চোখের ছানি বিষয়ে আমরা অনেকেই অবগত। চোখে এক ধরনের স্বচ্ছ লেন্স আছে, যা প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি। যা চশমার গ্লাস বা লেন্সের মতোই আমাদের দেখতে সাহায্য করে। এটি এক ধরনের উভতল বা কনভেক্স লেন্স। চোখের অভ্যন্তরভাগে সামনের অংশে এই লেন্সটির অবস্থান। কোনো কারণে যদি প্রাকৃতিক এই লেন্সটি তার স্বচ্ছতা হারিয়ে ফেলে অর্থাৎ ঘোলা হয়ে যায় তবে আলোকরশ্মি চোখের ভেতরে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে দেখার কাজটি বিঘ্নিত হয়। লেন্সের এই ঘোলা অবস্থাটিকে বলা হয় ক্যাটারেক্ট বা ছানি। চোখের ছানি বলতে লেন্স অস্বচ্ছ হওয়াকেই বুঝায়। আর সঠিক সময়ে ছানি অস্ত্রোপচার না করলে চোখে বেশ কয়েকটি ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
ছানি অস্ত্রোপচারে দেরি করার বেশ কয়েকটি ত্রুটি রয়েছে, জেনে নিন-
>> ছানি অস্ত্রোপচারে দেরি করা ছানি গ্রেডের অগ্রগতির দিকে পরিচালিত করে। ছানির ধরন এবং গ্রেডের ওপর নির্ভর করে, দেরি করে ছানি অস্ত্রোপচার একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে পরিণত হতে পারে।
>> হার্ড লেন্স ইমালসিফাই করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এটি আশেপাশের কাঠামোর ক্ষতি করতে পারে।
>> ক্ষত পুড়ে যাওয়া, লেন্সের ক্যাপসুলার ব্যাগ ফেটে যাওয়া, অপারেশনের সময় বেড়ে যাওয়া, লেন্সের সমর্থন নষ্ট হওয়া ইত্যাদির মতো অন্যান্য ইন্ট্রা-অপারেটিভ সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
>> এছাড়াও, চোখের উচ্চ চাপ, কর্নিয়ার শোথ ইত্যাদির মতো কিছু পোস্টঅপারেটিভ জটিলতা ঘটতে পারে।
>> ছানির অগ্রগতি চোখের ভিতরে প্রদাহ এবং উচ্চ চাপ হতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে পরিচালিত না হলে উভয়ই দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ অপরিবর্তনীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
>> যাদের ছানি রয়েছে তাদের ম্লান আলোতে দৃষ্টিশক্তি কম থাকে। এ কারণে রাতে ওয়াশরুম ব্যবহার করার সময় তারা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। বয়স্কদের মধ্যে ৬০ শতাংশ ফ্র্যাকচার ছানি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত দুর্বল দৃষ্টির কারণেই হয়।
ছানি অস্ত্রোপচারের পর রোগীর যা করণীয়:
বয়স বাড়লে, আঘাত লাগলে, চোখে অন্য কোনো প্রদাহ হলে, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ হলে, দীর্ঘদিন চোখে কোনো ড্রপ দিলে চোখে ছানি পড়তে পারে। ছানি তিন ধরনের হয় Ñ নিউক্লিয়ার, কর্টিক্যাল ও সাব ক্যাপসুলার।
ছানির চিকিৎসা : অপারেশনই ছানির একমাত্র চিকিৎসা। ওষুধ বা চশমা দিয়ে ছানির চিকিৎসা সম্ভব নয়। ছানি অপারেশনে চোখের ভেতরের অস্বচ্ছ লেন্স বের করে সেই স্থানে কৃত্রিম লেন্স বসাতে হয়। বিভিন্নভাবে ছানির অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। যেমন- ফ্যাকো সার্জারি (সেলাইবিহীন ছানি অস্ত্রোপচার) ও প্রচলিত ছানি অস্ত্রোপচার (সেলাইযুক্ত)।
ফ্যাকো সার্জারি : চোখে কৃত্রিম লেন্স বসাতে ছানি গলিয়ে বের করে আনা হয়। এ অস্ত্রোপচার ফ্যাকো সার্জারি চিকিৎসাবিজ্ঞানের আশীর্বাদ। তুলনামূলক বিচার করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। ফ্যাকো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লেন্স গলিয়ে বের করা হয়। এ পদ্ধতিতে রক্তক্ষরণ হয় না। আড়াই থেকে তিন মিলিমিটার ছিদ্র করা হয়। সেলাইয়ের প্রয়োজন হয় না। অস্ত্রোপচারের সঙ্গে সঙ্গে রোগী বাড়ি যেতে পারেন। এ অস্ত্রোপচারের পর সাতদিন চোখে পানি না ব্যবহার করলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ফ্যাকো সার্জারি : সেলাইবিহীন। দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব। ৩-৪ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা যায় (গাড়ি চালানো, লেখাপড়া করা, টিভি দেখা, অফিস করা)। দীর্ঘদিন ভর্তি থাকতে হয় না। অপারেশনের পর বাসায় চলে যাওয়া যায়। যেসব রোগী সহযোগিতা করতে পারেন, তাদের শুধু ড্রপের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হয়। ইনজেকশন না দিলে এবং ডাক্তার উপযুক্ত মনে করলেঅস্ত্রোপচারের পর চোখে ব্যান্ডেজ না দিয়ে বাড়ি পাঠাতে পারেন। জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা নেই। অস্ত্রোপচারের পরপর স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন।
অপারেশন করতে করণীয় : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অস্ত্রোপচার করার উপদেশ দিলে অস্ত্রোপচারের আগে ৩-৪টি পরীক্ষা করতে হবে। যেমন- ডায়াবেটিসের জন্য ব্লাড সুগার, ইসিজি, চোখে যে লেন্স বসানো হবে তার মাপের জন্য বায়োমেট্রিক, চোখের প্রেসার পরীক্ষা ও করোনাকালীন করোনার টেস্ট করাতে হবে।
ফোল্ডেবল লেন্স : এটি লেন্সের সর্বশেষ সংস্করণ। এটি নরম, ভাঁজ করা যায়। এ লেন্সের ক্ষেত্রে মাত্র ২.৫-৩ মিমি. কাটতে হয়। এ ক্ষেত্রে অপারেশনের পর লেন্সের পেছনে অস্বচ্ছ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। চোখ দ্রুত সেরে ওঠে।
সাধারণ লেন্স : সাধারণ প্রচলিত লেন্স শক্ত, ভাঁজ করা যায় না। এটির ক্ষেত্রে ৫.৫ মিলিমিটার কাটতে হয়। অপারেশনের পর লেন্স অস্বচ্ছ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ইনজেকশনের মাধ্যমে অবশ করতে হয়। স্বল্পপরিমাণ রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে।
অপারেশনের পর করণীয় : অস্ত্রোপচারের পর ছাড়পত্রে লিখিত ওষুধ নিয়মমাফিক ব্যবহার করতে হবে। সাতদিন চোখে সরাসরি পানি লাগানো যাবে না। অস্ত্রোপচারের পরের দিন, সাতদিন পর এবং একমাস পর মোট তিনবার ডাক্তারের কাছে আসতে হবে। এর মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। চোখের যত্ন নিন। চোখ ভালো থাকলে আপনিও ভালো থাকবেন।
Publisher & Editor