শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

থাইরয়েডের সঙ্গে হতাশা ও বিষণ্নতার কী সম্পর্ক

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ | ২৪

হতাশা, মানসিক অবসাদ, বিষণ্নতা, অতিরিক্ত রাগ বা খিটখিটে মেজাজ—এসব অনুভূতি আমাদের জীবনেরই অংশ। তবে অনেক সময় এসব মানসিক পরিবর্তনের পেছনে শারীরিক কারণও থাকতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো থাইরয়েডের সমস্যা।

থাইরয়েডের ধরন
থাইরয়েড গ্রন্থির কাজের অস্বাভাবিকতা সাধারণত দুই রকমের হতে পারে—
১. হাইপোথাইরয়েডিজম: এ অবস্থায় থাইরয়েড হরমোন ‘থাইরক্সিন’-এর মাত্রা কমে যায়, কিন্তু টিএসএইচ হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
২. হাইপারথাইরয়েডিজম: এখানে থাইরয়েড হরমোন টি৩ বা টি৪, কিংবা উভয়ের মাত্রা বেড়ে যায়, আর টিএসএইচের মাত্রা কমে যায়।
রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর ইতিহাস, শারীরিক লক্ষণ, গলার থাইরয়েড ও লিম্ফ নোড পরীক্ষা, ওজন, রক্তচাপ, চোখ, ত্বক, হৃৎস্পন্দন, রিফ্লেক্স, ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করা হয়। প্রয়োজনে থাইরয়েডের অটোইমিউন অ্যান্টিবডি পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাম, সুই দিয়ে এফএনএসি, রেডিওনিউক্লিয়ার ইমেজিংসহ বিভিন্ন হরমোন পরীক্ষাও করা হয়।

মানসিক প্রভাব
হাইপোথাইরয়েডিজমে মানসিক লক্ষণ হিসেবে দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা, অবসাদ, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মনোযোগের অভাব, অতিরিক্ত ঘুম বা ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। ওজন বেড়ে যাওয়া, কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাংসপেশির ব্যথা, চুল পড়া, ত্বক শুষ্ক হওয়া এবং অনিয়মিত মাসিকের মতো সমস্যাও থাকতে পারে।

অন্যদিকে, হাইপারথাইরয়েডিজমে দেখা যায় অস্থিরতা, ঘুম না হওয়া, সারাক্ষণ উত্তেজিত থাকা, এমনকি মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা ম্যানিয়ার মতো লক্ষণ। বুক ধড়ফড়, ডায়রিয়া, ওজন হ্রাস, চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়ে যাওয়া ও মাসিকের সমস্যা হতে পারে।
উভয় অবস্থাতেই অনেকের গলায় গলগণ্ড দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা ও সতর্কতা
থাইরয়েডের ওষুধ কারও ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে লাগে, আবার কারও সারা জীবন চলতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার আগে, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে যদি সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েডিজম ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ চালিয়ে যেতে হয়।
এ ছাড়া গর্ভকালীন বা প্রসব-পরবর্তী সময়ে অনেক নারীর মানসিক পরিবর্তন, যেমন বিষণ্নতা বা সাইকোসিস দেখা দেয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে থাইরয়েড পরীক্ষা করানো জরুরি।
থাইরয়েডের ভারসাম্য বজায় রাখলে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক সুস্থতাও ফিরে আসে—তাই মানসিক পরিবর্তনকে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor