বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে: সিআইএ পরিচালক

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৬ জুন ২০২৫ |

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ বলেছেন, মার্কিন বাহিনীর হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। এসব হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছে।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রভাবকে খাটো করে দেখে মার্কিন গোয়েন্দাদের প্রাথমিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন ফাঁস হওয়ার পর সিআইএর পরিচালক এ কথা বলেন। প্রতিবেদন ফাঁসের ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন জন র‍্যাটক্লিফ বলেছেন, মার্কিন হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। যদিও তিনি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ‘পুরোপুরি নির্মূল করা হয়েছে’ বলতে অস্বীকৃতি জানান।

ফাঁস হওয়া ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মার্কিন হামলার পরও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো অক্ষত থাকার কথা বলা রয়েছে। প্রতিবেদন ফাঁস ও এটা নিয়ে ট্রাম্পের কড়া প্রতিক্রিয়ার এক দিন পর সিআইএর পরিচালক বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করলেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও দাবি করেছেন, হামলা চালিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘নিশ্চিহ্ন’ করা হয়েছে। ট্রাম্প গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে প্রতিবেদন ফাঁসের ঘটনায় সংবাদমাধ্যমগুলোকে নিয়ে বিষোদ্‌গার করেন। বলেন, ‘ভুয়া খবর’ ছড়ানো সংবাদমাধ্যমগুলো ‘মিথ্যা প্রচার করেছে এবং সম্পূর্ণরূপে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। তাদের কাছে এর কোনোটিই ছিল না’।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং অন্য সামরিক কর্মকর্তারা আজ বৃহস্পতিবার পেন্টাগনে একটি ‘আকর্ষণীয় এবং অকাট্য’ সংবাদ সম্মেলন করবেন বলেও জানান ট্রাম্প। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মহান বৈমানিকদের মর্যাদার জন্য লড়াই চালানোর বিষয়ে জানানো হবে।

এমন এক সময় মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন ফাঁসের ঘটনা জানা গেছে, যখন টানা ১২ দিনের প্রাণঘাতী সংঘাতের পর ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি কার্যকর করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা করেছেন।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে গতকাল পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে ইরানে চালানো হামলার প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি ছিল খুবই তীব্র। ধ্বংসের মতো।’

ট্রাম্প জানান, আগামী সপ্তাহে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় বসবে। ওই আলোচনায় তিনি সম্ভবত ইরানের কাছ থেকে পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি চাইবেন। যদিও ইরানের পক্ষ থেকে এখনো আলোচনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

সম্ভাব্য আলোচনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে বলেছেন, দেশগুলোর মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। গত শনিবার ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান—এ তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। অভিযানে ১২৫টি সামরিক বিমান অংশ নেয়। নতুন স্যাটেলাইট ছবিতে ফর্দোর দুটি প্রবেশপথের চারপাশে মোট ছয়টি গর্ত দেখা গেছে। একই রকমের গর্ত দেখা গেছে ইসফাহানেও। তবে ভূগর্ভে থাকা পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

গত মঙ্গলবার ফাঁস হওয়া পেন্টাগনের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ‘মাত্র কয়েক মাস’ পিছিয়ে দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, গোয়েন্দা মূল্যায়ন ‘কম আত্মবিশ্বাসের’ সঙ্গে করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, হামলার মুখে তেহরানের উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই গতকাল আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে, এটা নিশ্চিত।’ যদিও এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor