বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত একটি অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টি-প্রোটোজোয়াল ওষুধ মেট্রোনিডাজল। সাধারণত আমাশয়, জরায়ুর সংক্রমণ, দাঁতের সংক্রমণসহ অ্যানেরোবিক ব্যাকটেরিয়াজনিত নানা রোগের চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই ওষুধকে ‘পেটের রোগের ওষুধ’ ভেবে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বা অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করে ফেলেন। এই অনিয়ন্ত্রিত ও অতিরিক্ত ব্যবহার আপনার শরীরের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
অতিরিক্ত মেট্রোনিডাজল সেবনের ঝুঁকি
মেট্রোনিডাজলের নির্ধারিত ডোজের চেয়ে বেশি গ্রহণ করলে বা দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করলে কিছু গুরুতর ও অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে।
১. মারাত্মক স্নায়বিক সমস্যা
অতিরিক্ত মেট্রোনিডাজল সেবনের সবচেয়ে মারাত্মক ঝুঁকি হলো স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি। একে ‘নিউরোটক্সিসিটি’ বলা হয়। এর ফলে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি বা হাত ও পায়ে অসাড়তা, ঝিনঝিন বা তীব্র জ্বালাপোড়া।
বিরল ক্ষেত্রে এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে ঝাপসা দৃষ্টি, মাথা ঘোরা, কাঁপুনি এবং গুরুতর ক্ষেত্রে খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে, যা এনসেফালোপ্যাথি নামে পরিচিত।
শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা হওয়া বা হাঁটার সময় মাথা ঘোরে বা চক্কর দেয়।
২. অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী
মেট্রোনিডাজল একটি অ্যান্টিবায়োটিক। অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত পরিমাণে এটি সেবন করলে জীবাণুরা এই ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বা রেজিস্ট্যান্স গড়ে তোলে। ফলে ভবিষ্যতে যখন আপনার এই ওষুধ সত্যিই প্রয়োজন হবে, তখন ওষুধটি আর কাজ করবে না, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি।
৩. লিভারের ক্ষতি ও জন্ডিস
অতিরিক্ত ডোজ লিভারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। লিভারের সমস্যা হলে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যেতে পারে, যা জন্ডিসের লক্ষণ। এ ছাড়া শরীরের অন্যান্য তন্ত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
৪. অ্যালকোহলের সঙ্গে তীব্র প্রতিক্রিয়া
মেট্রোনিডাজল সেবনের সময় সামান্য পরিমাণ অ্যালকোহলও শরীরে ঢুকলে (কিছু কিছু ওষুধে প্রয়োজনীয় মাত্রায় থাকে) তা তীব্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর ফলে বমি বমি ভাব, বমি, তীব্র মাথাব্যথা এবং বুকে ধড়ফড়ানি শুরু হতে পারে। অনেক সময় যা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৫. সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি
বেশি পরিমাণে বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, মুখে ধাতব বা টক স্বাদ এবং তীব্র মাথাব্যথা—এসব সাধারণ সমস্যাও মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
সতর্কতা
মেট্রোনিডাজল একটি জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, তবে এটিকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ডোজে এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যবহার করা উচিত। নিজের ইচ্ছামতো ওষুধের কোর্স শুরু বা শেষ করা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অতিরিক্ত মাত্রার লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা আবশ্যক।
Publisher & Editor