তুমি কি সাঁতার জানো? যদি জেনেই থাকো, একটি কাজ করো তো। সাঁতারটা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো তো দেখি। পরে শিখবে না হয় নতুন করে! কী, আমার কথা শুনে হাসছ বুঝি? ভাবছ, কী বোকা আমি! একবার সাঁতার শিখলে কখনো ভোলা যায় না, এমনকি বুড়ো হলেও না। কিন্তু কেন আমরা সাঁতার শিখলে আর কখনোই ভুলি না? এর পেছনে আছে এক মজার কারণ।
জানোই তো, আমাদের মাথার মগজে জমা থাকে সব রকম কাজবাজের খবর। কবে কী খেয়েছিলাম, কোথায় গিয়েছিলাম, কী দেখেছিলাম, এমন সব পুরনো কথা মজুদ রাখে মগজের এক কুঠরি। নাম হিপ্পোক্যাম্পাস। আমরা যত কাজ শিখি, সেসব ও জমা রাখে।
আমাদের শেখা কাজগুলো স্মৃতি হয়ে জমা হয় হিপ্পোক্যাম্পাসে। এই হিপ্পোক্যাম্পাসের আবার দুটি ভাগ। এক ভাগে জমা হয় হালকা স্মৃতি। হালকা স্মৃতি কয়েক দিন বাদেই আবছা হয়ে যায়। মুছে যায় হুটহাট। তাই এগুলোকে শর্টটার্ম মেমোরি বা অস্থায়ী স্মৃতি বলা হয়। আরেক ভাগের স্মৃতিগুলো বেশ কড়া। অত সহজে মোছে না। জমা থাকে।
তাই এগুলোকে বলা হয় স্থায়ী স্মৃতি বা লংটার্ম মেমোরি। আমরা হাত-পা নেড়ে যে কাজগুলো বারবার করি, সেই কাজগুলোও স্মৃতি হয়ে যায়। আর জমা হয় হিপ্পোক্যাম্পাসের সেই লংটার্ম মেমোরির ঘরে। হাত-পা নেড়ে করতে হয় বলে এ ধরনের স্মৃতিকে বলা হয় মাসল মেমোরি বা পেশিগত স্মৃতি। মাসল মেমোরিটা কিন্তু আর সব মেমোরির মতো নয়। ওরা একটু অন্য রকম। কেন? সেও বলছি।
অন্য সব মেমোরি চোখ-কান খোলা রেখে কাজ করে। যেমন—তুমি রাস্তা পার হবে। পা বাড়ালে। অমনি সামনে এক গাড়ি এলো। তোমার মেমোরি তোমাকে জানিয়ে দিল, গাড়ি তোমাকে চাপা দিতে পারে। গাড়িটা ক্ষতিকর। তাই পা সামলে নিলে। দেখলে তো, মেমোরিটা কেমন সচেতন! তাই এ ধরনের মেমোরিকে বলা হয় ডিক্লেয়ারেটিভ মেমোরি বা সচেতন স্মৃতি।
অন্যদিকে মাসল মেমোরি হচ্ছে ‘প্রসিডিউরাল মেমোরি’। প্রসিডিউরাল মেমোরির আরেক নাম ‘অবচেতন স্মৃতি’। প্রসিডিউরাল মেমোরি সব সময় একটি ধাঁচে কাজ করতে থাকে। এমনকি তুমি কাজটি করার ইচ্ছা করোনি হয়তো, তবু দেখবে করে ফেলেছ। কারণ মাসল মেমোরি সচেতন নয়। সে আগপাছ ভেবে কাজ করতে পারে না। যে পরিবেশে যে কাজটি শেখে, সেই পরিবেশ পেলেই সে কাজটি শুরু করে দেয়। আর যেমনি যেমনি কাজটি শিখেছে, ঠিক তেমনি তেমনি কাজটি করে। যেমন সাঁতার শিখতে হয় পানিতে নেমে। তাই পানিতে ছেড়ে দিলে অবচেতনেই তুমি সাঁতরাতে শুরু করো! তাহলে বুঝতেই পারলে, মাসল মেমোরি অন্য মেমোরিগুলো থেকে একদম আলাদা। তাই তারা মগজে থেকে যায় বছরের পর বছর ধরে। এমনকি বুড়ো বয়স পর্যন্ত।
আদতে আমরা সাঁতারটা শিখি ছোট্টবেলায়। তখন আমাদের মগজ থাকে খুব তাজা। একদম খালিও থাকে। তাই যত বেশি আমরা হাত-পা নেড়ে একটি কাজ শিখি, সে কাজটি সিল মারার মতোই জমা হয় মাসল মেমোরিতে। বড় হতে হতে আমাদের মাসল মেমোরি ভরে যায় নানা রকম কাজে। তাই নতুন কাজ শিখতে বেশ বেগ পেতে হয়। সেটি মনে করতে সময়ও লাগে।
Publisher & Editor