রোজকার জীবনযাপনের মধ্যে যেকোনো সময়ই একজন নারী তাঁর স্তনে যেকোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ করতে পারেন। সুস্থতার চর্চায় সব নারীর জন্যই প্রতি মাসে একবার নিজের স্তন পরীক্ষা করা জরুরি। কৈশোরেই এ পরীক্ষার নিয়মকানুন শিখে নিয়ে নিয়মিত চর্চা করা প্রয়োজন। এ পরীক্ষার সময় স্তন ও বগলের গোটা ধরা পড়ে সহজে। অর্থাৎ ক্যানসার থাকলে প্রাথমিক পর্যায়েই তা ধরা পড়ে।
শুরুতেই ভয় নয়
স্তনে চাকা বা গোটাজাতীয় কিছু দেখা দিলে আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়তে পারেন যে কেউ। অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারেন।
তবে চাকা বা গোটাটি এতটা ভয়ের বিষয় না-ও হতে পারে। তাই মাথা ঠান্ডা রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চাকা বা গোটা কেন হতে পারে, আনুষঙ্গিক আরও কী কী বিষয় খেয়াল করতে হয়, সে সম্পর্কে জানা থাকা ভালো।
খেয়াল করুন এসব বিষয়
স্তনের একটা গোটা বড় বা ছোট হতে পারে। গোটাটি শক্ত বা নরম ধরনের হতে পারে। তাতে ব্যথা থাকতে পারে, না-ও থাকতে পারে। ব্যথা থাকলে খেয়াল করুন, মাসিক চক্রের সঙ্গে এই ব্যথার সম্পর্ক আছে কি না।
তবে কেবল চাকা বা গোটাই লক্ষণীয় বিষয় নয়। বরং চাকা বা গোটা অনুভব করলে স্তনের আকার-আকৃতি, স্তনের ত্বক ও স্তনবৃন্তও ভালোভাবে খেয়াল করুন। বগলে কোনো চাকা বা গোটা আছে কি না, তা–ও দেখুন। কোনো সমস্যা না থাকলেও যখন নিয়মমাফিক নিজের স্তন পরীক্ষা করা হয়, তখনো এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। স্তনে গোটা না থাকলেও বগলে গোটা থাকতে পারে।
কোনো রোগের উপসর্গ হিসেবে স্তনের ত্বক কুঁচকে যেতে পারে। স্তনবৃন্ত ভেতরের দিকে ঢুকে যেতে পারে। স্তনবৃন্ত থেকে অস্বাভাবিকভাবে কিছু নিঃসৃত হতে পারে। এমনকি সেখান থেকে আসতে পারে রক্তও।
ক্যানসার না হলেও গোটা হয়
স্তনের একটি গোটা হতে পারে একটি সাধারণ সিস্ট। সিস্ট হলো তরলে পূর্ণ ছোট্ট একখানা থলির মতো জিনিস।
ফাইব্রোঅ্যাডেনোমা বা সাধারণ টিউমারেও স্তনে গোটা অনুভব করেন রোগী।
ফাইব্রোসিস্টিক ডিজিজ হলো স্তনে বয়সজনিত একধরনের পরিবর্তন। এ ক্ষেত্রেও চাকাজাতীয় কিছু অনুভব করতে পারেন একজন নারী।
স্তনে সংক্রমণ হয়ে পুঁজ জমা হলে সেটিও একটা গোটার মতো মনে হতে পারে। এর নাম অ্যাবসেস।
স্তনে অতিরিক্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম জমা হলেও গোটা অনুভূত হতে পারে।
তবে অবহেলার সুযোগ নেই
চাকাটি শক্ত নাকি নরম, চাকাটি নড়াচড়া করে নাকি করে না, ব্যথা আছে নাকি নেই—এমন নানা বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে নিশ্চিত হবেন চিকিৎসক। তবে গুগল বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় অনেকেই বাড়িতে নিজে নিজে এসব বিষয়ের কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। অনেকে আবার ভুক্তভোগী অন্য নারীর লক্ষণের সঙ্গে নিজের লক্ষণকে মিলিয়ে দেখতেও চেষ্টা করেন।
তবে এমনটা করা উচিত নয়। কারণ, এতে চাকাটির ধরন সম্পর্কে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। অকারণ আতঙ্কও তৈরি হতে পারে, আবার ক্যানসারকে সাধারণ বিষয় হিসেবে অবহেলা করা হয়ে যেতে পারে।
অথচ ক্যানসার যত দ্রুত ধরা পড়ে, তা নিরাময় করা তত সহজ হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শরীরের ওপর প্রভাব থাকে কম, চিকিৎসার ব্যয়ও হয় তুলনামূলক কম। বুঝতেই পারছেন, স্তনে যেকোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই কেন একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
Publisher & Editor