ডায়াবেটিস বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অসংক্রামক রোগ। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৫৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং এর একটি বড় অংশ কর্মক্ষম বয়সের অর্থাৎ ২০ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশেও প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যাঁদের অধিকাংশই নিয়মিত চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী। ফলে ‘কর্মক্ষেত্রে ডায়াবেটিস’ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য ইস্যু হয়ে উঠেছে।
কর্মক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের চ্যালেঞ্জ
কর্মজীবীদের মধ্যে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা, মানসিক চাপ, অনিয়মিত খাবার ও ঘুম এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব—এসব কারণ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা, ফাস্ট ফুড ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, চা বা কফির সঙ্গে অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।
এ ছাড়া অনেক কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ব্যায়াম সুবিধা বা সচেতনতা কার্যক্রমের অভাবের কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কর্মীরা প্রয়োজনীয় সহায়তা পান না। অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগী কর্মক্ষেত্রে ওষুধ খেতে বা ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে সংকোচ বোধ করেন। এর ফলে রক্তে শর্করার ওঠানামা, হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা ক্লান্তি দেখা দেয়, যা কাজের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়।
কর্মক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের প্রভাব
ডায়াবেটিসের প্রভাব শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের অর্থনীতি ও উৎপাদনশীলতার ওপরও পড়ে। নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিসের কারণে কাজে অনুপস্থিতি, মনোযোগের ঘাটতি ও স্বাস্থ্য ব্যয়ের বৃদ্ধি ঘটে। বিশ্বব্যাপী গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কর্মীদের বার্ষিক উৎপাদনশীলতার ক্ষতি বিলিয়ন ডলারে গোনা হয়।
কর্মক্ষেত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের উপায়
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কর্মক্ষেত্রকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।
স্বাস্থ্যবান্ধব নীতি প্রণয়ন: অফিস বা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্তে শর্করা ও রক্তচাপ পরিমাপের ব্যবস্থা থাকা উচিত।
শারীরিক ক্রিয়াকলাপ উৎসাহিত করা: অফিসে হাঁটার বিরতি, সিঁড়ি ব্যবহারের উৎসাহ এবং ফিটনেস কর্নার বা জিম সুবিধা কর্মীদের সক্রিয় রাখতে পারে।
পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা: ক্যানটিন বা টিফিনে কম চিনি, কম তেল ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার সরবরাহ করা উচিত।
ডায়াবেটিস সচেতনতা প্রশিক্ষণ: কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত সেমিনার, পোস্টার ও তথ্যসেবা দেওয়া প্রয়োজন।
মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা: অফিসে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও কাউন্সেলিং সেবা রাখা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
কর্মক্ষেত্রে সহানুভূতিশীল পরিবেশের প্রয়োজন
ডায়াবেটিস আক্রান্ত কর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ কর্মস্থলের ন্যায়সংগত পরিবেশ নিশ্চিত করে। ইনসুলিন গ্রহণ বা রক্ত পরীক্ষা করার সুযোগ তৈরি করা, নির্দিষ্ট বিশ্রাম সময় দেওয়া—এসব ছোট পদক্ষেপ কর্মীদের আত্মবিশ্বাস ও উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।
ডায়াবেটিস শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়, এটি কর্মজীবনের মানের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত।
তাই নিয়োগকর্তা, কর্মচারী ও নীতিনির্ধারকদের যৌথ উদ্যোগেই কর্মক্ষেত্রকে ডায়াবেটিসবান্ধব করতে হবে।
Publisher & Editor