অভিনয়ের পাশাপাশি সময়-সুযোগ পেলেই দর্শক হয়ে খেলার মাঠে হাজির হন মৌসুমী হামিদ। তবে এবারের অভিজ্ঞতা ভিন্ন—গ্যালারিতে নয়, ব্যাট-বল হাতে মাঠে নেমেছেন তিনি। টিম টাইটানের হয়ে অংশ নিয়েছেন সেলিব্রিটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি প্রতিযোগিতায়। আগেও তারকাদের নিয়ে আয়োজিত ক্রিকেট ম্যাচে খেলেছেন, তবে এবার ব্যাপারটা যেন আরও সিরিয়াস। গত শুক্রবার খেলার মাঠের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘ক্রিকেট সব সময়ই আমার প্রিয় খেলা। আগে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতাম, চিৎকার-চেঁচামেচি করতাম। বলতাম, লেগ সাইডে মারতে পারল না! এখন বুঝি, খেলা কতটা কঠিন! এখন থেকে গ্যালারিতে বসে আর কোনো মন্তব্য করব না, সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মৌসুমীর বাবা ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা এবং নিজেও ক্রীড়ামোদী মানুষ। টেলিভিশনে খেলা দেখতেন নিয়মিত আর পাশে বসে সেই খেলা উপভোগ করতেন মেয়ে। এভাবেই তাঁর মধ্যে জন্ম নেয় ক্রীড়াপ্রেম। ‘দেখতাম, শহীদ আফ্রিদি কত কম বল খেলে হাফ সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি করে ফেলছে। শোয়েব আখতার, রিকি পন্টিং, ক্রিস গেইলের খেলা দেখে ভালো লাগত।’
মৌসুমীর বাবা শুধু খেলা ভালোবাসতেন না, নিজেও ছিলেন একজন ক্রীড়াবিদ। সেনাবাহিনীতে থাকাকালে ভলিবলে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কারও পেয়েছিলেন। পরে যশোর সেনানিবাসে কোচিং করিয়েছেন। গর্বভরে মৌসুমী বলেন, ‘আমার মনে হয়, সাতক্ষীরা অঞ্চলে ভলিবল খেলা জনপ্রিয় করতে আমার আব্বুর ভূমিকা অনেক। আব্বু-চাচারা সবাই ক্রীড়াপ্রেমী। আমাদের এলাকায় বিভিন্ন সময় টুর্নামেন্ট হতো আর মানুষ খেলাধুলার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠত। ছোটবেলা থেকেই এসব দেখে দেখে খেলাধুলার প্রতি আমার ভালোবাসা গড়ে উঠেছে।’
এই খেলাপ্রেম আজও তাঁর জীবনের বড় একটা অংশ হয়ে আছে।
‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ সিরিজের শুটিং শেষ করেছেন মৌসুমী হামিদ। অমিতাভ রেজা পরিচালিত এই সিরিজে এক মৌয়ালের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অমিতাভ রেজার সঙ্গে কাজ করার তাঁর দীর্ঘদিনের ইচ্ছা। এ সিরিজ দিয়ে সেটা পূরণ হয়েছে। একটা ফোন করা যাবে প্লিজ দেখার পর থেকেই অমিতাভ রেজার ভক্ত মৌসুমী। বললেন, ‘কাজ করে মুগ্ধ হয়েছি। আমি বলব, ওনার গল্প বলার ঢং দারুণ। অনেক সিরিয়াস টপিক অনেক মজাচ্ছলে বলে ফেলেন। ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ সিরিজে অনেক কিছু স্যাটায়ার করে বলার চেষ্টা করেছেন। চরিত্রায়ণ সুন্দর। ছোট সব চরিত্রেরও দারুণ জার্নি আছে।’
মৌসুমী হামিদের সুন্দরবনে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে অনেকবার। মৌসুমী বললেন, ‘সুন্দরবনে গিয়ে মধু সংগ্রহ যাঁরা করেন, তাঁরা আমার ভীষণ চেনা। এ কারণে চরিত্রটিতে অভিনয়ে বেশ রোমাঞ্চিত ছিলাম। যতবার সুন্দরবনে গেছি, মনে হয়েছে, সুন্দরবন এলাকার পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি সাহসী, পরিশ্রমী। আমি সাতক্ষীরার মেয়ে, আমিও নিজে বেশ সাহসী। বন্ধুরাও জানে আমার এই সাহসের কথা। তাই যে কারও কোনো সমস্যা হলে আমার কাছে ফোন আসে। কোথাও ঘুরতে গেলে সবচেয়ে সাহসী কাজটা আমাকেই করতে হয়। এবার সেই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে আমার ভালো লেগেছে।’
সামনের ঈদে আধা ডজন নাটক নিয়ে হাজির হচ্ছেন মৌসুমী হামিদ। এরই মধ্যে নাটকগুলোর শুটিং শেষ। তবে এক মাস ধরে সেলিব্রিটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অভিনয়ের বাইরে ছিলেন। এ সপ্তাহ থেকে আবার নতুন করে শুটিংয়ে ফিরছেন। বললেন, ‘অনেক ধরনের গল্পে অভিনয়ের প্রস্তাব পাই। কিন্তু সব কটিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি না। এমন চরিত্রে অভিনয় করতে চাই, যার একটা গল্প আছে, একটা যাত্রা আছে। হোক সেটা ছোট কোনো চরিত্র, তবু তাতে একটা দারুণ জার্নি থাকুক।’
গত বছরের শেষ দিকে মুক্তি পেয়েছিল মৌসুমী হামিদ অভিনীত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। পরে বেশ কিছু সিনেমার প্রস্তাব পেলেও কোনোটিতেই সায় দেননি। কারণ হিসেবে জানালেন, ‘চরিত্রের দৈর্ঘ্য আমার কাছে বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে তার শুরু, তার পথচলা আর গন্তব্য ঠিক আছে কি না। বেশির ভাগ ছবিতে দেখি, শুধু নায়ক-নায়িকা নিয়েই গল্প। অন্য চরিত্রগুলো যেন শুধু পাশে থাকতেই আসে, তাদের নিজস্ব কোনো জার্নি থাকে না। পর্দায় যত সময়ই থাকি না কেন, চরিত্রে মজা না থাকলে আমি নিজেও আনন্দ পাই না।’ চলচ্চিত্রে মৌসুমীর অভিনয় শুরু হয়েছিল অনিমেষ আইচ পরিচালিত ‘না মানুষ’ দিয়ে। যদিও ছবিটি এখনো মুক্তি পায়নি। মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি’।
সময় পেলেই সিনেমা দেখেন। সম্প্রতি ‘অ্যাডোলসেন্স’ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। ফেউ সিরিজটাও মোসুমীর ভীষণ ভালো লেগেছে। এখন ‘গুলমোহর’ দেখার অপেক্ষায় আছেন। কিছু কিছু সিনেমা মৌসুমীর কল্পনায় নতুন চরিত্র এঁকে দেয়, খুলে দেয় অভিনয়ের নতুন দিগন্ত। তেমনই একটি ছবি ‘দ্য ট্যুরিস্ট’, আট বছর আগে যেটি প্রথম দেখেন। তারপর আরও কয়েকবার দেখেছেন গল্প বলার অনন্য ঢং আর অ্যাঞ্জেলিনা জোলির অভিনয়ের জন্য। ‘জোলিকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, দেখে বুঝেছি, কীভাবে একজন শিল্পীকে পর্দায় তুলে ধরতে হয়, তারা জানে। আমারও স্বপ্ন, একদিন এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করব, যা শুধু অভিনয় নয়, শিল্প হয়ে থাকবে।’
Publisher & Editor