সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

রাতে ঘুম আসে না? এই ৭ নিয়ম আপনার জন্য

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ | ১২

এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের রাতে কোনো কাজ নেই; কিন্তু তবুও জেগে থাকেন। অনেকে আবার ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারেন না। রাতের ঘুম নিয়ে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্য রইল সাতটি পরামর্শ। আশা করা যায়, এসব মানলে আপনার বাড়িতেও ঘুমপাড়ানি মাসি–পিসি আসবে।

১. উচ্চ শব্দ বন্ধ করুন, নাহলে হোয়াইট নয়েজ চালান
পাশের বাসা বা ওপর তলার কেউ ধুপধাপ আওয়াজ করতে পারে, কেউ কেউ গান শুনতে পারে উচ্চ শব্দে, আবার রাস্তার পাশে বাসা হলে হর্নের আওয়াজও বারোটা বাজাতে পারে আপনার ঘুমের। এসব ক্ষেত্রে ঘরের দরজা–জানালা বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় থাকে না। এর পরও শব্দ কানে এলে হোয়াইট নয়েজ (একধরনের শোঁ শোঁ শব্দ, অনেকটা ফ্যানের বাতাসের মতো) চালিয়েও ঘুমিয়ে যেতে পারেন। যেভাবেই হোক, বিরক্তিকর শব্দ থেকে দূরে থাকতে হবে।

২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, হোয়াইট নয়েজ চালিয়ে ঘুমানোর কারণে কিছু মানুষের ঘুমের উন্নতি হয়েছে।

২. একটু হাঁটাচলা করুন
ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুয়ে থেকেও যদি  ঘুম না আসে, তাহলে বিছানা থেকে উঠে পড়ুন। বারান্দায় গিয়ে একটু হাঁটুন। প্রয়োজনে এক রুম থেকে অন্য রুমে হেঁটে আসুন। কিছুক্ষণ হেঁটে এসে আবার শুয়ে পড়ুন। এবার সম্ভবত আপনার ঘুম আসবে। বাসায় সিঁড়ি থাকলে একটু সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নিচে নামতে পারেন। ব্যায়ামের পাশাপাশি ঘুমেরও সাহায্য হবে। 

৩. বারবার সময় দেখা থেকে বিরত থাকুন
রাতে ঘুম না এলে অনেকে বারবার ঘড়ি দেখেন। হয়তো রাত তিনটা বেজে গেছে; কিন্তু আপনি এখনো ঘুমাতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে মনে হবে, হায় হায়; আর মাত্র চার–পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে কাজে যেতে হবে। হয়তো সময় দেখে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করবেন; কিন্তু তাতে ঘুম আসবে না। বরং ঘুম আপনাকে ছেড়ে পালাবে। কারণ, ঘুম না হওয়ার কারণে আপনার মধ্যে উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা কাজ করছে।

যত বেশি ঘড়ি দেখবেন, দুশ্চিন্তা তত বাড়বে। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুশ্চিন্তা ও ঘুম পরস্পরবিরোধী। যাদের দুশ্চিন্তা বেশি, তাঁদের ঘুমে সমস্যা হয়। আর যাদের ঘুমে সমস্যা হয়, তাঁদের জীবনে আছে দুশ্চিন্তা। 

৪. স্ক্রিন এড়িয়ে চলুন
অনেকে রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত মুঠোফোন ব্যবহার করেন। হয়তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে একটু রিলস, টিকটক বা শর্ট ভিডিও দেখেন। দেখে হয়তো ভালোই লাগে; কিন্তু ঘুমের পথ বন্ধ হয়ে যায়। স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ইলেকট্রিক স্ক্রিন থেকে নীল আলো নির্গত হয়।

এই নীল আলোর কারণে আমাদের শরীরে মেলাটোনিন উৎপাদন কমে যায়। মেলাটোনিন হলো একটা হরমোন, যা আমাদের ঘুমের সার্কিডিয়ান ছন্দ ও ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। কেউ কেউ ভাবতে পারেন, নীল আলো থেকে বাঁচতে তো আপনি চশমা ব্যবহার করছেন; কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু কাচের চশমা এ জন্য যথেষ্ট নয়। তাছাড়া চশমা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। 

৫. শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন
অনেক চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের মতে, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের সাহায্যে ঘুমের মান উন্নত করা যায়। তবে এ বিষয়টা নিয়েও আরও বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন। তবে আপনি যে ব্যায়াম করতে পারেন, তা ৪-৭-৮ কৌশল নামে পরিচিত। অনেকটা ফুটবলের ফর্মেশনের মতো শোনালেও এ কৌশল আপনার ঘুম উন্নত করতে পারে। এ কৌশল অনুযায়ী, প্রথমে ৪ সেকেন্ড শ্বাস নেবেন, তারপর ৭ সেকেন্ড শ্বাস বন্ধ করে রাখবেন। সবশেষে ৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে নিশ্বাস ছাড়বেন মুখ দিয়ে। এ পদ্ধতিতে অনেকের ঘুমের মান ও ঘুমের চক্র উন্নত হয়েছে। আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন!

৬. ঘরের লাইট বন্ধ করুন
অনেকে রাতে লাইট বন্ধ করে ঘুমাতে পারেন না। কেউ কেউ ভয় পান বলে লাইট জ্বালিয়ে রাখেন। তবে এতে ঘুমের সমস্যা হয়। স্মার্টফোনের স্ক্রিনের মতো উজ্জ্বল আলোও শরীরের মেলাটোনিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়। তাই লাইট বন্ধ করে আরামে ঘুমান। 

৭. গান বা প্রাকৃতিক শব্দ শুনতে পারেন
বিষয়টা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। তবে এ পদ্ধতি সত্যিই কাজ করে। অনেক রাতেই আমি ইউটিউবে বৃষ্টির শব্দ চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী রিলাক্সিং যেকোনো শব্দ শুনতে পারেন। চাইলে লাইট গানগুলোও শুনতে পারেন। শুনতে পারেন পছন্দের গল্পও।

বাংলাদেশের অনেক মানুষের রাতে ভূত এফএম শুনতে শুনতে ঘুমানোর অভিজ্ঞতা আছে। এখন সময় বদলেছে। যেকোনো ধরনের গল্প আপনি শুনতে পারেন। এখনো আমি রাতে গল্প চালিয়ে ঘুমিয়ে যাই। হয়তো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আপনিও এটা চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে গল্প শুনে ঘুমানো ক্ষতিকর কি না, এ ব্যাপারে এখনো কোনো গবেষণা হয়নি। যদিও গবেষকেরা রিলাক্সিং মিউজিক শুনে ঘুমানোর পরামর্শ দেন। 

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor