শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

হাসিনার মতো গণআন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছেন যেসব বিশ্বনেতা

প্রকাশিত: ০০:৪২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫ |

ইতিহাসে এমন বহু প্রভাবশালী নেতার নাম রয়েছে, যাদের জনগণের বিক্ষোভ, সামরিক অভ্যুত্থান কিংবা গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে, আর শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যেতে হয়েছে নির্বাসনে। কেউ প্রাণরক্ষার জন্য, কেউ কারাবাস বা মৃত্যুদণ্ড এড়াতে। সবশেষ এই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা। কয়েক সপ্তাহ ধরে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভের পর সম্প্রতি সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন তিনি।

জেনে নেওয়া যাক একই পরিণতি বরণ করা কয়েকজন বিশ্বনেতা সম্পর্কে-

শেখ হাসিনা

২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন বাংলাদেশের দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তিনি ভারতে পালিয়ে যান। জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সেই সময়ের দমনপীড়নে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন।

বাশার আল-আসাদ

২০২৪ সালে সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিদ্রোহীদের চাপের মুখে রাশিয়ায় পালিয়ে যান। এর মধ্য দিয়ে তার পরিবারের টানা ৫১ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। সিরিয়ার দীর্ঘ ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে মস্কো ও তেহরানের সমর্থনে টিকে থাকা আসাদ আশ্রয় নিয়েছেন মস্কোয়।

গোতাবায়া রাজাপাকসে

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ২০২২ সালের জুলাইয়ে দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ও গণবিক্ষোভের মুখে মালদ্বীপে পালিয়ে যান। কিছুদিন পর তিনিসহ তার ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেসহ অন্য আত্মীয়রাও পদত্যাগ করেন। খাদ্য, জ্বালানি ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি জনরোষ সৃষ্টি করেছিল রাজাপাকসে পরিবারের শাসনের বিরুদ্ধে।

ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিয়েভে সহিংস বিক্ষোভের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ রাশিয়ায় পালিয়ে যান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি বাতিল করে রাশিয়ার কাছ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে পার্লামেন্ট তাকে অভিশংসন করে ওয়ারেন্ট জারি করে। রুশ সেনারা তাকে ক্রিমিয়ার পথে পালাতে সাহায্য করে বলে ধারণা করা হয়।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি

লিবিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি ২০১১ সালের আরব বসন্তে ক্ষমতাচ্যুত হন। রাজধানী ত্রিপোলি বিদ্রোহীদের দখলে গেলে তিনি নিজ শহর সির্তে পালিয়ে গিয়ে বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। ২০১১ সালের ২০ অক্টোবর ন্যাটোর বিমান হামলায় তার কনভয় আক্রান্ত হলে বিদ্রোহীরা তাকে হত্যা করে। পরে তার দেহ প্রকাশ্যে প্রদর্শনের পর মরুভূমির এক অজ্ঞাত স্থানে দাফন করা হয়।

মার্ক রাভালোমানানা

মাদাগাস্কারের ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানা ২০০৯ সালে তৎকালীন মেয়র আন্দ্রি রাজোয়েলিনার নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। রাভালোমানানা দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে যান এবং অনুপস্থিতিতে আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। পাঁচ বছর নির্বাসনে থাকার পর ২০১৫ সালে দেশে ফিরে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পান।

জ্যঁ-বের্ত্রঁ আরিস্তিদ

হাইতির প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জ্যঁ-বের্ত্রঁ আরিস্তিদ দুইবার দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। প্রথমবার ১৯৯১ সালে, মাত্র ছয় মাসের মাথায় সামরিক অসন্তোষের কারণে তাকে উৎখাত করা হয়। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তিনি ফিরে আসেন। ২০০০ সালে পুনর্নির্বাচিত হলেও ২০০৪ সালে বিদ্রোহের মুখে মার্কিন সহায়তায় মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে পালিয়ে যান এবং পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় আশ্রয় নেন। ২০১১ সালে তিনি হাইতিতে ফিরে আসেন।

আন্দ্রি রাজোয়েলিনা

২০০৯ সালে গণবিক্ষোভে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানাকে পদত্যাগে বাধ্য হলে ক্ষমতায় বসেন রাজোয়েলিনা। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৩৪ বছর। সম্প্রতি দেশটিতে পানি ও বিদ্যুৎ সংকট ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরে তা বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। একপর্যায়ে তার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় সেনাবাহিনী। শেষ পর্যন্ত দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন তিনি।

সূত্র: এপি

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor