বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

মিয়ানমারে বৌদ্ধদের উৎসবে জান্তার হামলা, নিহত ৪০

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ০৮ অক্টোবর ২০২৫ |

মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের চাউং ইউ টাউনশিপে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ও সরকারবিরোধী সমাবেশে সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় থাডিংজুত পূর্ণিমা উৎসব চলাকালে।

উৎসবের আয়োজক কমিটির এক সদস্য ও এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে শতাধিক মানুষ উৎসবে ও জান্তা-বিরোধী প্রতিবাদে অংশ নিতে জড়ো হয়েছিলেন। তখন হঠাৎ আকাশ থেকে সামরিক বাহিনী বোমা ফেললে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।

নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আয়োজক কমিটির এক নারী সদস্যবলেন, ‘আমরা মানুষকে সতর্ক করেছিলাম, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক পালিয়ে বাঁচতে পেরেছিল। কিন্তু হঠাৎ একটি মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার ভিড়ের ওপর দিয়ে উড়ে এসে দুটি বোমা ফেলে।’

তিনি বলেন, ‘শিশুরা সম্পূর্ণভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। পরের দিন আমরা যখন শেষকৃত্যে অংশ নিই, তখনও মাটিতে ছড়িয়ে থাকা শরীরের টুকরো, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও ছিন্ন দেহাংশ সংগ্রহ করা হচ্ছিল।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘যখন আকাশে প্যারামোটর উড়তে দেখি, তখন মানুষ দৌড়াতে শুরু করে। আমি বলছিলাম “দৌড়াবেন না”, ঠিক তখনই দুইটি বোমা ফেলা হয়।’ তিনি জানান, ‘আমার সামনে দুই সহযোদ্ধা মারা যায়, আরও অনেকে প্রাণ হারান।’ পরদিন তিনি নিহত নয় বন্ধুর জানাজায় অংশ নিয়েছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমও নিশ্চিত করেছে যে হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ৮০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে জান্তা সরকারের কোনো মুখপাত্রের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘নৃশংস ও জঘন্য’ বলে বর্ণনা করে জানিয়েছে, এটি প্রমাণ করে মিয়ানমারের বেসামরিক জনগণ এখনো গুরুতর বিপদের মুখে রয়েছে। সংস্থাটির মিয়ানমারবিষয়ক গবেষক জো ফ্রিম্যান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো মিয়ানমারের সংঘাত ভুলে গেছে, কিন্তু সেনাবাহিনী এই নজরদারির অভাবের সুযোগ নিয়ে নির্বিচারে যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় জোট আসিয়ানকে (ASEAN) আহ্বান জানান, আসন্ন বৈঠকের আগে যেন তারা মিয়ানমার জান্তার ওপর চাপ বৃদ্ধি করে।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। গণতন্ত্রপন্থি বিদ্রোহীরা ও বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী একজোট হয়ে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে।

এদিকে সেনা সরকার আগামী ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে, যেটিকে জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা মাত্র।

বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, তারা এই তথাকথিত নির্বাচন ঠেকাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। এরই মধ্যে সেনাবাহিনী বিভিন্ন বিদ্রোহী ঘাঁটিকে অবরুদ্ধ করে নিজের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor