বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

আপনার সন্তানও কি কিছুই খেতে চায় না?

প্রকাশিত: ০৩:১২, ২১ জুন ২০২৫ | ১৭

শিশুসন্তান সম্পর্কে অধিকাংশ অভিভাবকের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, ‘আমার মেয়েটা/ছেলেটা কিছুই খায় না, মুখে রুচি নেই।’ ফলে অনেক সময় অভিভাবক বুঝতেও পারেন না যে তাঁর সন্তান প্রয়োজনীয় খাবার ও পুষ্টি পাচ্ছে কি না। শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের বিকল্প নেই। শিশুরা মোটামুটি কতটুকু খেলে মা–বাবা আশ্বস্ত হতে পারেন, তা বোঝা জরুরি।

ছয় মাস বয়স পর্যন্ত সব শিশু মায়ের দুধেই পুষ্টি পায়। এই সময় শিশুকে পানি দেওয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই। খেয়াল রাখতে হবে, শিশু ২৪ ঘণ্টায় ৬ বার বা তার বেশি প্রস্রাব করছে কি না। তা হলে সে প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে অভিভাবকের দুশ্চিন্তার কারণ তেমন নেই।

৬ মাসের পর থেকে শুরু হয় ‘উইনিং পিরিয়ড’। এই সময় মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার দিতে হয় শিশুকে। এটি শিশুর দাঁত গজানোর সময়। তাই এই সময় থেকেই তাকে চিবিয়ে খেতে শেখানো শুরু করা দরকার। দুই বছর বয়স পর্যন্ত অব্যাহত থাকে উইনিং পিরিয়ড।

ছয় মাস থেকে এক বছর বয়সী শিশুদের মায়ের দুধের পাশাপাশি তিন বেলা বাড়তি খাবার দেওয়া প্রয়োজন।তবে এই বয়সেও শিশুর মূল খাবার মায়ের দুধ। বাড়তি খাবারের পরিমাণটা হবে কম।

তিন বেলা খাবারের মধ্যে দুই বেলা খিচুড়ি বা নরম ভাতের মতো একটু ভারী খাবার দেওয়া যেতে পারে। বাকি এক বেলা হালকা কোনো খাবার (ফলের রস বা কলার মতো নরম ফল) দিতে পারেন। সেদ্ধ ডিম, সবজির স্যুপ বা ছোট মুরগির স্যুপও শিশুর জন্য ভালো। ডিম খাওয়ানো শুরু করার সময় কুসুম ও সাদা অংশ আলাদা করে নেওয়া যেতে পারে।

শিশুকে একেকটি খাবারে অভ্যাস করিয়ে নিয়ে কয়েক দিন পর নতুন আরেকটি খাবারে অভ্যস্ত করা ভালো। শিশুকে একসঙ্গে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করা অনুচিত। নতুন খাবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিশু একটু সময় নিতে পারে। জোর করলে শিশুর খাওয়ার প্রতি ভীতি ও অনীহা আসতে পারে।

বাজারের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানমিশ্রিত প্রচলিত শিশুখাদ্যের চেয়ে ঘরেই বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান দিয়ে সুস্বাদু খাবার তৈরি করে দেওয়া ভালো। এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে বাড়তি খাবার প্রয়োজন সারা দিনে পাঁচবার। মায়ের দুধের পরিমাণটা ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে হবে।

শিশু কোনো একটি খাবার খেতে পছন্দ না করলে সেটির পরিবর্তে একই পুষ্টিমানের অন্য কোনো খাবার দেওয়া যেতে পারে। যে শিশুটি খিচুড়ি অপছন্দ করে, তাকে নরম ভাতের সঙ্গে ডাল, সবজি, মাছ বা মাংস ভালোভাবে মিশিয়ে খেতে দিতে পারেন।

সময়ের সঙ্গে শিশুর খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। প্রথম দিকে প্রতি বেলায় স্যুপের বাটির এক–তৃতীয়াংশ পরিমাণ খাবার দেওয়া যেতে পারে। এরপর খাবারের পরিমাণ আধা বাটি, পৌনে এক বাটি এবং এভাবে এক বাটি পর্যন্ত আনা যেতে পারে।

বয়স দুই বছর হয়ে গেলে তার জন্য আলাদা করে রান্না করারও দরকার নেই। পরিবারের অন্যদের জন্য রান্না করা খাবার খাওয়ানো শেখাতে হবে। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, শিশুর খাবারে যেন বেশি তেল–মসলা না থাকে। চিনির মাত্রাও কম হওয়া জরুরি। আলুর পাশাপাশি অন্যান্য শাকসবজি খাওয়াতে হবে।

শিশু বসতে শিখলে পরিবারের সবার সঙ্গে বসে খাওয়ানোর অভ্যাস করা ভালো। এতে শিশু অন্যদের দেখে খেতে আগ্রহী হবে। মুঠোফোন দেখিয়ে বা টিভি চালিয়ে খাওয়ানো অনুচিত। এতে শিশু দীর্ঘক্ষণ খাবার নিয়ে বসে থাকবে। খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হবে।

আরেকটি বিষয় হলো, অনেক শিশুই বাইরের চিপস, চকলেট, চিকেন ফ্রাই, বার্গারের মতো ফাস্ট ফুড খাচ্ছে। কিন্তু ঘরের তৈরি ভাত, মাছ মাংস খেতে তার ভীষণ অনীহা। এতে অনেক অভিভাবক মনে করেন, শিশুর অরুচি হচ্ছে, খেতে চাইছে না। খেয়াল রাখা জরুরি যে এটা আদতে অরুচি নয়, বাইরের মুখরোচক খাবার খেয়ে তার পেট ভরে যেতে পারে, আবার এসব খাবার খাওয়ার কারণে ঘরের খাবার তার কাছে একঘেয়ে লাগতে পারে। এ ক্ষেত্রে খাবারের পদ পরিবর্তন করে অথবা ভিন্নভাবে তৈরি করে ঘরের খাবারে অভ্যাস করাতে হবে। শিশুর ভালো খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে অভিভাবকের ধৈর্যের বিকল্প নেই।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor