শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দায়িত্ব অন্তবর্তী সরকারকেই নিতে হবে

কান্নায় ক্ষোভ প্রকাশ শহীদ পরিবারের

প্রকাশিত: ২০:৫১, ০৪ জুলাই ২০২৫ |

দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার, আহত যোদ্ধাদের দায়িত্ব নেওয়া ও জুলাই সনদ ঘোষণাসহ অন্তবর্তী সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন শহীদ পরিবার ও বিশিষ্ট নাগরিকরা।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত ‘অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়।

সম্মিলনে শহীদ মীর মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় ও মত আলাদা হতে পারে, কিন্তু জাতির স্বার্থে সবাইকে এক থাকতে হবে। আগামী নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। শহীদ মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাফা অভিযোগ করেন, আমাদের এক বছর কেউ মনে রাখেনি। শহীদ পরিবার এখনও স্বীকৃতি পায়নি। এখনও বিচার হয়নি।

আহত জুলাই যোদ্ধা নাহিদ হাসান বলেন, আমি যে বেঁচে আছি, এটা বোনাস। শহীদ হলে নাম নিশানা মুছে যেত।

শহীদ সানির মা রহিমা বেগম বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যেখানে আর কেউ হাসিনার মত হতে পারবে না। শহীদ রমিজের বাবা বলেন, এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান বিচারের কোন কিছুই দেখছি না। আহত ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন দাবি করেন তিনি।

শহীদ মনির হোসেনের স্ত্রী রেহানা বেগম বলেন, জুলাইর আন্দোলনের সময় তাজউদ্দিন মেডিকেলে আমার স্বামীর লাশ দেখতে পেলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিতে দেয়নি। আমাকেও গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। আজ ১ বছর হয়ে গেলেও এখনও সেই লাশ পাইনি।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাভিন মুরশিদ বলেন, শহীদ পরিবার বিচার চাইতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা এখনও হয়নি। এগুলো দুঃখজনক।

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক উমামা ফাতেমা বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় রায়েরবাজার বধ্যভূমিসহ বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞাত অনেক লাশ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। সেসব লাশের ডিএনএ প্রোফাইলিং করা না হলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হারিয়ে যাবে। এখনো ঢাকা মেডিকেলে থাকা বেশ কয়েকটি লাশে পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

দৃকের প্রতিষ্ঠাতা শহীদুল আলম বলেন, যারা এখন সরকারে রয়েছে কেউ বুক পাতেনি, কেউ গুলি খায়নি। যারা বুক পেতেছে তাদেরকে সম্মান না করলে তাদের সম্মান নিশ্চিত না করলে ইতিহাসে তারা বেইমান হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ২০২৪ সালে এদেশের মানুষ বুক চিতিয়ে এক মরণপণ লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। এদেশের রাজনীতিতে যদি এই রক্তের সাথে বেইমানি শুরু হয়, আমরা তার বিরুদ্ধে দাঁড়াব। আসছে ৫ আগস্টের আগেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি, প্রতিটি শহীদ পরিবার ও আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি জানান।

সম্মিলনে অন্যদের মধ্যে শহীদ জুলফিকার শাকিলের মা আয়েশা বিবি, শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহীদুল ইসলাম ভুইয়া, শিক্ষক হাসান আশরাফ, শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বাবা মাহবুবুর রহমান, নির্মাতা আকরাম খানশ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, আইনজীবী হুমায়রা নূর, শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো মহিউদ্দিন, শহীদ মইনুলের স্ত্রী মায়মুনা ইসলাম, শহীদ রমিজ উদ্দিনের বাবা একেএম রকিবুল ইসলাম, জুলাই যোদ্ধা আল আমিন, জুলাই যোদ্ধা মাওলানা শফিকুর রহমান সহ শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধারা বক্তব্য দেন।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor