বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১৮৭ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল অ্যামেরিকা, কমিউনিটির করণীয় কী?

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১৮

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন ১৮৭ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশি কমিউনিটির ওপর এর প্রভাব নিয়ে অ্যাটর্নি মাহফুজুর রহমানের কাছে জানতে চেয়েছেন টিবিএন অ্যানালাইসিসের উপস্থাপক রানা আহমেদ। বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে উত্তর দিয়েছেন অতিথি। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর অভিবাসন নীতির ফলে দেশজুড়ে আতঙ্কে রয়েছেন অনথিভুক্ত অভিবাসীরা। ফেডারেল সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইস প্রতিনিয়ত অভিবাসীদের আটক করে বিতাড়ন প্রক্রিয়ায় ফেলছে। এ থেকে বাদ যাচ্ছে না বাংলাদেশিরাও।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন ১৮৭ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশি কমিউনিটির ওপর এর প্রভাব নিয়ে অ্যাটর্নি মাহফুজুর রহমানের কাছে জানতে চেয়েছেন টিবিএন অ্যানালাইসিসের উপস্থাপক রানা আহমেদ। বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে উত্তর দিয়েছেন অতিথি।

টিবিএন: বাংলাদেশের ৩০ জন বৈধ নথিপত্র ছাড়া এখানে বসবাস যারা করেছেন, তাদেরকে ডিপোর্ট করা হয়েছে এবং আগেও করা হয়েছে। এ নিয়ে সর্বমোট ১৮৭ জনকে ডিপোর্ট করা হলো আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষজনকে। এই ক্ষেত্রে আমি আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন রাখতে চাই যে, এই ধরনের যে ডিপোর্টেশন যে আইস কর্তৃক, আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বা আইনগতভাবে যাদেরকে পাঠানো হয়েছে বা এদেরকে ধরে পাঠানো হয়েছে, কীভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করবেন আপনি এবং দুই হচ্ছে যে, আইসের এই ডিপোর্টেশন কার্যক্রমে ভুক্তভোগীরা কী যথাযথভাবে আইনগত অধিকার পাচ্ছেন কি না বা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারছেন কি না, নাকি তাদের মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতার অভাব রয়েছে? এই প্রশ্নগুলো আপনার কাছে থাকবে এবং আলোচনার মধ্য দিয়ে আরও হয়তো অনেক প্রশ্নই মাথায় আসবে। তখন তো সেগুলো করবই।

আপাতত এটুকুই আমরা জানতে চাই, এই ধরনের ডিপোর্টেশন আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে কী ধরনের প্রভাব বিস্তার বা কী ধরনের প্রভাব ফেলছে।

মাহফুজুর রহমান: ডিপোর্টেশনের যে প্রক্রিয়া, এটি আসলে অনগোয়িং (চলমান) প্রসেস, যা বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বলছে যে, তারা অবৈধ যারা নন-সিটিজেন আছে, সবাইকে তারা ডিপোর্ট করবে…তো সেই ক্ষেত্রে এই সরকার কিন্তু প্রথমে বলেছিল যে, যারা মারাত্মক অপরাধের সাথে জড়িত, তাদেরকে তারা প্রায়োরিটি দেবে, কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যে, তারা কিন্তু ইন জেনারেল অপরাধীদের সাথে সাথে যারা কিনা ইমিগ্র্যান্ট, যাদের কিনা কোনো স্ট্যাটাস নেই, অবৈধ, আনলফুল, কাগজপত্র নেই, যাদের এখানে থাকার কোনো রাইট নেই, তাদেরকেসহ তারা ডিপোর্ট করছে এবং পরবর্তীতে আমরা আরেকটি নিউজ দেখতে পাই, যেটি হচ্ছে হোয়াইট হাউসের যে চিফ অব স্টাফ যে ছিল, স্টিফেন মিলার, ও কিন্তু বলে দিয়েছে যে, এভরি মান্থ থ্রি থাউজ্যান্ড আপনার অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়ন করতে হবে। সেইটার কিন্তু একটা টার্গেট রয়ে গিয়েছে।

সে জন্যই তারা কোর্টের করিডোরে এবং যেখানে যাচ্ছে, সেখান থেকে তারা চেষ্টা করছে এবং নতুন নতুন প্লেস তারা খুঁজছে যে, অবৈধ যে নন সিটিজেন, তাদেরকে ধরে ডিপোর্ট করার জন্য। আর আমাদের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিকরাও কিন্তু এখানে আনলফুল প্রেজেন্স অনেকে আছে এবং যারা কিনা সঠিকভাবে তাদের কেইস প্রেজেন্ট করতে পারেনি।

কারণ অ্যামেরিকাতে যখন একটা লোক আসে, কোনো না কোনো ইমিগ্রেশনের রিলিফ কিন্তু থাকে এবং আমাদের ইমিগ্রেশন লটা এমনভাবে ডিজাইন করা, যারা এ দেশে আসে এবং যদি প্যারাসুট দিয়েও কেউ এখানে ল্যান্ড করে, কথার কথা, তারপরেও কিন্তু সে মনে করেন একটা রিলিফ চাইতে পারে, যদি তার প্রবলেম থাকে দেশে। অ্যাসাইলাম যে শব্দটা, সেটা কিন্তু চাইতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায় যে, যারা তাদের অ্যাসাইলাম বলেন অথবা অন্য যেকোনো, তাদের ইমিগ্রেশন রিলেটেড যে রিলিফ, মানে তারা যে এখানে বৈধভাবে থাকার যে অধিকার, সেটা যদি সঠিকভাবে প্রেজেন্ট করতে না পারে এবং সঠিক সময়ে করতে না পারে, সে ক্ষেত্রে কিন্তু এ রকম একটা দুঃখজনক সিচুয়েশনে পড়তে পারে। আমি খুব একটা বাস্তব এগজাম্পল দেব। বেশ কিছুদিন আগে আমার অফিসেই একটা ক্লায়েন্ট আসছিল। সে মিশিগানে থাকত।

ইমেগ্রেশন কোর্টে ওর কেইসটি ডিনাই হয়েছে প্রথমে। সেটা আমরা রিপ্রেজেন্ট করি নাই। পরবর্তীতে ওর একটা আপিল করার কথা ছিল থার্টি ডেইজের মধ্যে আপিল সাবমিট করার কথা ছিল। ওর যে এগজিস্টিং লইয়ার ছিল ওখানকার, ওইটা কোনোভাবেই থার্টি ডেইজের মধ্যে ফাইল করতে পারে নাই।

সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক এবং ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো ওই লোকটা একটা হাজব্যান্ড, ওয়াইফ এবং তার ইউএস সিটিজেন বেবিও ছিল। সো পরবর্তীতে হলো কী? ওরা করতে পারেনি থার্টি ডেইজের মধ্যে।

যখন থার্টি ডেইজ পেরিয়ে গেছে, ও থার্টি ডেইজের পরে ফাইল করেছে। বোর্ড অব ইমিগ্রেশন আপিল সেটা রিজেক্ট করেছে।

পরবর্তীতে আইস সেটা জেনে গেছে যে, থার্টি ডেইজের মধ্যে সে আপিলে যায় নাই। তখন কিন্তু আইস তাকে কল করেছে যে, তোমার তো আপিল করা হয় নাই। তখন সাথে সাথে আমাদের অফিসে যোগাযোগ করেছিল। আমরা সাথে সাথে মোশন টু বোর্ড অব ইমিগ্রেশন আপিলে রিওপেন করি, যেটা ওই লইয়ারের যে ব্যর্থতা, সমস্ত কিছু আমরা প্রেজেন্ট করে জমা দিয়ে দিয়েছি, কিন্তু আইস যখন কল করেছে পরবর্তীতে একটা সময় দেখা গেল আইস ওই মেইন যে অ্যাপ্লিক্যান্ট, তাকে তারা ডিটেনশনে নিয়ে নিল। বলে যে নো আপিল।

মোশন টু রিওপেন তারা কেয়ার করে না। তারা তাকে অ্যারেস্ট করেছে, কিন্তু মা এবং বাচ্চাকে করে নাই। পরবর্তীতে তার সেই একই রকম দুর্ভাগ্যের একটা সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে।

এটা, এগজাম্পলটা এ জন্য দিলাম যে, আমি যেটা বলেছি যে, এই যে দুর্ভাগ্যের শিকার হচ্ছে যে, তারা ডিপোর্টেশনে…এত কষ্ট করে অ্যামেরিকায় আসছে যেকোনো কারণেই হোক, যেভাবেই হোক, আসছে। আসার পরে তারা আবার সেই একটা দুর্বিষহ ফ্লাইটে করে আবার সেই পুনরায় ওখানে ফেরত যাওয়া, তাদের জন্য অনেক রকম ক্ষতির একটা সিচুয়েশন দেখা যায়।

তো এইটা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হলো যে, সঠিক পরামর্শ এবং সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করলে কিন্তু ওই যে, অ্যাপ্লিক্যান্টটা ওর কিন্তু এই দুর্ভাগ্য, ওর এই ফ্লাইটে আসার কথা ছিল না। ওর কিন্তু থার্টি ডেইজের মধ্যে আপিল করলে কিন্তু আপিলের মেয়াদকালই তিন-চার বছর থাকে এবং পাশাপাশি ভালোভাবে আপিল করলে হয়তো তার কেইসটা পুনরায় ফেরত আসতে পারত।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor