বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫

ট্রাম্প বললেন, ‘গাজা দখল ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত’, যুক্তরাষ্ট্র বাধা দেবে না

প্রকাশিত: ০২:৪৯, ০৬ আগস্ট ২০২৫ |

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েল যদি গাজা পুরোপুরি দখলে নিতে চায়, তাহলে সেটি সম্পূর্ণভাবে তাদের নিজের সিদ্ধান্ত, এতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বাধা দেবে না।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এখন গাজার মানুষদের খাবার দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। বাকি সিদ্ধান্তগুলো ইসরায়েলই নেবে।’

ট্রাম্পের এ বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গাজা পুরোপুরি দখল করার পরিকল্পনার খবর সামনে এসেছে। ইতোমধ্যেই গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংঘাতের কারণে প্রতিদিন বোমাবর্ষণ, চরম অনাহার ও ধ্বংসের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে গাজার সাধারণ মানুষ।

ইসরায়েলি বাহিনী যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের গাজার অধিকাংশ এলাকা থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে, এখন পর্যন্ত গাজার প্রায় ৮৬ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। বসবাসযোগ্য জায়গার সংকটে পড়েছে লাখো মানুষ।

গাজায় এখনো হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি সংগঠনের হাতে কিছু ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে। পুরো গাজা দখল করা হলে তাদের জীবনের ঝুঁকি আরও বাড়বে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন অনেক বিশ্লেষক।

এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের রাজনৈতিক ও শান্তিরক্ষা বিষয়ক সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ ইয়েনচা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গাজা পুরোপুরি দখলের চেষ্টা করলে ‘বিপর্যয় নেমে আসবে’। তার মতে, আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে গাজা ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।

উল্লেখযোগ্য যে, ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করলেও এখনো আকাশসীমা, প্রবেশপথ ও জলসীমার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ফলে বাস্তবিক অর্থেই গাজা এখনো ইসরায়েলের দখলে বলে মত দিয়েছেন অনেক আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ।

এই যুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই ইসরায়েলের ডানপন্থী নেতারা গাজায় আবারও সেনা মোতায়েন এবং সেখানে বসতি স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নিজেও গাজার সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে সেখানে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ গড়ে তোলা যেতে পারে। অনেকেই তার এই মন্তব্যকে জাতিগত নির্মূলের প্রকাশ্য সমর্থন বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

বর্তমানে গাজায় ভয়াবহ খাদ্যসংকট চলছে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে শিশু। মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল প্রায় সব ধরনের ত্রাণ সহায়তা আটকে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় চালু থাকা অল্প কিছু মানবিক কেন্দ্রই এখন গাজার জনগণের বেঁচে থাকার শেষ ভরসা।

তবে এই মানবিক বিপর্যয়ের মাঝেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, গাজা নিয়ে ইসরায়েল কী করবে, সে সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র কোনো বাধা দেবে না।

সূত্র: আলজাজিরা

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor