সোমবার, ০২ জুন ২০২৫

ভেন্যু মিউনিখ, প্রতিপক্ষ মিলানের ক্লাব—তাহলে পিএসজিরই তো জেতার কথা

প্রকাশিত: ১১:০৪, ৩১ মে ২০২৫ |

স্বপ্নের বীজ রোপিত হয়েছিল সেই ২০১১ সালে। সে বছর কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট প্রতিষ্ঠানটি কিনে নেয় পিএসজিকে। শুরু হয় মোটা অঙ্কের অর্থলগ্নি, ক্লাবটি কিনতে থাকে নামীদামি সব খেলোয়াড়। মূল লক্ষ্য ছিল একটাই—চাই ইউরোপ–সেরার মুকুট। কিন্তু কোথায় কী, ফ্রান্সের রাজারা ইউরোপে পাত্তাই পাচ্ছিল না। ২০২০ সালে ফাইনাল খেললেও ফিরতে হয় বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হারের হতাশা নিয়ে। লিওনেল মেসি, নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পের ত্রয়ী গড়েও পূরণ হয়নি স্বপ্ন।

অবশেষে এবার আবার স্বপ্ন পূরণের খুব কাছে পিএসজি। কাতারি ধনকুবেরদের ক্লাবটি আজ খেলতে নামছে আরেকটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলান। রক্ষণের জন্য বিখ্যাত ইতালিয়ান ক্লাবটির দুর্ভেদ্য দেয়াল ভেদ করে কি স্বপ্নের সোনালি ট্রফির ছোঁয়া পাবে পিএসজি?

এবার পিএসজির অনুপ্রেরণা হতে পারে তিনটি বিষয়—ম্যাচের ভেন্যু মিউনিখ, প্রতিপক্ষ ইতালির ক্লাব আর তাদের কোচের নাম লুইস এনরিকে। ১৯৯৩ সালে ফ্রান্সের ক্লাব মার্শেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইতালির মিলান শহরেরই আরেক ক্লাব এসি মিলানকে হারিয়ে। আর ম্যাচটি হয়েছিল মিউনিখের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে।

কোচ এনরিকে কীভাবে পিএসজির প্রেরণা? বার্সেলোনার সাবেক এই কোচ যে তরুণদের সমন্বয়ে প্যারিসে গড়ে তুলেছেন দারুণ এক সাহসী দল, যে দলের গড় বয়স মাত্র ২৪। ওসমান দেম্বেলেকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই দলের ভরসা হয়ে আছেন ব্র্যাডলি বারকোলা, দেজিরে দুয়ে, খিচা কাভারেস্কাইয়া ও আশরাফ হাকিমি। এ ছাড়া গোলবারের নিচে আছেন অতন্দ্র প্রহরী জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা।

এনরিকের অতীত সাফল্যও পিএসজিকে স্বপ্ন পূরণের আশা দেখাচ্ছে। ১০ বছর আগে বার্সেলোনার হয়ে ট্রেবল জেতেন তিনি। এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে পেপ গার্দিওলার পর দ্বিতীয় কোচ হিসেবে দুটি ভিন্ন দলের হয়ে ট্রেবল জিতবেন। এ ছাড়া কার্লো আনচেলত্তি, ওটমার হিজফিল্ড, ইয়ুপ হেইঙ্কেস, জোসে মরিনিও ও গার্দিওলার পর ষষ্ঠ কোচ হিসেবে দুটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতবেন এনরিকে।
এর সঙ্গে পিএসজির সমর্থকেরা আরেকটি বিষয়কেও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখতে পারেন—২০১৫ সালে এনরিকের কোচিংয়ে বার্সেলোনা যে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল, সেটির ফাইনালে একটি ইতালিয়ান ক্লাবকে (জুভেন্টাস) হারিয়েই।

সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে দারুণ ছন্দে থাকা পিএসজির কোচ এনরিকে বলেছেন, ‘আমরা জানি কেমন ফুটবল খেলতে চাই। এখন শুধু দরকার আমাদের সেরাটা উজাড় করে দেওয়া। আমরা ইতিহাস গড়তে চাই, প্যারিসের প্রথম ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চাই।’

পিএসজির যেমন তারুণ্য আছে, ইন্টার মিলানের আছে ঐতিহ্য আর অভিজ্ঞতা, সঙ্গে দুর্দান্ত একটি রক্ষণভাগ। দলটির কোচ সিমোন ইনজাগি চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি জেতেননি, কিন্তু ইন্টার মিলান এখন পর্যন্ত সাতবার চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল খেলেছে। এর মধ্যে তিনবার মাথায় মুকুট পরেছে।

সাফল্যের এই ইতিহাসের সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবেই রক্ষণের দিক থেকে শক্তিশালী ইন্টার এবারও পেয়েছে দুর্ভেদ্য এক প্রাচীর। ইন্টারের এবারের রক্ষণ কতটা জমাট, সেটা স্পষ্ট হবে দু–একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরলে। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে আটটি ম্যাচে পোস্ট অক্ষত রেখেছে তারা। সব মিলিয়ে খেয়েছে মাত্র ১১ গোল।

রক্ষণ তো ইন্টারের চিরকালীন শক্তির জায়গা। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লাওতারো মার্তিনেজের কারণে এবার আক্রমণেও দারুণ করছে দলটি। সব মিলিয়ে ৯ গোল করেছেন তিনি। এর মধ্যে শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে গোল আছে তাঁর। আজ ফাইনালে গোল পেলে চ্যাম্পিয়নস লিগের এক আসরে ফাইনালসহ নকআউট পর্বের সব ম্যাচে গোল পাওয়া ষষ্ঠ খেলোয়াড় হয়ে যাবেন তিনি।

সব মিলিয়ে মঞ্চ প্রস্তুত। এখন দেখার অপেক্ষা, মুকুট কি নতুন রাজার মাথায় উঠবে, নাকি পুরোনো বীরেরাই আবার উঠবে সাফল্য–চূড়ায়!

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor