নিউইয়র্কে ২৬ সেপ্টেম্বর, ম্যানহাটান মারিয়ট মার্কুইসে অনুষ্ঠিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও এক্সপো ২০২৫ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ মেলা আয়োজন করে বাংলাদেশ ইউএসএ চেম্বার অফ কমার্স। অনুষ্ঠানটিতে বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী নেতারা, নীতিনির্ধারক এবং বিভিন্ন চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেথি ল্যাফলার, ট্রাম্প প্রশাসনের ইউএস স্মল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় বা বিদেশি যেকোনো কোম্পানির জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসার উন্নয়নের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা সহজে সংযোগ স্থাপন এবং নতুন বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন।
সারা দিন চলা সেমিনারগুলোতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিক ব্যবহার ও উদ্ভাবন, বৈশ্বিক ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সংযোগ, এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতকে উন্নয়ন ও সমর্থন করার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন।
উল্লেখযোগ্য দিক হলো, প্রথমবারের মতো ইউরোপের NRB চেম্বার অব কমার্স এবং ব্যবসায়ী নেতারা — যুক্তরাজ্য, ইতালি, পোল্যান্ড ও কানাডা থেকে — অংশগ্রহণ করেন। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে সহযোগিতার জন্য একটি জোট গঠন করার প্রস্তাব রাখেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নেতাদের পাশাপাশি BGMEA-এর শক্তিশালী সমর্থনও এই উদ্যোগকে সফল করেছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্য আমেরিকান জাতিগত চেম্বার অব কমার্স, যেমন কোরিয়ান, দক্ষিণ আমেরিকান, ইতালিয়ান ও নেপাল চেম্বারও অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করে। দক্ষিণ আমেরিকান চেম্বারের সভাপতি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আমন্ত্রণ জানান।
গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্স একটি নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করবে, যাতে বাংলাদেশি গার্মেন্টস ও অন্যান্য পণ্যের ব্র্যান্ডগুলো তাদের ৩৫০০০ সদস্যসহ অন্যান্যদের কাছে পরিচিত করা যায়। এ উদ্যোগ বাংলাদেশের পণ্য এবং সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরবে। ফ্যাশন শিল্পেও বাংলাদেশি প্রভাব প্রদর্শনের জন্য বহু ফ্যাশন ডিজাইনার গ্রুপ ডিনারে অংশ নেন। খ্যাতনামা ফ্যাশন ডিজাইনার গ্লোরিয়া স্টার কিন-এর নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বাংলাদেশি ফ্যাশন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং এর বাইরেও পরিচিত করা হবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও ব্যবসায়িক স্বার্থ উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশি আমেরিকান অন্যান্য ব্যবসায়িক সংস্থা ও চেম্বারও সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে আলোচ্য বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো রেমিট্যান্স নীতি। বর্তমানে এটি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও চ্যারিটি সংস্থা, স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ইত্যাদিতে রেমিট্যান্স পাঠাতে বাধা সৃষ্টি করছে। ডলার রিজার্ভ কম থাকা অবস্থায় এবং বহির্বিশ্ব থেকে অর্থের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে এই নীতির পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি।
দীর্ঘদিনের দুর্নীতি এবং এনআরবির কল্যাণ ও বিনিয়োগে “এক স্টপ সার্ভিস” দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এখনও বাস্তবে রূপায়িত হয়নি। বাস্তবায়ন শীঘ্রই প্রয়োজন, যাতে NRB-এর বাংলাদেশে অংশগ্রহণে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তারা খুব কম অংশগ্রহণ করেন, যার ফলে তারা মূল সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন। একটি সুস্পষ্ট নীতি প্রণয়ন করে সরকারকে NRB গ্রুপ ও নেতাদের সঙ্গে পরিচিত করা এবং শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলা এখন অপরিহার্য। কিছু ক্ষেত্রে স্বার্থপর মানুষ ভুল তথ্য ছড়ায়। তবে এসব সমস্যা সহজেই সমাধানযোগ্য যদি সবাই মিলেমিশে অংশগ্রহণের সুযোগ গ্রহণ করে এবং একে অপরের সহযোগিতার মাধ্যমে সর্বজনের উপকার নিশ্চিত করা হয়। এই আন্তর্জাতিক মেলা প্রমাণ করলো, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা কেবল শ্রমশক্তি নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে সৃজনশীল নেতৃত্ব প্রদর্শনেও সক্ষম। প্রফেসর ডাঃ জিয়াউদ্দিন আহমেদ, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ইউএসএ চেম্বার অফ কমার্স।
Publisher & Editor