মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় দফায় ফিরে আসার পর থেকেই আগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একের পর এক দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করছেন। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে। অস্থিরতা দেখা দিয়েছে চাকরির বাজারে, বিনিয়োগ কমে গেছে, কমেছে ভোক্তা ব্যয়, আর শেয়ারবাজারেও চলছে চরম উদ্বেগ। খবর বিবিসির।
চলতি বছরের শুরু থেকে মার্কিন বাজারে অর্থনৈতিক আস্থার ভাটার টান স্পষ্ট। শুধুমাত্র এপ্রিল থেকে মে মাসে খুচরা বিক্রির হার কমেছে প্রায় ০.৯ শতাংশ। ২০২০ সালের পর প্রথম প্রান্তিকে ভোক্তা ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল সবচেয়ে ধীরগতির। মে মাসে ভোক্তারা তাদের ব্যয় হ্রাস করেছে, যা অর্থনৈতিক দুর্বলতার পরিষ্কার বার্তা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চাকরির বাজার স্থিতিশীল থাকলে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বাঁচতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ছাঁটাইয়ের হার কিছুটা বেড়েছে এবং বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৪.২ শতাংশে। যদিও নতুন চাকরির সংখ্যা গত বছরের গড়ের কাছাকাছি রয়েছে, তবুও দীর্ঘমেয়াদে ধীরগতির এই প্রবণতা উদ্বেগজনক।
চার্লস শোয়াব করপোরেশনের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ লিজ অ্যান স্যান্ডার্স বলেন, 'আমরা এখন এক অচলাবস্থার মধ্যে আছি। নীতিনির্ধারণের অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগ ও কর্মী নিয়োগ থেকে বিরত রাখছে।'
ট্রাম্প তার শুল্ক পরিকল্পনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, চীনের পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের আমদানির ওপর ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের কথা জানান। এ ঘোষণার ফলে ফেব্রুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার পতনের দিকে যেতে শুরু করে এবং এপ্রিলে ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণা দিলে তা আরও নেমে যায়। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১২ শতাংশ কমে যায়।
তবে পরবর্তীতে ট্রাম্প উচ্চ শুল্কের বদলে ১০ শতাংশ হার নির্ধারণ করলে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। বর্তমানে এসঅ্যান্ডপি সূচক বছরে প্রায় ৬ শতাংশ বেড়েছে। তবুও যেসব প্রতিষ্ঠান সরাসরি শুল্কের প্রভাবে পড়ে—বিশেষ করে খুচরা বিক্রেতা ও গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলো—তারা এখনও ক্ষতিগ্রস্ত।
শুল্ক আলোচনা নিয়ে হোয়াইট হাউস এখনো স্পষ্ট কোনো অবস্থান নেয়নি। তারা একবার বলছে, সময়সীমা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আবার বলছে, ট্রাম্প ‘একটি সম্ভাব্য চুক্তি’ করতে পারেন। বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা—ট্রাম্প যদি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে বাজার আবার বড় ধাক্কা খেতে পারে।
তবে ইতোমধ্যে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে একটি চুক্তি হয়েছে। এই শুল্কনীতির কারণে বছরের শুরুতে মার্কিন বাজারে পণ্যের সরবরাহে বড় পরিবর্তন এসেছে। এপ্রিল ও মে মাসে আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় কিছু পণ্যের মূল্য হঠাৎ বেড়ে গেছে, বিশেষ করে খেলনা জাতীয় পণ্যে।
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, শেষ পর্যন্ত এই শুল্কের বোঝা গড় মার্কিন নাগরিকের কাঁধেই গিয়ে পড়বে। বিনিয়োগ কৌশলবিদ লিজ বলেন, 'দেখতে গেলে মূল্যস্ফীতি এখন নিয়ন্ত্রিত মনে হলেও ভেতরের বাস্তবতা ভিন্ন। এখনই আত্মতুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই।'
আগামী ৯ জুলাই ট্রাম্পের স্থগিতকৃত শুল্ক নীতিমালার সময়সীমা শেষ হচ্ছে। মার্কিন নাগরিকেরা আশা করছেন, এরপরের সিদ্ধান্তগুলো দেশের অর্থনীতিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত না করে বরং স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে।
Publisher & Editor