শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

ভূতের বাড়ি : অশুভ রাত

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ | ৩৩

বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে একটা

পুরনো জমিদারবাড়ি ছিল। বাড়িটা এতটাই জরাজীর্ণ আর অন্ধকারে ভরা

যে গ্রামের মানুষ একে বলত ‘কালো মহল’।

লোককথা ছিল, সেই বাড়িতে নাকি একসময় জমিদারের কন্যা রত্না প্রাণ হারিয়েছিল। তার মৃত্যুর পর থেকে বাড়ির প্রতিটি কোণ অশুভ হয়ে ওঠে।

রাত নামলেই কেউ আর সাহস করে সেখানে যায় না।
কিন্তু গ্রামের কয়েকজন তরুণ এক রাতে চ্যালেঞ্জ নিল—‘ভূত বলে কিছু নেই, চল আজ রাতেই আমরা সবাই কালো মহল ঘুরে আসব।’

মধ্যরাতে হাতে টিমটিমে লণ্ঠন নিয়ে তারা বাড়ির ভেতরে ঢুকল। ভেতরটা ভিজে স্যাঁতসেঁতে, মাকড়সার জালে ঢাকা।

চারদিক থেকে শোঁ শোঁ ঠাণ্ডা বাতাস বইছে, যেন কারো অদৃশ্য নিশ্বাস তাদের ঘাড়ে লাগছে।
হঠাৎ তারা শুনতে পেল একটা মেয়ের হাহাকার করা কান্না।

লণ্ঠনের আলো কেঁপে উঠল। আর দেয়ালের ছায়াগুলো নড়ে উঠল, যেন জীবন্ত হয়ে নাচছে।

তাদের একজন সাহস করে সিঁড়ি বেয়ে উঠল। কিন্তু সিঁড়ির ধাপ ভেঙে খটাস শব্দে খুলে গেল। তার নিচে যেন এক অন্ধকার গহ্বর—যেন কারো লাল জ্বলজ্বলে চোখ তাকিয়ে আছে!

হঠাৎ ওপরের ঘর থেকে এক সাদা শাড়ি পরা মেয়ের ছায়া দেখা গেল। তার চোখ ছিল ফাঁকা, কিন্তু রক্তবর্ণ অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল।

সে মৃদুস্বরে বলল, ‘তোমরা এখানে কেন এসেছ? আমার ঘুম ভেঙে দিলে।

তরুণেরা আতঙ্কে দৌড়ে বেরোতে গেল। কিন্তু দরজা যেন নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল।

তাদের একজন আতঙ্কে চিৎকার করে বলল, ‘আমরা ভুল করেছি, আমাদের ছেড়ে দাও।’

তখন হাওয়ার ঝড়ে লণ্ঠন নিভে গেল। অন্ধকারে শুধু শোনা গেল সেই মেয়ের ভয়ানক হাসি—

‘হা...হা...হা...

এখন তো আর বেরোনো যাবে না!’

পরদিন সকালে গ্রামের লোকজন জমিদারবাড়ির সামনে ভাঙা লণ্ঠন আর ছড়ানো জুতা পেল।

কিন্তু ওই ছেলেদের কাউকেই আর পাওয়া গেল না।

লোকেরা বলে, তারা নাকি এখনো সেই বাড়ির ভেতরে বন্দি রত্নার সঙ্গে, চিরকাল।

আর মাঝরাতে যারা গ্রামের পথ দিয়ে হাঁটে, তারা শুনতে পায় ছেলেদের চিৎকার আর মেয়েটির ভূতুড়ে হাসি।

এভাবেই কালো মহল এখনো দাঁড়িয়ে আছে, ভয় আর অভিশাপের এক অন্ধকার সাক্ষী হয়ে।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor