নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত সোমপুর মহাবিহার বা পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। পালবংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপালের (৭৮১–৮২১ খ্রি.) সময়ে নির্মিত এই বিহার একসময় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র ছিল।
পাহাড়পুর বিহারকে ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ তালিকায় যুক্ত করে। আজো সেখানে দেখা মেলে ইটের তৈরি কেন্দ্রীয় মন্দির, ১৭৭টি ভিক্ষু কক্ষ, স্নানাগার, শৌচাগার, পোড়ামাটির ফলকচিত্র এবং প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক কাঠামোর।
মন্দিরের দেয়ালে পাওয়া গেছে দুই হাজারের বেশি পোড়ামাটির ফলক। যেখানে হিন্দু ও বৌদ্ধ মূর্তি ও চিত্রকল্প খোদাই করা রয়েছে। প্রায় ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধ ধর্মচর্চার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল পাহাড়পুর। তৎকালীন সময়ে তিব্বত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমার থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে ধর্মচর্চা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য আসতেন।
বিহারের মূল বেষ্টনী ৯২২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৯১৯ ফুট প্রস্থের। ভেতরে রয়েছে একটি বিশাল মন্দির, যার উচ্চতা প্রায় ৭০ ফুট। বিহারের বাইরের দিকে রয়েছে সত্যপীরের ভিটা ও সন্ধ্যাবতীর ঘাট। যেগুলো ঘিরে রয়েছে নানা জনশ্রুতি ও ইতিহাস।
১৮৭৯ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম প্রথম এই স্থাপনাটি আবিষ্কার করেন। পরে ১৯২৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বরেন্দ্র গবেষণা পরিষদ ও ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ যৌথভাবে পূর্ণাঙ্গ খননকাজ শুরু করে। ঢাকা থেকে প্রায় ২৮২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাহাড়পুর বিহারে নওগাঁ কিংবা জয়পুরহাট জেলা হয়ে সহজেই যাওয়া যায়। নিকটবর্তী জামালগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। পর্যটকদের জন্য বিহারের প্রবেশপথে রয়েছে সাধারণ মানের খাবার হোটেল।
আর নওগাঁর বিখ্যাত সন্দেশ এখানে ভ্রমণে আসা কারো মিস করা উচিত নয়।
Publisher & Editor