‘কানের গোড়ায় এভাবে প্যানপ্যান করবি না তো। তোর আব্বুকে ফোন দে।’
আম্মুর ধমক খেয়ে সুইটির মন খারাপ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আজকে আম্মুর শাসানি গায়ে মাখল না। আজ তার আপেল খেতে ইচ্ছা করছে।
সকালে আপেল সম্পর্কে একটি প্রবাদ পড়েছে সে, An Apple a Day, Keeps the Doctor Away অধুি (দিনে একটি আপেল খান, রোগমুক্ত জীবন পান)।
সুইটি তার আম্মুকে তাগাদা দিতে থাকে আপেল এনে দিতে। কিন্তু তার আম্মু একের পর এক বাসার কাজ করেই যাচ্ছে। ব্যস্ততা কাটছেই না।
এদিকে আব্বুকে ফোন করে বলতেও লজ্জা লাগছে তার।
একটু পর সুইটির মাথায় একটি বুদ্ধি খেলে গেল। ছোট বোন বিউটি স্কুলে কুইজ প্রতিযোগিতায় গতকাল ফার্স্ট হয়েছিল। আব্বু-আম্মু তো বেজায় খুশি এতে।
একই স্কুলে সুইটি ক্লাস ফাইভে আর বিউটি থ্রিতে পড়ে।
সুইটি তার আব্বুকে ফোন করল।
‘হ্যালো, আব্বু।’
‘হ্যাঁ, সুইটি বলো।’
‘বিউটি তো গতকাল স্কুলে কুইজ প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হয়েছিল।
’
‘হুমম, তো ফোন করেছ কেন?’
‘তোমার মেয়ে তো আপেল খেতে চাচ্ছে। তুমি অফিস থেকে ফেরার সময় আপেল নিয়ে আসবে।’
‘আচ্ছা আম্মু, অবশ্যই নিয়ে আসব।’
সন্ধ্যায় আব্বু ফিরল বাসায়। বিউটির হাতে আপেলের প্যাকেটটি দিয়ে বলল, ‘এই নাও। পানিতে ভালো করে ধুয়ে তারপর খাও।’
বিউটি তো এসবের কিছুই জানে না। সে হাঁ করে তাকিয়ে আছে আব্বুর দিকে।
বিউটি প্যাকেটটি হাতে নিয়ে বলল, ‘কী আছে ভেতরে, আব্বু?’
‘কেন? তুমি না আপেল খেতে চেয়েছিলে? আপেল নিয়ে এলাম।’
‘কখন বললাম তোমাকে? আমার আপেল পছন্দ না। তুমি আঙুর নিয়ে আসতে।’
বিউটির কথা শুনে আব্বু তো অবাক হয়ে গেল। সুইটি কি তাহলে মিথ্যা বলেছে?
‘সুইটি! সুইটিইইইই!’ আব্বু ডাকতে শুরু করল।
পাশের রুম থেকে ছুটে এলো সুইটি।
‘তুমি আমার সঙ্গে মিথ্যা বললে কেন?’
সুইটি বলল, ‘কী মিথ্যা বলেছি, আব্বু?’
‘তোমার মেয়ে তো আপেল খেতে চাচ্ছে। তুমি বলোনি এটা ফোনে?’
‘হ্যাঁ, বলেছি। এখানে মিথ্যার কী পেলে তুমি?’
‘এখন বিউটি তো আপেল পছন্দ করে না বলছে।’
সুইটি হেসে বলল, ‘আসলে আব্বু আমার আপেল খেতে ইচ্ছা করছিল। তাই আনতে বলেছিলাম তোমাকে।’
‘বিউটির নাম করে মিথ্যা বললে কেন?’
‘বিউটির নাম তো বলিনি। বলেছি, তোমার মেয়ে আপেল খেতে চাচ্ছে। আমি কি তোমার মেয়ে না?’
আব্বু হো হো করে হেসে উঠল, ‘ওরে দুষ্টু মেয়ে আমার।’
পরে আম্মুও পুরো ঘটনা শুনে হাসল খুব।
এদিকে আম্মু আপেল কাটতে গিয়ে দেখল, বেশির ভাগ আপেলই ওপরে চকচকে করছে, অথচ ভেতরে পচা। ভারি রাগ হলো সুইটির। এই আপেল খেলে রোগমুক্ত তো থাকা যাবেই না, বরং রোগ আরো জেঁকে ধরবে। পরে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। দু-একটি আপেল যা একটু খাওয়া গেল। বাকি সব ফেলে দিতে হয়েছে।
পরদিন সুইটি-বিউটি স্কুল থেকে ফিরছিল। ওদের আম্মুও ছিল সঙ্গে। ফেরার পথে রাস্তায় একটি ফলের দোকান দেখে সুইটি বলল, ‘আম্মু, আমাকে টাকা দাও তো। আমি আপেল কিনে নিয়ে আসি।’
‘তুই একা যাবি?’
‘হ্যাঁ, আমার মাথায় একটি বুদ্ধি এসেছে।’
‘কী বুদ্ধি শুনি?’
‘তুমি দেখো না কী করি। টাকা দাও তাড়াতাড়ি।’
টাকা নিয়ে সুইটি চলে গেল আপেল কিনতে। একটু দূরেই ওদের আম্মু আর বিউটি দাঁড়িয়ে আছে। সব কিছু ওরা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।
সুইটি বলছে দোকানদারকে, ‘আংকেল, আমার কিছু পচা আপেল লাগবে।’
দোকানদার হেসে বলল, ‘পচা আপেল দিয়া কী করবা তুমি?’
‘আমার বিড়ালকে খাওয়াব। পচা আপেল ওর খুব পছন্দের।’
‘বিলাই আপেল খায়? এইডা কী কইলা তুমি?’ দোকানদার বিস্ময়ে চোখ বড় করে তাকাল।
সুইটি বলল, ‘আংকেল, আমার বিড়ালটা সব ফলই খেতে পারে। ভালো ফল খেতে পারে না। আপনি বেছে বেছে পচা আপেলগুলো দিন। আমি টাকা না হয় একটু বেশি দিলাম।’
টাকা বেশি দেওয়ার কথা শুনে দোকানদার তো মহাখুশি। সে বেছে বেছে পচা আপেল দুই কেজি মেপে দিল একটি প্যাকেটে। সুইটি তখন প্যাকেটটি দোকানের এক পাশে রেখে বলল, ‘এখন মানুষের খাওয়ার জন্য এক কেজি আপেল দিন।’
দোকানদার এবারও খুশিমনে এক কেজি আপেল মেপে দিল।
সুইটি তখন বলল, ‘আপনি মানুষের খাবার আর বিড়ালের খাবার একসঙ্গে রেখেছেন। এটা অন্যায় না?’
দোকানদার লোকটি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল যেন। ছোট্ট একটি মেয়ে তাকে শাসাচ্ছে। কী সাংঘাতিক ব্যাপার! সে বলল, ‘তুমিই তো কইলা পচাগুলা বাইছা দিতে।’
‘আপনি তো পচাগুলো মানুষের কাছেই বিক্রি করছেন। বিড়াল আপেল খায় না।’
তারপর সুইটি এক কেজি আপেলের দাম মিটিয়ে চলে এলো। তার আম্মু আর বিউটি একটু দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল সব। মেয়ের বুদ্ধি দেখে আম্মু তো অবাক। তারপর ওরা দেখল, সেই দোকানদার পচা আপেলের প্যাকেটটি পাশের ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য পচা ফলও বেছে বেছে ফেলতে লাগল।
Publisher & Editor