বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

ছাদে যেভাবে কাশফুল ফোটাবেন

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ০৪ অক্টোবর ২০২৫ | ১৩

কাশফুলের সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই মেট্রোরেলে ছুটছেন উত্তরায়। দিয়াবাড়ির যেখানেই আছে সবুজ গালিচা বিছানো খোলা জায়গা, সেখানেই শান্তির সাদা পতাকা উড়িয়ে হাজির কাশফুল। কিন্তু যদি বলি বহুতল ভবনের ছাদেও এখন কাশফুল হচ্ছে, চমকে যাবেন নিশ্চয়ই! হ্যাঁ, খুব বেশি দূর যেতে হবে না, মেট্রোরেলে উত্তরা অভিমুখে যাওয়ার পথে ট্রেনের বাইরে দৃষ্টি ফেললেই চোখে পড়বে বিভিন্ন ভবনের ছাদে ফুটে আছে কাশফুল। বিশেষ করে আগারগাঁও পেরোনোর পর থেকে বেশি করে চোখে পড়বে এ দৃশ্য।

আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা মুনমুন রহমানের ছাদেও আছে কাশফুল। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কোথা থেকে কাশফুল এল আপনার ছাদে?
মুনমুন বলেন, ‘আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে কোনো এক কাশবনে বেড়াতে গিয়ে ছোট্ট একটি চারা তুলে দিয়েছিলেন আমার স্বামী। সেই থেকে প্রতিবছর কাশফুল ফুটেই চলছে আমার ছাদে।’

রাজধানীর রায়েরবাজারের বাসিন্দা কানিজ আমীন বলছিলেন, ‘আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের পাশে বেশ কিছু খালি প্লট ছিল। প্রতিবছরই ওখানে কাশফুলের দেখা মিলত। ওখান থেকে কাশফুলগাছের মূল এনে ছাদে রোপণ করেছিলাম।’ ছাদে কাশফুল ফুটিয়েছেন মাহবুবুল মালিক। বলছিলেন, ‘ফলের ক্রেটে কাশবন থেকে গোড়াসহ কাশফুলের চারা এনে রোপণ করেছিলাম। যত্ন খুব একটা লাগে না বললেই চলে। শুধু নিয়মিত পানি দিয়ে যাওয়া। তাতেই সুন্দর ফুল হয় প্রতিবছর।’

ফিরে ফিরে আসে
পুরান ঢাকার ধূপখোলা মাঠের পাশে আলেয়া মহলের বাসা। জানালেন, ‘২০১৭ সালে ফুলের টবে আপনা-আপনিই হয়েছিল কাশফুলের গাছ, ফুলও এসেছিল। পরে দেখতে দেখতে কেমন করে যেন আবার নাই হয়ে গেল!’ প্রায় একই কথা জানান বাসাবোর বাসিন্দা সৌরভ আরিফ। বলেন, ‘আমার ছাদে হয়েছিল একবার। কাশফুল উড়ে এসে নিজেই হয়েছিল ছাদে...পরে দেখি নিজ থেকেই আবার গায়েব!’

২০১৮ সালের কথা। পাশেই গ্রিন মডেল টাউন। শরৎ এলে সেখানের খালি জায়গা সব কাশফুলের দখলে থাকত। বাতাসে তুলার মতো উড়ে আসত কাশফুলের পাপড়ি। এর সঙ্গে থাকা বীজ পড়ে জন্ম নেয় কাশফুলের গাছ। এখন অনেক ভবন উঠে যাওয়ায় কাশফুলের ওড়াউড়ি আর চোখে পড়ে না তেমন।

‘ঢাকা খিলক্ষেতে আমার ছাদবাগানে ছিল কাশফুল। নদীর ধার থেকে কাশফুলগাছের গোড়া এনে রোপণ করেছিলাম বালুতে। আর তা থেকেই ফুলের দেখা পাই’—বলছিলেন খিলক্ষেতের বাসিন্দা হাবিবুল ইসলাম।

নাখালপাড়ার আয়েশা সিদ্দিকা, বলছিলেন তাঁর ছাদবাগানের কাশফুলের আগমনের কথা, ‘ছয় বছর আগে মধু সিটিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানের কাশবন থেকে কাগজে মুড়ে কিছু বালু এনেছিলাম। পরে ছাদবাগানে মাঝারি আকারের বালতির মাটিতে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। সেই বালুর সঙ্গে থাকা বীজ থেকে এখন প্রতিবছরই কাশফুলগাছ হয়।  এর ফুল বাতাসে দোল খায়। মানুষ বেড়াতে এলে ছাদে কাশফুল দেখেই মুগ্ধ হন।’

কাশফুল বিষয়ে সতর্কতা
আফতাব নগরের কাশবন থেকে গোড়াসহ কাশফুলের চারা এনে ছাদে রোপণ করেছিলেন মিরপুরের রোজি মনির। পরপর বেশ কয়েক বছর ফুলও পেয়েছেন। পরে অবশ্য অন্য গাছকে ঠাঁই দিতে গিয়ে উচ্ছেদ করতে হয় কাশফুল।

কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা রাহুল আহমেদ বলছিলেন, যেখানে কাশফুল হয়, সেখানের বেলেমাটি এনে টবে রাখলেই হলো। সেই মাটিতে থাকা বীজ বা গোড়া থেকে  প্রতিবছর কাশফুলের গাছ জন্মাবে আর ফুল ফুটবে। ফুল ফোটা শেষে গাছ মরে গেলেও শিকড় সুপ্ত থাকে। পরের বছর বর্ষায় আবার ঠিকই জেগে ওঠে কাশফুলের গাছ।

রাহুল আহমেদ একটি বিষয়ে সতর্ক করলেন, কাশফুলের পাতা ধানগাছের পাতার চেয়েও ধারালো। তাই ছাদে কাশফুল থাকলে গাছের পাতা ধরে টান দেওয়া থেকে নিজেকে যেমন বিরত রাখবেন, তেমনই শিশুদেরও কাশফুলগাছ  থেকে দূরে রাখবেন।

বীরু চৌধুরী থাকেন শেওড়াপাড়ায়। তাঁর ছাদবাগানের জুঁই ফুলের টবে এমনিতেই জন্মেছিল কাশফুলগাছের চারা। তিনি ধারণা করছেন, টবে থাকা নদীর বেলেমাটির সঙ্গে আসা কাশফুলের বীজ থেকে হয়েছে এই চারা। জুঁই ফুল বাঁচাতে সেই টব থেকে কাশফুল তুলে ফেলতে হয়। নাহলে বাড়তে বাড়তে পুরো টব ছেয়ে জুঁই ফুলকেই নাই করে দিত কাশফুল।

পুরান ঢাকার মোহাম্মদ রাজীব, মানিকগঞ্জের সেলিনা হোসেন, জামালপুরের হোসনেআরা খাতুনের মতো অনেকেই আছেন যাঁরা ফেসবুকে ছবি  ও ভিডিও ফুটেজ দিয়ে জানান দিচ্ছেন—ছাদে ফুটেছে শরতের কাশফুল।

Mahfuzur Rahman

Publisher & Editor