পৃথিবীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম ধর্মনির্ভর। এবং সেগুলো মাস্টার শিল্পীদের করা। এ দেশে ধর্মনির্ভর শিল্পকলা কমই হয়েছে। সেখানে আমাদের মাস্টার শিল্পীর হাতে হয়েছে নগণ্য।
এ দেশে গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে অনেক ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম হয়েছে। সেটা এ দেশে একাডেমিক শিল্পীরা সব সময় এড়িয়ে চলেছেন। বুদ্ধকে শিল্পে উপস্থাপনে কাজ করে যাচ্ছেন ওরিয়েন্টাল পেইন্টিং স্টাডি গ্রুপ। সে লক্ষ্যেই নানা রকম শিল্পকলার সমন্বয়ে প্রদর্শনী হয়ে গেল রাজধানীর আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ গ্যালারিতে।
তাদের দ্বিতীয় আয়োজনে শিল্পকর্মের মধ্যে ছিল চিত্রকলা, ভাস্কর্য, মৃিশল্প, ওয়াশ, গোয়াশ, টেম্পারা, তালপাতা চিত্র, চা-পাতার রং দিয়ে করা চিত্র, শীতলপাটির চিত্র, খড়ের ভাস্কর্য, সিনেমার ব্যানার পেইন্টিং, রিকশা পেইন্টিং। ‘দুঃখ থেকে মুক্ত : বাংলার বুদ্ধ’ শিরোনামে এই প্রদর্শনীতে ৫০ জন শিল্পীর অর্ধশতাধিক শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে । এই আয়োজনে তারা একাডেমিক শিল্পীদের সঙ্গে যুক্ত করেছেন নানা রকম লোকশিল্পীকে। গত বছর চমক ছিল শীতলপাটির বুননে বুদ্ধ।
এবার যুক্ত হয়েছে সিনেমার ব্যানার পেইন্টিং এবং রিকশা পেইন্টিংয়ে গৌতম বুদ্ধ। এককথায় বলা চলে শিল্পের নানা মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধকে উপস্থাপন করা হয়েছে। আয়োজকরা মনে করেন—গৌতম বুদ্ধের জীবনের আদর্শ, দর্শন ও মহিমা শিল্পকর্মে তুলে ধরার মাধ্যমে বিশ্বের শান্তি, সংহতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় এ প্রদর্শনী ভূমিকা রাখবে। বুদ্ধের জীবনপরিক্রমাকে মূলত জন্ম, গৃহত্যাগ, বুদ্ধত্বলাভ ও মহাপরিনির্বাণ—এ চার অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। চারটি অধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোকে নিবিড়ভাবে অনুধাবন করে শিল্পীরা তাঁদের চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্যের মাধ্যমে তা ফুটিয়ে তুলেছেন এ প্রদর্শনীতে।
এই আয়োজনে এ বছর আরো যুক্ত হয়েছে বুদ্ধকে নিয়ে নাট্যকলা। ‘নির্বাণ’ নাটকের দুটি প্রদর্শনী হয়। লতা সমাদ্দারের নির্দেশনায় নাটকটিতে অভিনয় করেছেন তেজগাঁও কলেজের শিল্পী এবং প্রাচ্য-চিত্রকলা অনুশীলন সংঘের সদস্যরা। সংগীত ও আলোচনাও বাদ যায়নি এই আয়োজন থেকে।
প্রদর্শনীর শিল্পকর্মের বেশির ভাগই ছিল চিত্রকর্ম। এখানেই আসল মজাটা। ছবিগুলো প্রায় সবই প্রাচ্য ধারায় জলধোয়া পদ্ধতিতে আঁকা। ওরিয়েন্টাল বা প্রাচ্য ধারাই আমাদের নিজস্ব। এ বিষয়ে চারুকলাগুলোতে আলাদা বিভাগ থাকলেও পাস করার পর এ নিয়ে কাজ হচ্ছে কম। অথচ পটুয়া কামরুল হাসান, শিল্পী আমিনুল ইসলাম, শিল্পী হাশেম খানের মতো শিল্পীরা প্রাচ্য ধারায় কাজ করেছেন। পরে এসে এই ধারায় কাজ করে সুনাম কুড়িয়েছেন শিল্পী আবদুস সাত্তার ও নাসরীন বেগম। এরপর বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে করলেও সুশান্ত অধিকারীর কাজই চোখে পড়ে। প্রাচ্য ধারার এই দুরবস্থা কাটানোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক শিল্পী মলয় বালার প্রচেষ্টায় গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে এই আয়োজন। প্রদর্শনীটি কিউরেট করেছেন মিখাইল আই ইসলাম।
Publisher & Editor