বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

ভারত-কানাডার সম্পর্ক অবনতির নেপথ্যে যে ঘটনা

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৪১

খালিস্তানি তৎপরতাকে কেন্দ্র করে ভারত-কানাডা সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। চলতি বছরের জুনে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত, এমন অভিযোগ এনে সে দেশের এক কূটনীতিককে কানাডা সোমবার বহিষ্কার করেছে। 

পালটা ভারতও মঙ্গলবার বহিষ্কার করেছে দিল্লিতে নিযুক্ত কানাডার এক কূটনীতিককে। এই ব্যবস্থার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে।

গতকাল কানাডার পার্লামেন্টে ট্রুডো অভিযোগ করেন, হরদীপ সিংকে খুনের পেছনে ভারতের হাত থাকার নির্দিষ্ট প্রমাণ তার সরকারের কাছে রয়েছে। তাদের কাছে সেই প্রমাণ যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যও। 

ট্রুডো বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে কানাডার এক নাগরিককে এভাবে হত্যা করা, বিদেশিদের এমন প্রত্যক্ষ যোগসাজশ কানাডার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।

ওই অভিযোগের পরই কানাডায় অবস্থানরত এক ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কারের কথা জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানিয়া জোলি।

এরইমধ্যে নিজ্জরের হত্যার ইস্যুটি নিয়ে ব্রিটেন, আমেরিকার মতো জি৭ গোষ্ঠীভুক্ত ঘনিষ্ঠ দেশগুলোকে জানিয়েছে কানাডা। এই ইস্যুতে ব্রিটেন কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চায়নি সরাসরি। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকশ করেছে। 

এ নিয়ে হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, ‘আজকে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো যে অভিযোগগুলো করেছেন তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা কানাডার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। কানাডার তদন্ত এগোচ্ছে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

সম্প্রতি জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত সফরে এসে খালিস্তান ইস্যুতে মোদির কাছে কথা শুনতে হয়েছিল কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে।

মোদি ও ট্রুডো সম্মেলনের অবসরে সামান্য কিছু সময়ের জন্য কথা বলেছিলেন। সেখানেও খালিস্তানিদের প্রতি নরম মনোভাব দেখানোর অভিযোগে ট্রুডোকে বিদ্ধ করেছিলেন মোদি।

বৈঠকে মোদি বলেছিলেন, কানাডায় ভারতীয় দূতাবাসে একাধিকবার খালিস্তানিরা হামলা চালিয়েছে। 

এই অভিযোগ তোলার পাশাপাশি বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেছিলেন, তা সত্ত্বেও কানাডার সরকার কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। 

মোদি ভারতের অসন্তোষ ও অখুশির কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে বলেছিলেন, ভারতের আশা, কানাডা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ে শামিল হবে।

সেই বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে ট্রুডো বলেছিলেন, কানাডায় সবার চেতনা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার আছে। যে অধিকারকে কানাডা বিশেষ গুরুত্ব দেয়, তা কখনো খর্ব করা যায় না। তবে সরকার হিংসা ও ঘৃণা বরদাশত করে না। 

ঘরোয়া রাজনীতির সমীকরণের কথা মাথায় রেখে নিজের আগের অবস্থানেই অনড় থেকেছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। আর এরই মাঝে খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের খুনের সঙ্গে ভারতীয় সরকারি এজেন্টের যোগ আছে বলে দাবি করেন জাস্টিন ট্রুডো। এ নিয়ে নাকি কানাডা সরকার নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত সরকারের কাছে। 

জানা যায়, কানাডায় গত জুন মাসে খুন হন নির্বাসিত শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর। দেশটির সরকার ওই হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছে। এমনকি কানাডায় নিযুক্ত ‘র’ এর ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর পরই অটোয়ায় নিযুক্ত ওই গোয়েন্দাপ্রধানকে বহিষ্কার করে কানাডা।

গত ১৮ জুন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের এক শহরতলিতে হরদীপকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এটি কানাডার শিখ অধ্যুষিত এলাকা। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের পর কানাডাতেই সবচেয়ে বড় শিখ সম্প্রদায় রয়েছে। 

ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পাকিস্তানের কিছু অংশের সমন্বয়ে স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিলেন হরদীপ। ভারতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে নয়াদিল্লি। তবে এ অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

এর আগে এক বিবৃতিতে কানাডার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

তারা জানায়, কানাডার কোনো সহিংস ঘটনায় ভারত সরকারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor