ্গটা। পানির মুখে বাঁধ দিয়ে সেচে ফেলে পানি। তারপর হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ে ভেতরে। কিছু ছোট মাছ ও কাঁকড়া দৌড়ে পালিয়ে যায়। উত্তেজনায় কিছুই খেয়াল করে না দুই ভাই। ডরভয়ও না। সাইফুল হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ে ভেতরে বড়শির সুতা ধরে। একটা বড় বাইন মাছ বড়শিটা গিলেছে। বেশ বড় আর মোটা। সাইফুল খুশি হয়। উত্তেজনাও বেড়ে যায়। ওটাকে এমনি এমনি ধরা যাবে না। পিছলে বেরিয়ে যাবে হাত থেকে। গায়ের গেঞ্জিটা মাথা গলিয়ে খুলতে দুই হাত ওপরে তুলল সাইফুল। তারপর বাঁ হাত আর মাথা গলিয়ে ডান হাতে নিয়ে হাতটা সোজা করতে গেলে ডান হাত ডান পাশে ঠক করে গুঁতা খায় শক্ত কিছুর সঙ্গে। ব্যথায় চিনচিন করে ওঠে হাত। ভালো করে খেয়াল করতেই দেখে লোহার একটা বাক্স। আরেকবার চমকে ওঠে সাইফুল।

মাছ ফেলে ওটা নিয়ে লেগে পড়ে দুই ভাই।

ঘণ্টা দুই পর।

দুই ভাই কাদাপানি আর ঘামে একাকার। বিশাল এক লোহার সিন্দুক বের করে আনে মাটির তলা থেকে।

তারপর মহা ঘটনা।

বরেন্দ্র জাদুঘর আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ আবিষ্কার করে জগৎ শেঠ মাহাতাব চাঁদের সিন্দুক এটা।

নবাব মীর কাশেমের ভয়ে তাঁর ধনরত্ন সিন্দুকে ভরে লুকিয়ে রেখেছিলেন গঙ্গা নদীর তলায়। এই  সিন্দুক তারই একটি। কালের প্রবাহে স্রোতের টানে গড়িয়ে গড়িয়ে এসেছে এত দূর।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor