সকাল থেকেই আকাশটা মেঘলা। বাতাসে ভেজা মাটির ঘ্রাণ। খালপারের একটা ছোট্ট বাড়িতে থাকে মায়া। আট বছর বয়স।
দারুণ কৌতূহলী। আজ সে বারান্দায় বসে মজা করে স্কুল ছুটির আনন্দে গল্পের বই পড়ছিল।
হঠাৎ টুপ...টুপ...টাপ!
এক ফোঁটা, দুই ফোঁটা, তারপর টুপটাপ করে নেমে এলো বৃষ্টির নৃত্য! দৌড়ে উঠানে চলে গেল মায়া। ভেজা পায়ে দিল কাদার মধ্যে লাফ।
তার চোখে-মুখে সে কী আনন্দের ঝিলিক! তখন তার পেছনে এসে দাঁড়াল ছোট ভাই রিফাত।
রিফাত বলল, মায়াপু, এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছ কেন? আম্মু রাগ করবে তো!
মায়া তার দাপাদাপি না থামিয়ে হেসে বলল, আরে এটা তো বর্ষার বৃষ্টি! আম্মুর রাগ দেখলে তো বুঝতে পারব না যে কেমন সুন্দর গন্ধ আসে মাটি থেকে!
আর কথা নয়। দুই ভাই-বোন মিলে বৃষ্টিখেলায় মেতে ওঠে। এরই মধ্যে হঠাৎ একটা অদ্ভুত শব্দ শুনতে পায় ওরা— ঝুন ঝুন ঝুন...
ওদের বাড়ির দক্ষিণ দিকে থাকা বেলগাছের নিচে হঠাৎ আলো জ্বলে উঠল! তার মাঝখান থেকে বেরিয়ে এলো এক ছোট্ট পরি।
তার গায়ের জামা পাতার মতো সবুজ। চোখে জলের মতো টলটলে আলো।
পরি এসেই বলল, আমি বৃষ্টিলতা। বর্ষার দিনে বেরিয়ে আসি শুধু তাদের কাছে, যারা শুধু বৃষ্টিকে ভালোবাসে।
মায়া অবাক হয়ে বলল, তুমি পরি? সত্যি? আমি ভিজে গেছি, কিন্তু জানো খুব মজা লাগছে!
রিফাত জিজ্ঞেস করল, তুমি কোথা থেকে এলে?
পরি বলল, আমি দূর আকাশের ওপার থেকে এসেছি।
সঙ্গে তোমাদের জন্য বেলপাতার জাদু নিয়ে এসেছি। চলো, তোমাদের দেখাই আমার ছাতার জাদু।
একটু থেমে পরি আবার বলল, তোমাদের এখন একটামাত্র কাজ—তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা আমাকে দিতে হবে, তাহলে আমি জাদু দেখাব।
রিফাত একটু ভয় পেয়ে বলল, আমার প্রিয় বলতে একটা সুন্দর গাড়ি আছে। সেটা দেব?
মায়া একটু চুপ করে থেকে নিজের প্রিয় নীল ছাতাটা এগিয়ে দিল পরির দিকে।
বলল, এই নাও, আমার সবচেয়ে প্রিয় এই ছাতা। তুমি কথা দাও, এটা ভালো কিছুতে ব্যবহার করবে।
পরি চমৎকার করে হাসল। তারপর বলল, তুমি খুব সাহসী আর বুদ্ধিমতী। এখন আমার কাজ দেখতে থাকো!
মায়ার দেওয়া সেই ছাতাটা ঘুরিয়ে ধরে পরি বলল—
বৃষ্টি ছাতা জাগো,
ফাঁকি দিয়ো নাগো!
পরির কথা শেষ হতে না হতেই হঠাৎ করে ছাতাটা বড় হতে হতে বিশাল বেলপাতার ছাতায় রূপ নিল। সেই ছাতার নিচে দাঁড়ালেই শোনা যায় অদ্ভুত মন-কেমন-করা সুর।
ব্যাঙের গান, বৃষ্টির গান, বাতাসের গান আর ঝিঁঝি পোকার একটানা বাজনা!
পরি বলল, এই ছাতার নিচে দাঁড়ালে শোনা যাবে প্রকৃতির গোপন সব গান। শোনা যাবে কারা হাসে, কারা কাঁদে, বর্ষায় কোথা থেকে নেমে আসে
রূপকথার ঝরনা।
রিফাত আর মায়া মুগ্ধ হয়ে তাকাল পরির দিকে। তারপর ছাতার নিচে গিয়ে দাঁড়াল।
আর অমনি ছাতার ছায়ায় কল্পনার জগৎ খুলে গেল আচমকা—কাদার ভেতরে থাকা একটা ব্যাঙ হঠাৎ কথা বলে উঠল!
—ধুপধাপ বৃষ্টি পড়ে, কে গান শোনে এমন করে?
আর পেছনে এক ঝিঁঝি পোকা ফিসফিস করে বলল, এই বৃষ্টি আমাদের জন্য উৎসব! বৃষ্টি মানেই নতুন সৃষ্টি। হুররে!
একসময় বৃষ্টি থেমে গেল। আকাশে হেসে উঠল রংধনু।
পরি বলল, আজ এতটুকুই। এই ছাতা আজ থেকে তোমাদের, রেখে দাও। তবে মনে রেখো, এটা শুধু তাদের জন্য, যারা বর্ষায় আনন্দ খোঁজে, ভয় পায় না।
মায়া বলল, তুমি আবার আসবে তো পরি?
পরি বলল, আসব। যখনই বর্ষা আসবে, আর কেউ হাসবে বৃষ্টির ফোঁটা দেখে—তখনই ফিরে আসব আমি।
এই বলে পরি বেলগাছের পাতার সঙ্গে মিশে গেল।
ছোট্ট দুই ভাই-বোন দাঁড়িয়ে রইল বেলপাতার ছাতা হাতে। চোখে তাদের রংধনুর রং ঝিলমিল করছে। আর মনে জাদুর গল্পের কলকলানি।
Publisher & Editor