চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতাল নিয়ে আইএমইডির প্রতিবেদন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত ১ হাজার ৭৪ জনকে চিকিৎসা দিয়েছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটি জুলাই যোদ্ধাদের জন্য চীন, নেপাল, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে পরামর্শ নিয়েছে। পাশাপাশি গুরুতর অসুস্থদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে সেবা দেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে ইনস্টিটিউটটি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল স্থাপন’ নামের সমাপ্ত প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন করতে গিয়ে আলাদাভাবে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জরুরি সংকট মোকাবিলায় সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে হাসপাতালটি। এ সময় চোখে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। যেসব রোগী এসেছেন, তাদের মধ্যে ২৭৮ জন ছিলেন কম আঘাতপ্রাপ্ত। তারা বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যান। এছাড়া মারাত্মকভাবে আহত ৭৯৬ জনকে (পুরুষ ৭৮১ এবং নারী ১৫ জন) ভর্তি করানো হয়েছিল। বিভিন্ন মেয়াদে চিকিৎসা নেওয়া জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৬৭৫ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসার জন্য ৯ জনকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে ১২১ জন রোগী বিভিন্ন মাত্রার চোখের অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ৩৯ জনের চোখ সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে। ৬৫ জনের চোখ সম্পূর্ণ ভালো হয়েছে। ৪৫০ জনের এক চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু রোগীর তৃতীয় পর্যায়ের অপারেশনও করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লবের মতো সংকটকালীন চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও হাসপাতালের পরিচালক, চিকিৎসক, টেকনোলজিস্ট, নার্স ও অন্যদের সমন্বিত আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং অত্যন্ত দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক নতুন ও পুরোনো রোগীর চাপের তুলনায় কম সংখ্যক চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান ও নার্স নিয়ে হিমশিম অবস্থা তৈরি হয়। পাশাপাশি সীমিত যন্ত্রপাতি, যানবাহন এবং আর্থিক সক্ষমতার মধ্যে এই চ্যালেঞ্জ আরও প্রকট আকার হয়ে ওঠে।
প্রতিবেদনে দেওয়া প্রস্তাবগুলো হলো-বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও আন্দোলনে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত সব রোগীকে বাকি জীবনের জন্য বিনামূল্যে সেবা দেওয়া নিশ্চিত করা। এছাড়া চিকিৎসা প্রত্যয়ন সনদ দেওয়া, যা এককালীন আর্থিক সাহায্যের চেয়ে কার্যকরী হতে পারে। চোখ হারানো রোগীদের আজীবন ভাতা দেওয়া। পাশাপাশি আংশিক দৃষ্টিশক্তি হারানোদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
এদিকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ভবিষ্যতে এ ধরনের জাতীয় সংকট মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জনে করণীয় সম্পর্কে ৮টি সুপারিশ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, চিকিৎসা সরঞ্জামের উন্নতি, মানবসম্পদ বৃদ্ধি, জরুরি সংকট ব্যবস্থাপনা ইউনিট গঠন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সক্ষমতা বাড়ানো, রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা, চক্ষু প্রতিস্থাপন ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন এবং রোগীদের চিকিৎসা প্রত্যয়ন সনদ দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
সার্বিকভাবে হাসপাতালটির উন্নয়নে আরও ১৩টি সুপারিশ দিয়েছে আইএমইডি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-মূল ভবনে নকশা অনুযায়ী বেজমেন্ট ফ্লোরো স্টোর থাকার কথা থাকলেও সেখানে সব সময় পানি জমে ধাকছে। ফলে মালামাল যেমন রাখা যাচ্ছে না, তেমনই গাড়ি পার্কিংও করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলেই হাসপাতালের ভেতরে পানি ঢুকে যাচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। মূল ভবনের কিচেন রুমের এক্সহস্ট ফ্যান সঠিকভাবে স্থাপন করা হয়নি। এছাড়া ওয়াশিং ইউনিট ও কিচেনের সিভিল এবং ইলেকট্রিক কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। ভবনের পঞ্চম তলায় জেনারেল ও মহিলা ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপ নেওয়া হয়েছে, যা থেকে ময়লা পানি চুইয়ে ওয়ার্ডের মেঝেতে পড়ে। ভূমি উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ থাকলেও হাসপাতালের আবাসিক ভবনের নিচে সেন্ডফিলিং করা হয়নি। আবাসিক ভবনগুলোয় পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালের ড্রেনেজ ও আবর্জনা ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নিম্নমানের। এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
Publisher & Editor