শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

কী খেলে আকর্ষণীয় হয় আমাদের দেহের গন্ধ?

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২৮ নভেম্বর ২০২৫ | ১৯

আমাদের প্রত্যেকেরই একটি আলাদা ‘গন্ধ-পরিচয়’ আছে, যা আঙুলের ছাপের মতোই অনন্য। ব্যক্তিত্ব, মেজাজ, মানসিক চাপ, হরমোন, এমনকি স্বাস্থ্যের অবস্থাও আমাদের দেহের গন্ধকে প্রভাবিত করে। তবে গবেষকরা বলছেন, এসবের পাশাপাশি আমরা কী খাচ্ছি সেটিও দেহের গন্ধ এবং আমাদের আকর্ষণীয়তার বড় নিয়ামক। 

স্টার্লিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক মনস্তত্ত্বের অধ্যাপক ক্রেইগ রবার্টস বলেন, ‘গত কয়েক দশকে আমরা জেনেছি যে শরীরের গন্ধ নির্ভর করে জিন, হরমোন, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার ওপর।

নিউইয়র্কের বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিনা বেগদাচ জানান, খাবার হজমের সময় অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন রাসায়নিক ভেঙে উদ্বায়ী গ্যাস তৈরি করে, এগুলো মুখ দিয়ে বের হয়ে খারাপ শ্বাস তৈরি করতে পারে। আবার এসব রাসায়নিক রক্তে মিশে ত্বক থেকে ঘামের সঙ্গে বের হয়। ঘাম নিজে গন্ধহীন, তবে ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মিশে তা গন্ধ তৈরি করে।

সবজি, পিয়াজ, রসুনের প্রভাব 

ব্রোকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি এসব ক্রুসিফেরাস সবজিতে থাকে প্রচুর সালফার যৌগ, যা শরীরে ভেঙে তীব্র গন্ধ তৈরি করে।

রসুন ও পেঁয়াজও শরীরে গন্ধের অন্যতম কারণ—এসব খেলে শ্বাস এবং ঘামের গন্ধ তীব্র হয়। 
চেক রিপাবলিকের কার্লস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইয়ান হাভলিচেক এক গবেষণায় দেখেছেন, যে পুরুষেরা বেশি রসুন খেয়েছেন বা রসুনের সাপ্লিমেন্ট নিয়েছেন, তাদের ঘামের গন্ধ নারীদের কাছে ছিল আরও সুখকর ও আকর্ষণীয়। গবেষকদের ধারণা, রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাব শরীরকে স্বাস্থ্যবান দেখায়—আর তা গন্ধেও প্রতিফলিত হয়।

এক অস্ট্রেলীয় গবেষণা বলছে, অন্যদিকে ফল–সবজি বেশি খাওয়া পুরুষেরা বেশি ফুলেল, মিষ্টি ও ‘ফ্রুটি’ গন্ধের মালিক হন।

আর সমৃদ্ধ কারোটিনয়েড ত্বককে সামান্য হলদেটে করে তোলে, যা মুখমণ্ডলকেও আরো আকর্ষণীয় দেখায়।
মাছ-মাংসের প্রভাব

এদিকে, মাংস ও মাছ হজমের সময় অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ফ্যাট ভেঙে তীব্র গন্ধ তৈরি করতে পারে। মাছের মধ্যে থাকা ট্রাইমিথাইলঅ্যামিন অনেকের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের গন্ধ তৈরি করে। বিরল এক রোগ—ট্রাইমিথাইলঅ্যামিনিউরিয়া বা ‘ফিশ ওডর সিনড্রোম’ হলে এই গন্ধ আরও বেড়ে যায়।

২০০৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে পুরুষেরা দুই সপ্তাহ মাংসবিহীন খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেছেন, তাদের ঘামের গন্ধ নারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।

হাভলিচেক বলছেন, আমাদের বিবর্তনীয় ইতিহাসে প্রতিদিন এত মাংস খাওয়া স্বাভাবিক ছিল না।
চা, কফি, অ্যালকোহলের প্রভাব

অপরদিকে, অ্যালকোহল ভেঙে শরীর অ্যাসিট্যালডিহাইড তৈরি করে। যার গন্ধ তীব্র ‘স্টেল বুজ’–এর মতো। পানি কমে যাওয়ায় মুখে ব্যাকটেরিয়া বেড়ে খারাপ শ্বাস আরও তীব্র হয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত অ্যালকোহল পান করেন, তাদের শ্বাসে সালফার যৌগের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।

কফি ও চায়ের ক্যাফেইন ঘামগ্রন্থিকে উত্তেজিত করে, আর বেশি ঘাম ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য—ফলে গন্ধ বাড়তে পারে।

উপবাসের প্রভাব

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৮ ঘণ্টা উপবাস করা নারীদের ঘামের গন্ধ কিছুটা বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। তবে বিপরীতে, ২০১৮ সালের আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, উপবাসে শ্বাসের গন্ধ খারাপ হয়। 

তবে গন্ধ ও আকর্ষণ একেবারে সরল সমীকরণ নয়। গবেষকদের মতে, খাবারের রাসায়নিক উপাদান, হরমোন, শরীরের অবস্থা মিলিয়ে দেহের গন্ধ অত্যন্ত জটিল একটি বিষয়। 

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor