বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

ডেমোক্র‍্যাটিক প্রাইমারিতে জয়ের পথে থাকা কে এই মামদানি?

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ২৫ জুন ২০২৫ |

নির্বাচিত হলে মামদানি হবেন নিউ ইয়র্ক শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তি, যিনি দেশের সবচেয়ে বড় শহরের নেতৃত্বে আসবেন। নিউ ইয়র্ক সিটির নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে অভাবনীয় জয় পেতে যাচ্ছেন স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য জোহরান মামদানি। মাত্র ৩৩ বছর বয়সী মামদানি তরুণ ভোটারদের মন জয় করেছেন। একাধিক জনমত জরিপে এক ডজনের বেশি প্রার্থীকে ডিঙিয়ে সবার শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছেন মামদানি। সামাজিক মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক ফলোয়ার রয়েছে তার।

জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা জোহরান মামদানিকে নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মামদানির উথানের গল্প। নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হতে যাওয়া মামদানির বাবা মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্সের একজন খ্যতনামা অধ্যাপক। মামদনির মা বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মিরা নায়ার। মামদানির বাবা-মা দুজনই জন্মগতভাবে ভারতীয়।

উগান্ডার কাম্পালায় ১৯৯১ সালের ৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন মামদানি। সাত বছর বয়স থেকে বাবা-মার সাথে নিউ ইয়র্কে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি।২০১৮ সালে অ্যামেরিকার নাগরিক হন। বোডোইন কলেজে পড়ার সময় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন মামদানি। ২০১৪ সালে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং স্কুলের স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন স্টাডিজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

কলেজে থাকাকালীন তিনি ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’ আন্দোলন শুরু করেন। মামদানির রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ফোরক্লোজার প্রিভেনশন কাউন্সিলর হিসেবে। জোহরান মামদানি একজন ডেমোক্র্যটিক সোশ্যালিস্ট। ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট অব অ্যামেরিকা নামের একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের সমর্থক হিসেবে ২০১৭ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টদের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। । ডেমোক্রেটিক পার্টির অসন্তুষ্ট প্রগতিশীল অংশের সমন্বয়ে গঠিত এই দল খোলামেলাভাবে নিজেদের সোশ্যালিস্ট বা সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়।

মামদানি ২০২০ সালে কুইন্সের ৩৬তম ডিস্ট্রিক্টের নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে অ্যাস্টোরিয়া, ডিটমারস-স্টেইনওয়ে এবং অ্যাস্টোরিয়া হাইটস সহ আশেপাশের এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন।
প্রথাগত রাজনীতির বাইরে থাকা এই তরুণ এখন পর্যন্ত অনেকটাই অচেনা ছিলেন। মামদানির এই আশ্চর্যজনক উত্থানের পেছনে ছিলো সামাজিক মাধ্যমে করা তার এসব পরিকল্পনার অভিনব প্রচারণা। যা তাকে শহর জুড়ে এমন অনেক ভোটারদের কাছে পৌছাতে সাহায্য করেছে যেসব ভোটাররা কোন রাজনীতির সাথেই যুক্ত নন।

সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থক হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে বিনামূল্যে সিটি বাস ভ্রমণ, সর্বজনীন শিশুযত্ন, ফ্রিজ ভাড়া, পাইকারি মূল্যে কেনাবেচা করার জন্য শহরের মালিকানাধীন মুদিখানা এবং ৩০ ডলার ন্যূনতম মজুরির পক্ষে দাবি তুলেছেন মামদানি। কর্পোরেট করের হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করে এবং বার্ষিক ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয়কারী নিউ ইয়র্কবাসীদের ওপর ২ শতাংশ হারে কর আরোপ করে মামদানি তার পরিকল্পনার জন্য অর্থ সংস্থান করতে চান।

মামদানির প্রচারে তাকে সমর্থন দিয়েছেন কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কর্টেজ ও সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্সও। দুজনই ডেমোক্র্যাট সোশ্যালিস্ট। মামদানি গাজায় ইসরায়েলের হামলার একজন সোচ্চার সমালোচক। গাজা প্রশ্নে তিনি বরাবরই অনড়। আর তাইতো ইসরায়েল প্রশ্নে জোহরানের এই অবস্থানের কারণে নির্বাচনে জয়ী হলেও তাকে ইহুদি লবির আপত্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। নিউ ইয়র্কের এই ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিই মূলত নভেম্বরের মেয়র নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এই জয় মামদানির মেয়র হওয়ার পথ সুগম করে কি না সময়ই বলতে পারবে।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor