সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

এই পাখিরা অন্য রকম

প্রকাশিত: ০৭:১২, ০৭ নভেম্বর ২০২৫ | ২৩

তোমরা কি জানো, পাখিরও ছাতা আছে? রোদ বা বৃষ্টিতে আমরা ছাতা মেলে যাই। কিন্তু ওই জলচর পাখি ছাতা মেলে শিকার করে। ছাতাটা থাকে তার শরীরেই। পাখিটা হলো আফ্রিকার ব্ল্যাক হেরন বা কালো বক।

বকটি পানিতে মাছ শিকার করার সময় ডানা দুটি গোল করে ছড়িয়ে এমন আদল তৈরি করে, যা দেখতে অবিকল কালো ছাতার মতো। শিকার ধরার কৌশল হিসেবে এই ছাতা তৈরি করে কালো বক। বিশেষ করে যখন প্রচণ্ড রোদ থাকে।
ডানা গোল করে ছড়িয়ে ছাতা তৈরি করায় কালো বকের দুটি সুবিধা হয়।

এক. ছায়ার মধ্যে পানিতে মাছ বা ছোটখাটো জলজ প্রাণীর বিচরণ ভালো দেখতে পায়। অন্যদিকে মাছগুলো শীতল জায়গায় আরামে থাকার জন্য ওই ছায়ার মধ্যে চলে আসে। আর তখনই ঘপাৎ!
শুধু এই কালো বক নয়, এমন আরো অনেক পাখি আছে, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে যারা ভিন্ন কৌশল বেছে নেয়। গড়পড়তা অন্য সব পাখির সঙ্গে এসব কৌশল মেলে না।

স্যান্ডগ্রাউস পাখি বাস করে শুষ্ক এলাকায়। ছোট ছোট বীজ খেয়ে জীবন ধারণ করে তারা। শুকনা আর শক্ত বীজে কি আর পানি থাকে? কিন্তু জীবন বাঁচাতে পানি তো পান করতে হবে। এ জন্য রোজ পানির খোঁজে বেরোয় তারা। সুবিধামতো জলাশয়ে গিয়ে পান করে আসে।

এদের একটা জাত বারচেলস স্যান্ডগ্রাউস। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের শুকনা এলাকায় থাকে। পুরুষ পাখিটি যখন জলাশয়ে গিয়ে নামে, মনে হবে সে মনের সুখে গোসল করছে। আসলে সে বুক আর পেটের পালকের আধারে বিশেষ কায়দায় পানি ধরে রাখে। এই পানি নিয়ে এসে ছানাদের খাওয়ায়। তাদেরও তো পানির দরকার। পাপুয়া নিউ গিনির একটা পাখি আছে—নাম ব্লু ক্যাপড ইফ্রিতা। দেখলে মনে হবে, নীল টুপি পরে আছে। পাখিটা দেখতে সুন্দর, তবে সাবধান! দুনিয়ায় হাতে গোনা যে কয়টি বিষধর পাখি আছে, সে তালিকায় এই পাখিরও নাম রয়েছে। জানলে অবাক হবে, বিষ থাকে এই পাখির পালক ও ত্বকে। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন, কেন এই সুন্দর পাখির শরীরে এমন বিষ! তবে এই বিষের উপকার তো পাচ্ছেই সে। বিষের ভয়ে পোকামাকড় তার গায়ে ওঠে না। আর শিকারি কোনো প্রাণীও পাখিটির ধারেকাছে ভিড়তে সাহস করে না।
বেশির ভাগ পাখি শস্যদানা, ফল, বীজ, পোকামাকড় এবং একদম ছোট প্রাণী ধরে খায়। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকায় হোয়াটজিন পাখি খায় গাছের পাতা। এমনকি ছোট ছোট ছানাকে গাছের পাতা চিবিয়ে থেঁতো করে খাওয়ায়।

অস্ট্রেলিয়ান মলিফাউল বলে যে পাখিটি আছে, এর মধ্যে পুরুষটি বাবা হিসেবে অতুলনীয়। বাচ্চা জন্মানোর সময় মজার কাণ্ড করে বসে সে। ঝুরঝুরে মাটি, পাতা আর ডালপালা মিলিয়ে বিশাল এক ঢিবি তৈরি করে। সেখানে ডিম পাড়ে স্ত্রী পাখি। পুরুষটি এবার ডিমগুলো ঢেকে দেয়। ভেতরে তাপমাত্রা ঠিক আছে কি না—রোজ সে ঠোঁট ঢুকিয়ে পরীক্ষা করে। যদি সে মনে করে, আরেকটু শীতল রাখতে হবে, তাহলে ঢিবি থেকে পরিমাণমতো মাটি সরিয়ে দেয়। আর যদি মনে করে আরেকটু ওম দরকার, তাহলে আরো কিছু মাটি সেখানে যোগ করে।

আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে এক ধরনের উইভার বার্ড বা বয়নকারী পাখি আছে, এক ধরনের বাবুই পাখি আর কি, যারা ঘাস আর লতাপাতা দিয়ে বুনে বিশাল এক কলোনি গড়ে তোলে। তাদের কলোনিতে ছোট ছোট কোটরে সব মিলিয়ে কয়েক শ পাখি বাস করে। পুরো কলোনির ওজন দাঁড়ায় এক টনের বেশি। ওদের এই বাসা এত আরামদায়ক যে মাঝেমধ্যে একই আকৃতির অন্য পাখি এসেও সেখানে জায়গা করে নেয়।

মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর পাখি নর্দান জাকানা। জলজ পাখিটির পা দুটি যেমন লম্বা, তেমনি সরু। লম্বা লম্বা আঙুলও বেশ সরু। এতে শরীরের ওজন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পদ্মপাতার মতো জলজ লতাপাতার ওপর অনায়াসে হাঁটতে পারে ওরা।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor