বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

‘লঘু স্ট্রোক’ কীভাবে বুঝবেন

প্রকাশিত: ০০:০৭, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ | ৬৩

মিনি (লঘু) স্ট্রোক বা ট্রান্সিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক (টিআইএ) হলো স্ট্রোকের পূর্বসংকেত। বেশির ভাগ মানুষই স্ট্রোকের প্রাথমিক উপসর্গগুলো সম্পর্কে জানেন না। যদি এই টিআইএ বা মাইনর স্ট্রোককে প্রথম থেকে চিহ্নিত করা যায় এবং সচেতন হওয়া যায়, তবে পরবর্তী সময়ে স্ট্রোক হওয়ার দুর্ঘটনা আটকানো যায়। তার আগে আসুন জেনে নিই স্ট্রোক কী?

মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালিতে রক্তজমাট বাঁধলে সেই অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মস্তিষ্কের সেই নির্দিষ্ট অংশে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পৌঁছায় না। এতে সেখানকার কোষগুলো মরতে থাকে। সেই অংশ আর কাজ করে না। এটি হলো স্ট্রোকের কারণ। স্ট্রোক করলে হঠাৎ অচেতন হওয়া, কাউকে চিনতে না পারা, মাথা ঘোরানো, কোনো একদিকের হাত-পা নাড়াতে না পারা, শরীরের ভারসাম্য হারানো, কথা বলতে না পারা বা কথা জড়িয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়।

স্ট্রোক একজন সুস্থ মানুষকে আকস্মিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও পরনির্ভর ব্যক্তি বানিয়ে দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ আগাম পূর্বাভাস দেয় এবং সচেতন হলে রোগটি প্রতিরোধ করা যায়। সে জন্যই মিনি স্ট্রোক বা টিআইএ শনাক্ত করা জরুরি। গবেষণার তথ্য বলছে, টিআইএ হওয়ার পরের তিন মাসের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি ২ থেকে ১৭ শতাংশ। আর টিআইএ আক্রান্ত প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ ১ বছরের মধ্যেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

টিআইএর ক্ষেত্রেও মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধে, কিন্তু তা সাময়িক। তাই কিছুক্ষণের জন্য রোগীর শরীরে স্ট্রোকের
উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর নিজ থেকে জমাট বাঁধা রক্ত তরল বা বিলীন হয়ে যায়। ফলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমে আসে উপসর্গ। উপসর্গগুলো কিন্তু স্ট্রোকের মতোই। হঠাৎ অসংলগ্ন আচরণ, চোখে ঝাপসা দেখা, কোনো দিক অবশ হয়ে যাওয়া, হাত-পা নাড়াতে না পারা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি। টিআইএর লক্ষণ ১ ঘণ্টার মধ্যেই চলে যেতে পারে, আবার কখনো ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে।

স্ট্রোক ও টিআইএ—দুই ক্ষেত্রেই কিছু অসুখ দায়ী। এগুলো হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে ক্ষতিকর চর্বির আধিক্য ইত্যাদি। এ ছাড়া পরিবারের কারও স্ট্রোকের ইতিহাস, ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি বিষয়ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক সময় মাত্র কয়েক ঘণ্টা উপসর্গ থাকে বলে টিআইএ ধরা পড়ে না। এমনকি সিটি স্ক্যান বা অন্য কোনো পরীক্ষায়ও বোঝা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা ইতিহাস নিয়ে ও শারীরিক পরীক্ষা করে বিষয়টা বুঝতে পারেন। 

টিআইএ মনে হলে ঝুঁকিগুলো শনাক্ত করতে রোগীর সুগার, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল পরীক্ষা করে দেখা উচিত। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। রক্ত তরলীকরণ ওষুধ ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। একটু সচেতন হলেই স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor