রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

ব্রেন ক্যানসারের যে ৭টি লক্ষণ আমরা সাধারণ ভেবে এড়িয়ে যাই

প্রকাশিত: ০১:৫১, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ |

মাথাব্যথা হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মুঠোফোন কোথায় রেখেছি বা পরিচিত কারও নাম ভুলে যাওয়াও তো রোজকার ঘটনা। বেশির ভাগ সময় এসব নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। ভাবি, হয়তো কাজের চাপ বেশি, ঠিকমতো ঘুম হয়নি বা মনটা হয়তো একটু এলোমেলো। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, এসব সাধারণ লক্ষণই মাঝেমধ্যে ব্রেন ক্যানসারের মতো ভয়ংকর কিছুর ইঙ্গিত হতে পারে। তাই লক্ষণগুলোর পাশাপাশি সতর্কতাও জেনে রাখা ভালো।

শুরুতে উদাহরণ হিসেবে যেসব লক্ষণের কথা জানলেন, ব্রেন ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের শুরুতে একই রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে সমস্যা হলো, এসব লক্ষণ আর সাধারণ মাথাব্যথা বা ক্লান্তির মধ্যে পার্থক্য বোঝা সত্যিই কঠিন।

দীর্ঘদিন ব্রেন ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাজ্যের লরা স্ট্যান্ডেন। এই রোগে আক্রান্ত অনেক রোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে—রোগীরা নিজেরা প্রথম দিকে এসব উপসর্গকে গুরুত্ব দেননি।
এমনকি চিকিৎসকেরাও অনেক সময় ব্যাপারটা হালকাভাবে নিয়েছেন। ফলে রোগ শনাক্ত হতে দেরি হয়ে গেছে।

আর এই দেরি কিন্তু মারাত্মক। কারণ, ক্যানসার যত দেরিতে ধরা পড়ে, চিকিৎসাও তত জটিল ও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।

আসল সমস্যা হলো মস্তিষ্কের ক্যানসারের উপসর্গ অনেকটা আমাদের দৈনন্দিন সমস্যার মতোই। ক্লান্তি, মানসিক চাপ, মাইগ্রেন, এমনকি মেনোপজের সময়ের সমস্যার সঙ্গেও এর মিল আছে।

আবার অনেক সাধারণ রোগের লক্ষণও প্রায় একই রকম। যেমন দুশ্চিন্তা, সাইনাসের সমস্যা বা দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা।

যখন লক্ষণগুলো অস্পষ্ট আর হালকা থাকে, তখন সেসব উপেক্ষা করা সহজ হয়ে যায়। নিজের মনেই নানা যুক্তি খুঁজে নিই আমরা। তাই অনেকে অপেক্ষা করেন আর ভাবেন, দেখা যাক, সমস্যাটা কত দূর গড়ায়।

অনেকে ব্রেন ক্যানসার হওয়ার দুই-তিন মাস আগে থেকেই লক্ষণ টের পান। কিন্তু সাধারণ সমস্যা ভেবে তা উড়িয়ে দেন। এতে সমস্যা আরও জটিল হয়ে যায়।

এবার জেনে নিই সেই ৭টি সমস্যা সম্পর্কে, যেসব আমরা সাধারণ সমস্যা ভেবে উপেক্ষা করি। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, এসব লক্ষণের মধ্যে একটা বা দুটো থাকলেই যে কারও ব্রেন ক্যানসার হয়েছে, তা কিন্তু নয়। তবে কোনো সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে থাকলে কিংবা একদম অস্বাভাবিক মনে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

১. কথা খুঁজে না পাওয়া
অনেকে হঠাৎ করে নির্দিষ্ট শব্দ মনে করতে পারেন না। পুরো বাক্য বলতে গেলে আটকে যান। কথোপকথনে অংশ নিতে গেলে একটু দেরি হয়।

শব্দ খুঁজে না পাওয়ার সমস্যা অবশ্য ক্লান্তি, মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণেও হতে পারে। কিন্তু যদি এই সমস্যা দীর্ঘদিন থাকে, কিংবা হঠাৎ করে শুরু হয়, তাহলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার।

২. মানসিক ধোঁয়াশা
অনেকের মনে হয়, যেন মাথার ভেতর কুয়াশা জমে আছে। মনোযোগ দিতে পারছেন না, পরিষ্কার করে ভাবতে পারছেন না, কিছু মনে থাকছে না। ফলে রোগ ধরা পড়তে আরও দেরি হয়ে যায়।

এই মাথার ঘোলাটে ভাব অবশ্য অনেক কারণেই হতে পারে। মেনোপজ, ঠিকমতো ঘুম না হওয়া কিংবা মানসিক চাপ। কিন্তু যদি এই ঘোলাটে ভাবের সঙ্গে আরও কিছু স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়, যেমন কথা বলতে বা দেখতে সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।

৩. শরীর অবশ হয়ে যাওয়া
কারও কারও শরীরে ঝিনঝিন অনুভূতি হয় বা অবশ লাগে। এই সমস্যা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর হতে পারে। কারও কারও শরীরের শুধু একপাশেই এটা হয়। মস্তিষ্কের যে অংশ শরীরের বিভিন্ন স্থানে সংকেত পাঠায় আর নেয়, সেখানে ক্যানসার হলে এমনটা হতে পারে।

অবশ্য দেহ অবশ লাগার আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন স্নায়ুতে চাপ পড়া, রক্ত চলাচলে সমস্যা, কিংবা মাইগ্রেন। কিন্তু যদি নতুন করে এমন সমস্যা শুরু হয়, বিশেষ করে শরীরের শুধু একপাশে ঝিনঝিন করে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসক দেখানো উচিত।

৪. দৃষ্টিশক্তির সমস্যা
দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তনও একটি প্রাথমিক লক্ষণ। কেউ কেউ টিভি দেখার সময় দুটি ছবি দেখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে হয়তো চশমা বদলানোর কথাই ভাবেন অনেকে। এই সমস্যায় সরল রেখা দেখতে বাঁকা লাগতে পারে।

তবে দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন চোখের ক্লান্তি বা মাইগ্রেনের কারণেও হতে পারে। হঠাৎ করে যদি অস্বাভাবিক কিছু দেখা দেয়, বিশেষ করে যদি মাথাব্যথা, মাথা ঘোরার মতো অন্য স্নায়বিক সমস্যাও থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৫. অগোছালো হাতের লেখা
অনেকে বলেন, তাঁদের হাত ও চোখের সমন্বয় বদলে গেছে। কেউ কেউ লিখতেই পারেন না। হাত ও চোখের সমন্বয়ে ছোটখাটো পরিবর্তন অবশ্য ক্লান্তি বা মনোযোগের অভাবেও হতে পারে।

তবে ভারসাম্যে ক্রমাগত অবনতি ঘটলে সেটা মস্তিষ্কের যে অংশ শরীরের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানকার সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

৬. ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন
আচার-আচরণ বা মেজাজে পরিবর্তনের ব্যাপারটা সূক্ষ্ম, তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। খিটখিটে মেজাজ কিংবা কাজে অনাগ্রহ হয়তো অতিরিক্ত কাজের চাপের ফল। জীবনের পরিবর্তন বা মানসিক চাপের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিত্বে ওঠানামাও স্বাভাবিক।

কিন্তু যদি হঠাৎ করে বা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন আসে এবং ওপরের লক্ষণগুলোও দেখা দেয়, তাহলে তা আরও গভীর কিছুর ইঙ্গিত হতে পারে।

৭. মাথাব্যথা
মাথাব্যথা খুবই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু অনেকের মাথাব্যথা একটানা হয় এবং তা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। এভাবে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে চললে এবং প্রায় প্রতিদিনই মাথাব্যাথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আশার কথা হলো, নতুন কিছু পদ্ধতি চিকিৎসকদের আগে থেকেই ব্রেন ক্যানসার শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে। এর মধ্যে আছে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা।

এর সাহায্যে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ আর ভাষার দক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়। এ ছাড়া আছে লিকুইড বায়োপসি, অর্থাৎ রক্ত পরীক্ষা করে ক্যানসারের ডিএনএর অংশ খুঁজে বের করা।

ব্রেন ক্যানসারের লক্ষণ এতটাই বৈচিত্র্যময় এবং দৈনন্দিন সমস্যার সঙ্গে এতটাই মিলে যায় যে রোগ নির্ণয় করা সত্যিই কঠিন। বেশির ভাগ সময় এখানে যেসব লক্ষণের কথা বলা হলো, সেসবের সঙ্গে ক্যানসারের কোনো সম্পর্কই থাকে না।

কিন্তু যখন অস্বাভাবিক সব পরিবর্তন একসঙ্গে দেখা দেয়, কিংবা অপ্রত্যাশিতভাবে বেশি দিন থাকে, তখন সেসব উপেক্ষা করা উচিত নয়।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor