হাড়ের গঠন থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখা—সব মিলিয়ে আমাদের সুস্থতার জন্য ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ এই ভিটামিনের স্বল্পতায় ভুগছেন! কোনো কোনো জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই ভিটামিন ডির স্বল্পতায় আক্রান্ত। এই ভিটামিনটির স্বল্পতার লক্ষণ শরীরে বিভিন্নভাবেই প্রকাশ পায়। বিশেষত ত্বক ও পায়ে। হতে পারে আপনি যেটাকে সাধারণ চুলকানি ভাবছেন, সেটি আদতে ভিটামিন ডির স্বল্পতার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দ্রুত চিহ্নিত করতে পারলে এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করে সেরে ওঠা সম্ভব। ত্বক ও পায়ে প্রকাশ পায়, ভিটামিন ডির অভাবের এমন পাঁচটি লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ক্ষত শুকাতে দীর্ঘ সময়
ভিটামিন ডির ঘাটতি আছে, এমন ব্যক্তিদের শরীরের ক্ষত শুকাতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে। ভিটামিন ডি ত্বকের কোষগুলোর পুনরুৎপাদন ও ক্ষত সারানোর ক্ষেত্রে খুবই জরুরি।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব যৌগ ত্বকের নতুন কোষ সৃষ্টি করে, ভিটামিন ডি সেসব যৌগের উৎপাদন ত্বরান্বিত করে। ত্বকের কোথাও কেটে গেলে, ছড়ে গেলে কিংবা আঁচড় লাগলে ক্ষতস্থানটি যদি সহজে না শুকায় কিংবা খুব সহজেই ত্বকে সংক্রমণের সৃষ্টি হয়, তাহলে এসব মূলত শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতির লক্ষণ।
ত্বকে চুলকানি
এমনও হতে পারে যে আপনার ত্বক চুলকাচ্ছে তো চুলকাচ্ছেই। ভেবে নিলেন নতুন কোনো স্ক্রিম বা লোশন ব্যবহারের কারণেই এ রকম হচ্ছে। তা না-ও হতে পারে। সব সময় ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকা, ক্রমাগত ত্বক চুলকানো ইত্যাদি ভিটামিন ডির অভাবের লক্ষণ।
ভিটামিন ডি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, ত্বককে বাইরের ধুলাবালু থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন ডির মাত্রা কমে গেলে ত্বক রুক্ষ্ম হয়ে যায়, ত্বক দেখতে লাগে মাছের আঁশের মতো, একজিমা–জাতীয় রোগে সহজে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ত্বক নিজে থেকে সেরে ওঠার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বিশেষ করে শরীরের যেসব স্থানের ত্বক পাতলা এবং যেসব স্থান সব সময় শুষ্ক হয়ে থাকে। তাই চুলকানি কয়েক দিন ধরে চলতে থাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
মলিন ত্বক
ভিটামিন ডির অভাবে ত্বক মলিন ও ফ্যাকাশে হয়ে যায়। স্বাভাবিক গায়ের রং ও ত্বকের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি খুবই জরুরি। ভিটামিন ডি মেলানিন উৎপন্ন করে, ত্বকের স্বাভাবিক রং ধরে রাখে, ত্বককে রাখে প্রাণবন্ত।
ত্বক মলিন হয়ে যাওয়ার লক্ষণটি সাধারণত খুবই সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে চোখে পড়ে। বিশেষ করে যাঁরা সূর্যের আলোতে কম যান কিংবা যাঁদের গায়ের রং চাপা, তাঁদের ক্ষেত্রে এসব পরিবর্তন তুলনামূলকভাবে দ্রুত চোখে পড়ে।
পায়ে ব্যথা
আপনার যদি সিঁড়ি বেয়ে কিংবা চেয়ার ছেড়ে উঠতে কষ্ট হয়, তাহলে আপনার রক্তে ভিটামিন ডির মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত। ভিটামিন ডির অভাব পায়ের বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। যেমন পায়ের হাড়ে ব্যথা, পায়ের পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া। ভিটামিন ডির তীব্র ঘাটতি দেখা দিলে পা বেঁকে যাওয়া (শিশুদের ক্ষেত্রে রিকেটস), হাড়ের গঠন বিকৃত হয়ে যাওয়াও অন্যতম সমস্যা।
পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা ও চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ানো কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। পায়ের হাড়ে, বিশেষ করে পায়ের লম্বা হাড়ে চাপ অনুভূত হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘাম
ভিটামিন ডির ঘাটতির প্রাথমিক একটি লক্ষণ হলো অতিরিক্ত ঘাম। লক্ষণটি আমরা বেশির ভাগ সময় খেয়ালই করি না। বেশির ভাগ সময়ই আমরা মনে করি, ক্লান্তির কারণে ঘাম হচ্ছে। বিশেষ করে মাথা ও হাত অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া ভিটামিন ডির অন্যতম লক্ষণ। ঘর্মগ্রন্থিগুলোর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে বলে ভিটামিন ডির অভাবে ঘর্মগ্রন্থিগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এতে অতিরিক্ত ঘাম হয়। ঘাম হওয়া খুবই স্বাভাবিক; কিন্তু অতিরিক্ত ঘামতে থাকা, বিশেষ করে শীতের দিনেও ঘেমে যাওয়া স্বাভাবিক নয়। অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘামও হলে বিষয়টি ভিটামিন ডির ঘাটতি বলে আশঙ্কা করা যায়।
কী করবেন
প্রতিদিন সূর্যের আলো গায়ে মাখুন ও নিয়মিত ভিটামিন ডি–যুক্ত খাবার খান। তারপরও ভিটামিন ডির অভাবজনিত লক্ষণগুলো শরীরে দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
Publisher & Editor