শিমুলের ফুলে লালে লাল হয়ে উঠেছে যাদুকাটার তীর। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন এই নদীর পাড় যেন লাল কার্পেটে রূপ নিয়েছে। ফুলের পাঁপড়ি ঘাসের জমিতে পড়ে ধারণ করেছে অপরূপ সৌন্দর্য। জানান দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। দেশের দূরদূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের আগমনে যাদুকাটা তীরের এই নিভৃত পল্লিতে যেন উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে। পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীরা সারা বছরজুড়ে অপেক্ষায় থাকেন শিমুল বাগানের এই রূপ দেখতে। শিমুল বাগানের এই মোহনীয় রূপ যেন তার সবটুকু উজাড় করে মেলে ধরেছে। আরো পনেরো দিন থাকবে এই রূপ।
তবে বৃষ্টি হলে এই ফুলের সময়কাল আরো বাড়বে। গাছে থাকা কুড়িগুলোও ফুল হয়ে ফুটবে। হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাওরে সাধারণত তিনটি ঋতুর প্রভাব দেখা যায়। শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা।
ফাল্গুন ও চৈত্রমাস হাওরাঞ্চলে অভাবকাল হিসেবেই পরিচিত। তাই ফাল্গুন মাস আসলেও এর রূপ সৌন্দর্য কখনো হাওরবাসীর চোখে পড়েনি। শত বিঘা জমিজুড়ে গড়ে ওঠা যাদুকাটা পাড়ের ‘জয়নাল আবেদীন শিমুলবাগান’ হাওরাঞ্চলে বসন্ত ঋতুর প্রভাব বাড়িয়েছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি একইসঙ্গে ফাল্গুনের প্রথম দিন। ভালোবাসা দিবস ও পহেলা বসন্ত একই দিনে হওয়ায় শিমুল বাগানে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের আগমন ঘটে। দুর্গম যাতায়াতকে সহ্য করে শিমুলবাগান এলাকায় দেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষের আগমনে নিভৃত এই হাওরাঞ্চল বিশাল উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এই উৎসবমুখর অবস্থা বসন্তের আগমনি বার্তাকে ছড়িয়ে দেয় পুরো হাওরজুড়ে। যার রেশ ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। অনলাইন ও অফলাইনে জানান দেয় আজ পহেলা ফাল্গুন, ঋতুতে বসন্ত শুরু হয়েছে। এই সময়ে যাদুকাটা নদী, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফুটে থাকা শিমুল ফুল, মেঘালয় পাহাড় ও বারেকটিলা— সব মিলে একটি মোহনীয় রূপ ধারণ করে।
শিমুল বাগানটি উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামে অবস্থিত। বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ২০০২ সালে ১ শ বিঘা জমিতে ৩ হাজারেরও অধিক শিমুলগাছ রোপণ করেন। এটিই আজ দেশের বৃহৎ শিমুলবাগান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকেই শিমুল বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করে। বর্তমানে বাগানের সবকয়টি গাছে শিমুল ফুল রক্তিম বর্ণ ধারণ করে লাল হয়ে ফুটে রয়েছে। ফেব্রুয়ারি প্রথম দিন থেকেই হাজারো পর্যটক প্রতিদিন শিমুলবাগান দেখতে আসেন।
সুনামগঞ্জ থেকে বাগানটি দেখতে আসা পর্যটক শহিদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর এই দিনে বসন্তকে বরণ করি শিমুল বাগানে। বিশাল এলাকাজুড়ে ফুটে থাকা শিমুল ফুল, যাদুকাটা নদী ও মেঘালয়ের দৃশ্য অন্যরকম সৌন্দর্য হিসেবে ধরা দেয়। আমাদের বসন্তকাল এই শিমুল বাগানকে ঘিরেই শুরু হয়।’ ঢাকা থেকে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবাইয়া আক্তার বলেন, ‘পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্রথমবারের মতো এসেছি বসন্তকে বরণ করতে। অনলাইন ও অফলাইনে পুরো বছর জুড়ে বসন্তে শিমুল বাগানের রূপ সৌর্ন্দযর প্রচারণা বাগানটি দেখার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। সবকিছু মিলে বাগানটির সৌন্দর্য অসাধারণ মুগ্ধতা ছড়ায়। বার বার আসতে চাই এখানে।’
জয়নাল আবেদীনের জ্যেষ্ঠ ছেলে ও বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাখাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাবার ভালোবাসার এই শিমুল বাগানটি আমরা নিয়মিত পরিচর্যা করে থাকি। এখানে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। চেষ্টা করছি পর্যটকদের জন্য আরো সুবিধা নিশ্চিত করার।’ তবে গেলো দুই বছরে জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এই শিমুল বাগানে বসন্ত উৎসব পালন করা হলেও এ বছর এটি হচ্ছে না। পহেলা ফাল্গুন শব-ই-বরাত হওয়ায় বসন্ত উৎসবের অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। বিশেষ দিনগুলোতে শিমুলবাগান ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ টহল থাকে।
Publisher & Editor