সকালে কয়েক দফা অ্যালার্মের পরও রিচার ঘুম ভাঙতে চায় না। আর ঘুম থেকে জেগে গেলেও বিছানায় আরও বেশ কিছুক্ষণ কেটে যায় ফোন স্ক্রল করে। আর সকালের ওয়ার্কআউট? সেটা আগামীকালের জন্য তোলা থাকে। যে আগামীকাল আসলে আর কখনোই আসে না।
একদিন রাতে ফোন স্ক্রল করতেই তার সামনে এল থ্রি ইনটু থ্রি ফিটনেস রুল নামে ছোট্ট একটি ভিডিও। তিন মিনিট তিন মিনিট করে তিন বারে মোট ৯ মিনিটের ছোট্ট একটি ওয়ার্কআউট।
একধরনের কৌতূহল থেকেই সেটা করে দেখার সিদ্ধান্ত নেন রিচা।
এরপর স্কোয়াট করবেন
ফোনে তিন মিনিটের টাইমার সেট করে প্রথম ধাপের স্ট্রেচিং শুরু করেন রিচা, তার মনে হয় যেন অনেক পুরোনো জং ধরা একটা দরজা খোলার চেষ্টা করছেন। তারপর স্কোয়াট এবং লাঞ্জ করেন। সবশেষের ধাপ ছিল জাম্পিং জ্যাক। যখন টাইমার বিপ বাজে তখন রীতিমতো হাঁপাচ্ছিলেন রিচা, দরদর করে ঘাম ঝরতে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা কফি না খেয়েই ঘুম ঘুম ভাব, অলসতা কেটে গিয়ে বেশ চনমনে লাগতে থাকে।
দ্বিতীয় দিন যথারীতি দেরিতে ঘুম ভাঙলে ভাবলেন আজ আর ওয়ার্কআউট করবেন না। কিন্তু যেই মনে পড়ল ওয়ার্কআউটটা মাত্র ৯ মিনিটের, আবার করে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন। এভাবে চতুর্থ দিনে তার মধ্যে শরীরচর্চাটি নিয়মিত করার ব্যাপারে একটা আগ্রহ তৈরি হলো। পছন্দের কিছু মিউজিক বাছাই করে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আয়নার সামনে শরীরচর্চা করতে লাগলেন। দুই সপ্তাহ পরে রিচা কিছু ছোট ছোট পরিবর্তন লক্ষ্য করেন।
লাঞ্জ
এনার্জি (শক্তি): রিচার নিজের কাছে নিজেকে বেশ ঝরঝরে, প্রাণবন্ত ও কর্মচঞ্চল মনে হয়। আগে যেখানে এক কাপ কফি ছাড়া ঘুম কাটিয়ে কাজে মনোনিবেশ করতে পারতেন না, এখন মাত্র ৯ মিনিটের এই শরীরচর্চা তাঁর কাজের উদ্দীপনা অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছিল।
ফোকাস বা মনোযোগ: কাজ শুরুর প্রথম থেকেই তাঁর চিন্তা ও মনোযোগ ঠিকঠাক কাজ করছিল। কাজের বিষয় ও পরিকল্পনা মাথার মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় তা এগিয়ে নেওয়া দ্রুত ও সহজ হয়।
মেজাজ: সকাল থেকেই মেজাজ ঠান্ডা রেখে কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল। অকারণে লোকজনের ওপর রেগে যাওয়া, মাথা গরম করে ফেলার প্রবণতা কম লক্ষ করা যাচ্ছিল।
ধারাবাহিকতা: নিজের মধ্য অস্থিরতা অনেক কম মনে হচ্ছিল। কাজের সঙ্গে একাগ্রভাবে লেগে থাকা, একটার পর একটা ধারাবাহিকভাবে করে যাওয়া অনেকটা সহজ মনে হচ্ছিল। রিচা জানান ওজন কমানো বা ফিট দেখানো তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। কেবল অলসতার কারণে অপরাধবোধে না ভুগে কর্মোদ্দীপনা নিয়ে সুন্দরভাবে একটা দিন শুরু করতেই এই ওয়ার্কআউট শুরু করেন।
থ্রি ইনটু থ্রি রুল সফলভাবে কাজ করার কারণ কী?
রিচা জানান, ফিটনেসের সবচেয়ে কঠিন অংশ শরীরচর্চা নয়, বরং শরীরচর্চা শুরু করা। যখন আমরা অনলাইনে ওয়ার্কআউট প্ল্যান দেখি, তখন সেগুলো বেশির ভাগ সময় ৪৫ মিনিট বা এক ঘণ্টার শরীরচর্চা বা যোগব্যায়াম হয়ে থাকে। এত দীর্ঘ সময়ের শারীরিক কর্মকাণ্ডের কথা ভেবে উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। কিন্তু বিষয়টা যখন মাত্র তিন মিনিটের হয়, তখন তা আর অতটা ক্লান্তিকর মনে হয় না।
রিচা জানান, অভ্যাসের মধ্যে আসার পর এই ৯ মিনিটের সঙ্গে তিনি মাঝেমধ্যে পুশআপ যোগ করে শরীরচর্চাটাকে আরও বেশি সময় ধরেও চালিয়ে নেন। তাঁর মতে, থ্রি ইনটু থ্রি রুল একটা ছোট্ট নিয়ম কিন্তু একটা বিরাট পরিবর্তন। যা কেবল তার সকালটাই নয়, নিজেকে দেখার ধরনটাও বদলে দিয়েছে। তাই বাড়িতে, ভ্রমণে যেখানেই থাকুক না কেন, ৯ মিনিটের ছোট্ট এই শরীরচর্চা কখনোই বাদ দেন না রিচা।
পরিশেষ রিচা জানান, এটি সম্পূর্ণই তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ওপর ভিত্তি করে লেখা। কোনো চিকিৎসা পরামর্শ নয়। স্বাস্থ্য বা জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার আগে যদি প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Publisher & Editor