গলব্লাডার বা পিত্তথলি বিপাক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যকৃতে উৎপন্ন পিত্তরস পিত্তথলিতে সঞ্চিত ও ঘনীভূত হয়ে জমা থাকে। আমরা খাবার গ্রহণ করার পর, বিশেষত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার সময় পিত্তথলি সংকুচিত হয়ে সেই পিত্তরস ক্ষুদ্রান্ত্রে নিঃসরণ করে। এতে চর্বি হজম ও শোষণ সহজ হয়। তবে পিত্তথলিতে পাথর, প্রদাহ বা সংক্রমণ হলে অনেক সময় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এটি অপসারণ করতে হয়। তখন পিত্তরস আর সঞ্চিত ও ঘনীভূত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে বের হতে পারে না; বরং লিভার বা যকৃত থেকে সরাসরি অন্ত্রে প্রবাহিত হয়।
পিত্তথলির অস্ত্রোপচারের পর প্রথম দিকে, বিশেষত প্রথম ছয় থেকে আট সপ্তাহ খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন। এই সময়ের মধ্যে শরীর ধীরে ধীরে নতুন পিত্ত নিঃসরণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করে। এরপর ক্রমে স্বাভাবিক হজম ও পুষ্টি শোষণের প্রক্রিয়ায় ফিরে আসে। তবে ব্যক্তিভেদে খাদ্যের সহনশীলতা ভিন্ন হতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস হতে পারে যেমন
● অস্ত্রোপচারের পর প্রথম চার থেকে আট সপ্তাহ কম চর্বিযুক্ত খাবার খেতে হবে। মাছ, চামড়াহীন মুরগির মাংস, কম চর্বিযুক্ত দুধ ও দই খাওয়া যেতে পারে। শরীরের যে ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা, তা মেটাতে ইলিশ, চর্বিযুক্ত ও সামুদ্রিক মাছ, তিল, তিসি, সূর্যমুখী বীজ, বাদাম, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল খাওয়া যেতে পারে।
● একসঙ্গে বেশি খাবার না খেয়ে দিনে চার থেকে পাঁচবার ছোট ভাগে খাওয়া উচিত। এতে পিত্তরসের ধীর প্রবাহ হজমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করে, ফলে পেটফাঁপা ও বদহজম কমে।
● খাবারে ধীরে ধীরে খাদ্য আঁশ বৃদ্ধি করতে হবে। শুরুতে হঠাৎ বেশি আঁশ খেলে পেটব্যথা হতে পারে। শুরুতে সেদ্ধ শাকসবজি ও নরম ফল দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে ওটস, খোসাসহ ফল, পাতাশাক, ভুসি, দানা ইত্যাদি যোগ করা ভালো।
● কিছু কিছু খাবার (যেমন ডিমের কুসুম, লাল মাংস, অতিরিক্ত ঝাল ইত্যাদি) কিছু রোগীর ক্ষেত্রে হজমে সমস্যা করে। সে ক্ষেত্রে একটি
ফুড ডায়েরি রাখলে অস্ত্রোপচারের পর বিভিন্ন খাবারে ব্যক্তিগত সহনশীলতা বোঝা সহজ হয়।
● খাদ্য গ্রহণের পর হালকা হাঁটাহাঁটি, সারা দিনে পর্যাপ্ত পানি পান, ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাবার খাওয়া, নিয়মিত প্রোবায়োটিক–সমৃদ্ধ খাবার (যেমন দই) ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
●অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত মাংস, অতিরিক্ত ঘি-মাখন, মেয়োনিজ, হাই ফ্যাট সসেজ, পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুধ ও ক্রিম, মাংসে দৃশ্যমান চর্বি, অতিরিক্ত ক্যাফেইন, অতিরিক্ত ঝাল-মসলা ও তৈলাক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, কার্বোনেটেড বেভারেজ ইত্যাদি হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই এগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো।
Publisher & Editor